বিষয়ে বৈচিত্র্য নেই, বঞ্চিত হাওড়ার কলেজ পড়ুয়ারা
ছোট থেকেই সাংবাদিকতা পড়ার ইচ্ছে ছিল হাওড়ার প্রত্যন্ত মুন্সিরহাট গ্রামের নিবেদিতা মিস্ত্রির। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের পর হাওড়ার বিভিন্ন কলেজে ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে নিবেদিতা দেখে, জেলার কোনও কলেজেই পড়ানো হয় না সাংবাদিকতা। কলকাতার কলেজে গিয়ে পড়া তার পক্ষে অসম্ভব। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই হাওড়া গার্লস কলেজে ইংরেজি অনার্স পড়ছে নিবেদিতা।
জেলার কলেজে সাংবাদিকতা না থাকায় একই সমস্যায় পড়েছিলেন জগৎবল্লভপুরের শুভাশিস রায়। পরে কলকাতার একটি বেসরকারি কলেজে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়েছেন তিনি। আর সেটা করতে গিয়ে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি। শুভাশিসের কথায়, “প্রায় দিনই ক্লাস শুরু হত সকাল সাড়ে সাতটায়। বাড়ি থেকে বেরোতে হতো ভোর সাড়ে পাঁচটায়।”
হাওড়া জেলা, বিশেষ করে গ্রামীণ হাওড়ার অলিগলিতে খোঁজ করলে এমন অনেক নিবেদিতা-শুভাশিসেরই খোঁজ পাওয়া যাবে। যাঁরা নিজের জেলার কলেজে পছন্দের বিষয় পড়ার সুযোগ পাননি। শুধু সাংবাদিকতা নয়, অর্থনীতি, কম্পিউটার বিজ্ঞানের মতো অনেক বিষয়ই হাওড়ার হাতে গোনা কয়েকটি কলেজে পড়ানো হয়। হাওড়ার কলেজ মানচিত্রে চোখ রাখলে দেখা যাবে, গ্রামীন হাওড়ায় অর্থনীতি, কম্পিউটার বিজ্ঞান মাত্র দু’-একটি কলেজে পড়ানো হয়। তবে মাইক্রোবায়োলজি-সহ শারীরবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, কম্পিউটার সায়েন্সের মতো বিষয় পড়ার সুযোগ রয়েছে হাওড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিজয়কৃষ্ণ গার্লস কলেজে। নরসিংহ দত্ত কলেজে রয়েছে জীববিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, অর্থনীতি। কিন্তু চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ভূগোল অনার্স এই কলেজে শুরু করা যায়নি। ভূগোল অনার্স পড়ানো হয়, এমন কলেজও হাতেগোনা। যেখানে রয়েছে, সেখানে আবার আসন সংখ্যা সীমিত। যেমন, ডোমজুড় আজাদ হিন্দ ফৌজ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে ভূগোল অনার্সে মাত্র ২৬টি আসন রয়েছে। ফলে অনেক ছাত্রছাত্রীই ইচ্ছে থাকলেও ভূগোল নিয়ে পড়তে পারে না।
বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, অঙ্ক, রসায়ন, পদার্থবিদ্যার মতো গতানুগতিক বিষয়ের বাইরে কেন যেতে পারছে না হাওড়ার কলেজগুলি?
জগৎবল্লভপুর শোভারানি মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ কল্যাণ মণ্ডল জানালেন, “গ্রামের ছেলেমেয়েরা অনেক নতুন বিষয় পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা অর্থ ও পরিকাঠামো। নতুন বিষয় পড়ানোর খরচ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি হিসেবে আদায় করা যায়। কিন্তু গ্রামের ছেলেমেয়েদের আর্থিক অবস্থা সেরকম নয়।” দেখা যাচ্ছে যে সব বিষয় পড়ার চাহিদা রয়েছে, অনেক কলেজেই তা পড়ানোর পরিকাঠামো নেই। আন্দুল প্রভু জগদ্বন্ধু কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা সারদা মণ্ডল জানালেন, শারীরবিদ্যা নিয়ে অনেকেই খোঁজখবর করছে। তবে শারীরবিদ্যার মতো বিষয় পড়ানোর পরিকাঠামো কলেজে নেই। অধ্যক্ষের কথায়, “নতুন অনুদান পেলে বিষয়টি চালু করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” জগদ্বন্ধু কলেজেরই ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ সাঁতরার কথায়, “ছাত্রছাত্রীরা যখন পছন্দের বিষয় না পেয়ে ফিরে যান, খুব খারাপ লাগে। কলেজে নতুন বিষয় চালুর জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি।”
নতুন বিষয় পড়ানোর প্রক্রিয়াটা কী?
জেলার কলেজ শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নতুন বিষয় পড়ানোর প্রস্তাব প্রথমে ‘গভর্নিং বডি’র সভায় পাশ করিয়ে পাঠানো হয় উচ্চশিক্ষা সংসদে। সেখানে সেই যদি সেই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে হয়, তাহলে তা পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়ে তৈরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি কলেজে আসে পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে। আর এই পরিকাঠামোতেই আটকে যায় অনেক কলেজ। এরপর আছে, শিক্ষকের বেতনের সমস্যা। নতুন বিষয়ের জন্য নিয়োগ করা শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার কথা কলেজ তহবিল থেকেই। শিক্ষা দফতরের এক কর্তার আপেক্ষ, “শিক্ষাক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে এটা সত্যি।”

নতুনে না
জেলার প্রায় প্রতিটি কলেজেই এখন কোনও না কোনও রাজনৈতিক নেতার দখলে। পড়াশুনার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নতুন বিষয় আনার মতো গঠনমূলক ভাবনা এখন ভাবাই মুশকিল!
দিলীপ বারিক
প্রবল আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে চলছে নতুন সরকার। তার ভিতরেও গ্রামের কলেজগুলিতে পরিকাঠামোর উন্নতির চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষকের সমস্যা মেটানোরও চেষ্টা করা হচ্ছে।
অশোক শতপতি
জেলার কলেজগুলিতে নতুন বিষয়ের অভাব রয়েছে। আমরা ছাত্র সংগঠনগতভাবে হাওড়া জেলায় একটি আইন কলেজ ও একটি মেডিক্যাল কলেজের জন্য আন্দোলন শুরু করেছি।
অনুপম ঘোষ
জেলার অনেক কলেজেই তো একটা কী দুটো ঘর নিয়ে একটা গোটা বিভাগ চলে। নতুন বিষয়গুলি গ্রামের কলেজে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সমস্যা তো রয়েইছে, এছাড়াও রয়েছে প্রচারের সমস্যা। অণুজীববিদ্যা, শারীরবিদ্যার মতো
বিষয়গুলি সর্ম্পকে স্কুলস্তরে ধারণা দেওয়া দেওয়া দরকার।
বিশ্বজিৎ ঘোষ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.