পাহাড় সামলাতে কড়া ধমক: চিঠি মনমোহনকে
উস্কানির অভিযোগে তুলোধোনা দিল্লিকে
দার্জিলিঙে নতুন করে অশান্তির আবহ তৈরির জন্য কংগ্রেস তথা কেন্দ্রের উস্কানিকেই দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিকে তাঁর হুঁশিয়ারি, “পাহাড় নিয়ে রাজনীতি করবেন না। মনে রাখবেন, পাহাড়ে শান্তি বজার রাখা আপনাদেরও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। রাজনীতিটা রাজনীতি, সরকারটা সরকার।” প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে একটি চিঠি দিয়ে এ নিয়ে অভিযোগও জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, মোর্চা নেতাদের কেউ ডেকে পাঠায়নি। উল্টে তাঁদের রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করতে এবং উন্নয়নে অংশ নিতেই বলা হয়েছে।
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভাঙার পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন মমতা। দার্জিলিঙে কেন্দ্র উস্কানি দিচ্ছে এই অভিযোগও এ দিন নতুন নয়। চার দিন আগে গত শনিবার মমতা ফেসবুকে এক বার্তায় বলেছিলেন, “আমি বুঝতে পারছি না কেন কেন্দ্র পক্ষপাতমূলক ব্যবহার করছে, কেন তারা জিটিএ-র ৩-৪ জনকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছে! এই ডাক এসেছে দলের শীর্ষ স্তর থেকে।”
বুধবার মুম্বইয়ে রাজ্যের শিল্প সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে মহাকরণে দাঁড়িয়েও একই সুরে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করলেন, “আমার কাছে খবর আছে, ক’দিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েক জন মন্ত্রী গুরুঙ্গের দলের কয়েক জন নেতাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাঁদের বলা হয়, তোমরা আন্দোলন শুরু করো। দার্জিলিঙকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (ইউনিয়ন টেরিটরি) মর্যাদা দেওয়া হবে।” মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “হাতের মোয়া নাকি? ললিপপ? রাজ্যকে ডিঙিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া যায় নাকি?”
লোকসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক স্বার্থেই যে তেলেঙ্গানা প্রসঙ্গ টেনে এনেছে কংগ্রেস, সেই অভিযোগও করেছেন মমতা। বলেছেন, “পাঁচ বছর আগেই এটা ওদের প্রতিশ্রুতি ছিল। তার পরেও ফেলে রেখেছিল। এখন ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। ওখানকার কয়েকটা আসন পেতে কংগ্রেস এ সব করছে।” পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে কেন্দ্রেরও যে দায়িত্ব কম নয়, তা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, “দেশটাকে ভেঙে ফেলা খুব সহজ। গড়াটাই কঠিন। দায়িত্ববান লোকেরা যদি দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করেন, তা দুর্ভাগ্যজনক।”
কংগ্রেসকে দুষেই অবশ্য থেমে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি লিখেছেন এ দিনই। পাহাড়ে শান্তি নষ্ট করতে তাঁর দলের কিছু নেতা যে কার্যত প্ররোচনা দিচ্ছেন, সেটাই লিখেছেন তিনি। কেন তাঁর মন্ত্রীরা এ কাজ করছেন, তুলেছেন সেই প্রশ্নও। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দের বিরুদ্ধেও।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে সহমত হয়েছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁরও বক্তব্য, দার্জিলিঙকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার প্রস্তাব মেনে নেওয়া যায় না। তিনি এ-ও মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকার তেলেঙ্গানার কথা ঘোষণা করে রাজ্যে অশান্তি উস্কে দিয়েছে।
কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মানতে চাননি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানিয়েছেন, তেলেঙ্গানা পৃথক বিষয় ছিল। এ ছাড়া এই মুহূর্তে অন্য কোনও রাজ্যের দাবি নিয়ে কেন্দ্র চিন্তাভাবনা করছে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠনের কোনও পরিকল্পনাও নেই এখন।
কংগ্রেসের মুখপাত্র অজয় মাকেন জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কয়েক জন সদস্য দিল্লিতে এসেছিলেন ঠিকই, তবে তাঁদের কেউ ডাকেনি। ওঁরা নিজেরাই এসেছিলেন। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। দেখা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও। সিডব্লিউসি-র সদস্যদের হাতে একটি স্মারকলিপিও দেন তাঁরা। কী ছিল সেই আবেদনে? কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, মোর্চার সদস্যরা চেয়েছিলেন সিডব্লিউসি-র বৈঠকে তেলেঙ্গানার সঙ্গে যেন গোর্খাল্যান্ডের বিষয়টিও তোলা হয়। অজয় মাকেন জানান, মঙ্গলবারের বৈঠকে কিন্তু তেলেঙ্গানা ছাড়া আর কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, সুশীলকুমার শিন্দে মোর্চা সদস্যদের বরং বুঝিয়েছেন যাতে তাঁরা আর আন্দোলন না করেন। জিটিএ-তে থেকে উন্নয়নের শরিক হন। শিন্দে তাঁদের রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করতেই বলেন। একই সঙ্গে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের যে প্রস্তাবের কথা মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাকে উড়িয়ে দিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র মিম আফজল বলেছেন, “এ সব অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।”
রাজ্যের কংগ্রেস নেতারাও মমতার অভিযোগের বিরোধিতা করেছেন। মানস ভুঁইয়া বলেছেন, “কংগ্রেস পাহাড় ভাগ চায় না। প্রাধানমন্ত্রী থাকাকালীন রাজীব গাঁধী পাহাড়ে শান্তি এনেছিলেন। যাঁরা অভিযোগ তুলছেন, তাঁদের ইতিহাসটা পড়তে হবে।” কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা উস্কানি দিচ্ছেন বলে মমতা যে অভিযোগ করেছেন, তা প্রত্যাহারের দাবি জানান প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.