ফের কাঠগড়ায় পাড়ুই থানা
জিডি-গাফিলতি, অনুব্রতর বিরুদ্ধে মামলাই হল না
কই জেলা। একই ধরনের অভিযোগ। যাঁদের বিরুদ্ধে নালিশ হয়েছে, তাঁরা দু’জনই শাসকদলের নেতা। অথচ মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করা গেলেও অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে গেল না। সে জন্য বিচারক পুলিশকে ভর্ৎসনা করে জানিয়ে দিলেন, তাদের এই নিষ্ক্রিয়তা হাল্কা ভাবে নেওয়া যায় না। বিচারকের ধমক খাওয়ার পরে নতুন করে জেনারেল ডায়েরির সারমর্ম জমা দেয় পুলিশ। আজ, শুক্রবার তা নিয়ে ফের শুনানি। সকলেরই প্রশ্ন, এর পরে কি তৃণমূলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বিচার শুরু হবে?
বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ জমা দেওয়ার কথা পাড়ুই থানার। বৃহস্পতিবার সিউড়ির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) রাজেশ চক্রবর্তীর এজলাসে সেই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রক্রিয়াগত গাফিলতির জন্য মামলা করার অনুমতি দেননি সিজেএম। অন্য দিকে, অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা শুরুর অনুমতি সিজেএম দিলেন সাঁইথিয়া থানাকে।
উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য অনুব্রত ও মনিরুলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বীরভূমের জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অনুব্রত বোলপুরের কসবা অঞ্চলের এক সভায় দলীয় কর্মীদের বলেছিলেন, নির্দল প্রার্থীদের বাড়িতে চড়াও হোন। বলেছিলেন, পুলিশ নির্দলদের সমর্থন করলে তাদের উপরে বোমা মারুন। এর পরপরই মনিরুল সাঁইথিয়ার এক জনসভায় বলেন, জেলা কংগ্রেস নেতা সব্যসাচী (বাপি) দত্তের মুন্ডু আদায় করতে তাঁর এক মিনিটও লাগবে না। এ দিন এই দুই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই সিজেএমের এজলাসে মামলা শুরুর পৃথক আবেদন করে পাড়ুই ও সাঁইথিয়া থানা।

কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে
জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন হৃদয় ঘোষ। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, যাত্রা একই হলে কী হবে, ফল ভিন্ন। অনুব্রতর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীকে হুমকি দেওয়া এবং জনমানসে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে মামলা শুরুর যে আবেদন করা হয়, সেখানে ‘জেনারেল ডায়েরি’ বা জিডি-র সারমর্ম ছিল না। অথচ যে সব ধারায় মামলা রুজু করার আবেদন হয়েছে, সেই ১৮৯ এবং ৫০৫ (১) (এ) ধারাই জামিন অযোগ্য। তা সত্ত্বেও কেন এই গাফিলতি, তাই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারক। তাঁর মতে, এটি পুলিশের দিক থেকে নিষ্ক্রিয়তা, যা হাল্কা ভাবে নেওয়া উচিত নয়। বীরভূমের পুলিশ সুপারকে বিষয়টি দেখে জিডি-র সারমর্ম যত দ্রুত সম্ভব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন সিজেএম। এর পরে এ দিনই পুলিশ তড়িঘড়ি তা জমা দেয়।
পরে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) কুন্তল চট্টোপাধ্যায় জানান, আজ শুক্রবার ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি হবে। কুন্তলবাবুর ক্ষোভ, “আমি পুলিশকে আগেই সতর্ক করেছিলাম, এ ভাবে আবেদন করবেন না। তবু পাড়ুই থানা প্রয়োজনীয় নথি পাঠায়নি।” নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি বীরভূমের পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা। তিনি বলেন, “আদালত যে নথি চেয়েছিল, তা দিয়ে কিছু ক্ষণের মধ্যেই আবেদন জানানো হয়। আজ, শুক্রবার নতুন করে শুনানি হবে।” তবে, পাড়ুই থানার ওসি প্রয়োজনীয় নথি ছাড়াই ওই আবেদন করায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে এসপি জানিয়েছেন। পাড়ুই থানার ওসি সম্পদ মুখোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি।
মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে পেশ করা সাঁইথিয়া থানার আবেদন কিন্তু আদালত গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে জিডি-র সারমর্ম দিয়েই পুলিশ আবেদন করেছিল। বিচারক ওই বিধায়কের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে ভয় ধরানোর মতো মন্তব্য করার অভিযোগে মামলা শুরুর নির্দেশ দেন। মনিরুলের সভার সিডি জমা দিয়ে সাঁইথিয়া থানায় এফআইআর করেছিলেন কংগ্রেস নেতা বাপি দত্ত। পুলিশ অবশ্য সেই অভিযোগের ভিত্তিতে এখনও অবধি ব্যবস্থা নেয়নি। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায় জানিয়েছেন, মনিরুল ইসলামের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বীরভূমের জেলাশাসক কমিশনকে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। নির্বাচনের পরে সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।
পাড়ুই থানার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে কসবা অঞ্চলের নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বৃদ্ধ বাবা সাগরচন্দ্র ঘোষের খুনের ঘটনার পরই। নিহতের পরিবারকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়ে নির্দোষ লোকেদের নামে এফআইআর করানোর অভিযোগ উঠেছে ওই থানার
পুলিশকর্মীদের একাংশের নামে। এ দিনের ঘটনায় তাই অভিযোগ, অনুব্রত মণ্ডল বলেই পুলিশের এই ‘ত্রুটি’। হৃদয়বাবুর অভিযোগ, “আগেও বলেছি, অনুব্রতর নির্দেশ মেনেই পুলিশ কাজ করছে।” কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি এ দিন হৃদয়বাবুকে আশ্বাস দেন, প্রয়োজনে তাঁদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে যাবেন। তৃণমূল নেতা মুকুল রায় অবশ্য বলেছেন, “অনুব্রতর বিরুদ্ধে কমিশন চিঠি দেয়নি। তাদের উচিত ছিল, অনুব্রত ও দলকে নোটিস পাঠানো।” দলীয় স্তরে তাঁরা তো ব্যবস্থা নিতে পারতেন? মুকুলবাবুর বক্তব্য, “যদি দেখি বীরভূমের মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে, তা হলে কিছু করার নেই। না হলে ভাবতে হবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.