টাকার দাম স্থিতিশীল করতে এবং বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যায়ের ঘাটতি মেটাতে এ বার অনাবাসী ভারতীয়দের কাছে হাত পাতছে মনমোহন-সরকার। অনাবাসীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণপত্র ছাড়তে চাইছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
বিদেশি মুদ্রা টানতে এত দিন বিদেশের বাজারে সরকারি ঋণপত্র ছেড়ে ডলার টানার কথা ভাবছিল কেন্দ্র। কিন্তু তাতে বাধ সেধেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও। তাই অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য ঋণপত্র ছেড়ে ডলার আনার কথা ভাবতে হচ্ছে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে।
সেই সঙ্গে বিদেশি লগ্নির দরজা আরও খুলে দেওয়া, কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া এবং বিদেশি পেনশন তহবিলগুলিকে ভারতে বিনিয়োগ করানোর জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছে অর্থ মন্ত্রক। ভারতীয় সংস্থাগুলির বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার শর্তও আরও সুবিধেজনক করার চেষ্টা হচ্ছে।
উদ্দেশ্য একটাই, যে কোনও উপায়ে ডলার নিয়ে এসে বিদেশি মুদ্রায় আয়-ব্যয়ের ঘাটতি সামাল দেওয়া। কারণ রফতানি থেকে আয় হওয়া ডলার দিয়ে আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশি মুদ্রার চাহিদা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আজ পি চিদম্বরম মানছেন, “এক বছর আগে প্রধান মাথাব্যথার কারণ ছিল রাজকোষ ঘাটতি এবং মূল্যবৃদ্ধি। কিন্তু এখন প্রধান উদ্বেগের কারণ এই বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি।” বিরোধী দলের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও গত সেপ্টেম্বরে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ বিদেশি লগ্নির অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তার পরেও ওই ক্ষেত্রে কোনও বিনিয়োগ আসেনি। এখন তাই ওই ক্ষেত্রে ৫১ শতাংশের মধ্যে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত কোনও শর্ত ছাড়াই বিদেশি লগ্নির অনুমতি দেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্র।
অনাবাসীদের থেকে লগ্নি টানতে এর আগে ১৯৯৮ সালে ‘রিসারজেন্ট ইন্ডিয়া বন্ড’ এবং ২০০০ সালে ‘ইন্ডিয়া মিলেনিয়াম বন্ড’ ছাড়া হয়েছিল। সুুব্বারাও যেমন সরকারি ঋণপত্র নিয়ে আপত্তি তুলেছেন, তেমনই অনাবাসীদের জন্য ঋণপত্র নিয়ে এ বার আপত্তি তুলে রেখেছে স্টেট ব্যাঙ্ক। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরীর যুক্তি, আমেরিকায় গিয়ে যদি বলা হয়, শুধু অনাবাসী ভারতীয়দের থেকেই ঋণ নেওয়া হবে, বাকিদের থেকে নয়, তাতে কোনও লাভ হয় না। তবে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছে, এ ছাড়া আর উপায় নেই। |