ভোট মিটে গিয়েছে। কিন্তু হিংসা বন্ধ হচ্ছে না।
বিভিন্ন দলের সমর্থকদের মধ্যে মারপিট তো আছেই। গ্রামে চড়াও হয়ে বেধড়ক লাঠি চালানো, এমনকী ছ’বছরের একটি মেয়েকে সেচখালে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধেই।
ভোটগণনা মেটার পরে মঙ্গলবার বিকেল থেকেই উত্তরে দিনাজপুর থেকে দক্ষিণে ক্যানিং-বাসন্তী পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় গোলমাল বাধে। কিন্তু সন্ত্রাসের জন্য পরিচিত বর্ধমানের কেতুগ্রামে কাঠগড়ায় খোদ পুলিশই। মঙ্গলবার কেতুগ্রাম ২ ব্লকের বিল্লেশ্বর পঞ্চায়েতে জিতে বিজয় উৎসব করছিল সিপিএম। যদিও সেই ছুতোয় আসলে তাদের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা করা হচ্ছিল বলে অভিযোগ তৃণমূলের। সিপিএমের অভিযোগ, বিকেলে পুলিশ গ্রামে এসে মারধর শুরু করে। এক সিপিএম সমর্থককে ধরতে না পেরে তাঁর ছ’বছরের মেয়েকে খালে ফেলে দেওয়া হয়। ১১ জনকে কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে, এর মধ্যে চার জনের বয়স ছয় থেকে ১০ বছরের মধ্যে। যদিও পুলিশের দাবি, মারধরের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। |
বসিরহাট হাসপাতালে গুলিতে জখম সিপিএম কর্মী রফিকুল। ছবি: নির্মল বসু |
বুধবারেই উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন সিপিএমের এক পঞ্চায়েত প্রার্থীর ভাই ও দাদা। এক জন বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে ও অন্য জন কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি। এক তৃণমূল কর্মীকে পুলিশ ধরেছে। তবে তৃণমূলের অভিযোগ, মঙ্গলবার সিপিএমের করা বোমাবাজি থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত। এ দিন দুপুরেই মালদহের মানিকচকে চৌকি মিরদাদাপুর এলাকার খানপুরে এক তৃণমূল কর্মীর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। তিনি হাসপাতালে ভর্তি।
গোটা রাজ্যে যে দু’একটি জায়গায় এ বার নির্দল হিসেবে দাঁড়ানো বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থীরা ভাল ফল করেছেন, তার একটি নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের বয়াল ১ পঞ্চায়েত। নির্দলেরাই বোর্ড গড়তে চলছেন। বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে এক পরাজিত তৃণমূল প্রার্থীকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠেছে জয়ী নির্দল প্রার্থীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরেরই খেজুরির কেঁউচিয়া গ্রামে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী মহিলা তৃণমূল প্রার্থী ও এক মহিলা কর্মীর বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে দলের অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। দু’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে আমরাবেড়িয়ায় কংগ্রেস প্রার্থী ও কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের একটি অফিসও ভাঙচুর হয়। ক্যানিংয়েরই গোলাবাড়ি এবং বাসন্তীর খেড়িয়া ও কলতলায় সিপিএম এবং আরএসপি কর্মীদের বাড়িতে হামলারও অভিযোগ রয়েছে। হুগলির বেগমপুরেও এক সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে আগুন দেওয়াতেও তারা অভিযুক্ত। সিপিএমের বিরুদ্ধেও এক তৃণমূল প্রার্থীর বাড়িতে ভাঙচুর ও পোলট্রিতে আগুন ধরানোর অভিযোগ আছে। কাপাসহাড়িয়া এলাকার তিসা গ্রামে আক্রান্ত হন তৃণমূল প্রার্থী।
ওই রাতেই মালদহের ঠাকুরদাস মণ্ডলপাড়ায় বোমায় চার তৃণমূল কর্মী জখম হন। অভিযোগ সিপিএমের বিরুদ্ধে। কোচবিহারে বক্সিরহাট থানার রামপুরে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে ১০ জন জখম হন। উত্তর দিনাজপুরে করণদিঘি ও ইসলামপুরে সংঘর্ষ হয়। করণদিঘিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কংগ্রেস, আগডিমঠিতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই সিপিএম কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বর্ধমানের কালনা-১ ব্লকের নান্দাই পঞ্চায়েতের পারদুপসা গ্রামেও কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘর্ষে কয়েক জন আহত হয়েছেন। |