দেড় মাসের মধ্যেই দু’বার অপহরণের চেষ্টা। তবে বিফল। এক বার প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেক বার জঙ্গলের মধ্যে এক ঝুপড়ি থেকে খোঁজ মিলেছে ষষ্ঠ শ্রেণির সৌনাথের। আসানসোলের কল্যাণপুর সরকারি আবাসন এলাকার বাসিন্দা সৌনাথের বাবা আসানসোল দক্ষিণ থানায় এ নিয়ে অভিযোগও দায়ের করেছেন। তবে এখনও ঘটনার কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
ঘটনা’দুটির পর থেকেই আতঙ্কে সৌনাথের পরিবারের লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা বাড়িতেও একাধিকবার ফোন করে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছে। পুলিশ কল রেকর্ড থেকে ফোন নম্বরগুলি উদ্ধারও করেছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে ওই ছাত্র ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কিছু বিষয় নিয়ে ধন্দ রয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌনাথ আসানসোলের একটি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। ১৭ জুন তাকে অপহরণ করার প্রথম চেষ্টা হয়। জানা গিয়েছে, সে দিন বিকেলে সাঁতার শিখে বাড়ি ফেরার সময়ে তাকে জনাকয়েক দুষ্কৃতী অহরণ করে। সৌনাথ জানায়, ওরা মুখে রুমাল চেপে ধরেছিল। |
এই ঘর থেকেই উদ্ধার। —নিজস্ব চিত্র। |
তারপরে কিছু মনে নেই। ওই দিনই রাত ৯টা নাগাদ আসানসোল স্টেশনের ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে অর্ধচেতন অবস্থায় সৌনাথকে উদ্ধার করে তার বাড়ির লোকজন। তার বাবা বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় পুলিশকে জানান, বাড়ি ফেরার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় পরিচিতদের নিয়ে ছেলেকে খুঁজতে বেরোন তিনি। তখনই পরিচিত একজন ফোনে খবর দেন, প্ল্যাটফর্মে পড়ে রয়েছে তাঁর ছেলে।
ওই ঘটনার প্রায় এক মাস পরে দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে। পরিবার সূত্রে পুলিশ জেনেছে, ২৮ জুলাই দুপুর দেড়টা নাগাদ বাড়ির পিছনে উঠোনে বসে জুতো পালিশ করছিল সৌনাথ। বেশ কিছুক্ষণ ছেলের সাড়া না পেয়ে মা মৌসুমী মুখোপাধ্যায় উঠোনে গিয়ে দেখেন ছেলে নেই। জুতোগুলো এ দিন সেদিক ছড়ানো। তিনি তখনই কর্মস্থলে থাকা বিশ্বনাথবাবুকে ফোন করে সবটা জানান। কাজ থেকে ফিরেই পরিচিতদের নিয়ে ছেলেকে খুঁজতে শুরু করেন বিশ্বনাথবাবু। বেশ কিছুক্ষণ পরে কাছেই গাড়ুই নদী লাগোয়া জঙ্গল ঘেরা একটা ফাঁকা জায়গায় ঝুপড়ি থেকে ছেলেকে উদ্ধার করেন তাঁরা। বিশ্বনাথবাবু জানান, এ বারও ছেলেকে জনা কয়েক দুষ্কৃতী মুখে রুমাল চেপে ধরে। তারপরে আর কিছু মনে নেই সৌনাথের।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই ছাত্রের বাড়ির ফোনে একাধিকবার অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা হয়েছে। সে সব ফোন নম্বর খুঁজছে পুলিশ। আসানসোলের সিআই অলোক মিত্র জানান, অভিযোগ দায়ের হতেই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে এখনও কোনও কিনারা করা যায়নি। তবে কিছু বিষয় নিয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথমে ভাবা হয়েছিল, ওই ছাত্রের বাবা বিশ্বনাথবাবুর ব্যবসায়ীক কোনও সূত্র থেকে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু বিশ্বনাথবাবু জানান, তিনি অত্যন্ত ক্ষুদ্র ব্যবসা করেন। যা থেকে শত্রুতা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এছাড়া মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দেওয়ার মতো আর্থিক সবলতাও তাঁর নেই। বিশ্বনাথবাবু বলেন, “এর পরেও আমার ছেলের সঙ্গে বারবার এই ঘটনা কেন ঘটছে তা নিয়ে চিন্তায় আছি।” সৌনাথের বাড়ির লোকেরা জানায়, আসানসোলের একটি অভিজাত ইংরাজী মাধ্যম স্কুলে পড়ার সুবাদে প্রতিবেশীরাও সৌনাথকে ভাল চোখেই দেখেন। কারও সঙ্গে ঝগড়া বা মনোমালিন্যও নেই তাঁদের।
পরপর দু’বার এমন ঘটনা ঘটায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সৌনাথও। একা কোথাও বেরোতেও ভয় পাচ্ছে সে। পরিবারের লোকজনেরা তাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিচ্ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, কল রেকর্ড থেকে পাওয়া ফোন নম্বরগুলি ধরে সূত্র বের করার চেষ্টা চলছে। খুব দ্রুত সমাধান সূত্র বেরোবে। |