তদন্ত বারাসতে
পুরনো ও চোরাই গাড়ি পাচ্ছে নয়া রেজিস্ট্রেশন
দালতের নির্দেশে ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে কয়েক বছর আগে। অথচ, বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনা আঞ্চলিক পরিবহণ কার্যালয় (আরটিও) থেকে এমন পুরনো গাড়িও রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নতুন নম্বর পেয়ে যাচ্ছে! জামা বদলের মতো একই ভাবে চোরাই গাড়িও রেজিস্ট্রেশন করিয়ে পথে নামছে। সৌজন্যে দালাল-চক্র।
এই অভিযোগ করেছেন স্বয়ং উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল। তাঁর কাছ থেকে এই অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। এর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবহণ দফতরের যুগ্ম সচিব অবনীন্দ্র সিংহকে। তাঁর নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্তকারী দল বৃহস্পতিবার আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে সেখানকার অফিসার ও কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন। পরিবহণ-কর্তাদের বক্তব্য, কলকাতার বেলতলা ও আলিপুর এবং হাওড়ার আঞ্চলিক অফিসেও এমন ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এখনও পর্যন্ত এই তিন কেন্দ্র নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।
জেলাশাসকের অভিযোগ পেয়ে বিভিন্ন সূত্র থেকে রাজ্যের পরিবহণ কর্তারা প্রাথমিক ভাবে যা জানতে পেরেছেন, তাতে চোখ কপালে উঠেছে তাঁদের! তাঁরা দেখেছেন, পুরোটাই চলছে দালাল-চক্রের মারফত। কী ভাবে চলছে এই দুর্নীতি-রাজ?
আরটিও-র একটি সূত্রের খবর, পুরো কাজটাই হচ্ছে জাল নথির মাধ্যমে। কী ভাবে? ধরা যাক, পশ্চিমবঙ্গের একটি গাড়ি ১৫ বছর অতিক্রম করেছে। নিয়ম মানলে তার আর চলার কথা নয়। কিন্তু দালালেরা অন্য কোনও রাজ্যের ভুয়ো নম্বর, সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পরিবহণ দফতরের জাল ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ তৈরি করে তা জমা দিচ্ছে আরটিও-তে। সঙ্গে আবেদন, গাড়িটি পশ্চিমবঙ্গে চালানোর জন্য নতুন রেজিস্ট্রেশন ও নম্বর প্রয়োজন। কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ওই জাল-তথ্যের ভিত্তিতে নতুন রেজিস্ট্রেশন ও নম্বর পাচ্ছে ওই গাড়িটি। আরটিও-র এক কর্মীর কথায়, “আমাদের রাজ্যের গাড়ি অন্য রাজ্যের জাল তথ্য দেখিয়ে আবার আমাদের রাজ্যেরই নতুন রেজিস্ট্রেশন ও নম্বর পেয়ে যাচ্ছে।”
একই ভাবে চুরি করা গাড়িও নতুন রেজিস্ট্রেশন ও নম্বর নিয়ে রাস্তায় নামছে। ওই কর্মী জানান, গাড়ি চুরি হলে সাধারণত থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। ফলে ওই নম্বরে গাড়ি বার করায় ঝুঁকি থেকে যায়। তা এড়াতেই কোনও ভিন্ রাজ্যের জাল নথি পেশ করে নতুন নম্বর নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পরিবহণ দফতর জানতে পেরেছে, এই জাল পদ্ধতিতে তেলের ট্যাঙ্কার, দশ চাকার বড় ট্রাকেরও রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাচ্ছে।
তদন্ত শেষ না হলেও রাজ্যের পরিবহণ কর্তারা মোটামুটি নিশ্চিত, “ওই আরটিও-র এক শ্রেণির অফিসার-কর্মী এই কাজের সঙ্গে যুক্ত না-থাকলে এই জাল-চক্র চালানো সম্ভব নয়।” তাঁদের দাবি, “কোনও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করাতে হলে নথিপত্র খতিয়ে দেখতে হয়। তখনই গাড়ির যাবতীয় ইতিহাস জানা যায়। গাড়িটিকে স্বচক্ষে (ইনস্পেকশন) দেখতেও হয়। আর এই দুই পদ্ধতি মানলে এ ভাবে জাল নথিতে কাজ চালানো সম্ভব নয়।
জেলাশাসকের অভিযোগ পেয়ে পরিবহণ দফতরের যুগ্ম সচিব দ্রুত তদন্ত শুরু করেছেন। তাঁর সঙ্গে কমিটিতে রয়েছেন রাজ্যের অর্থ ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের এক জন করে আধিকারিক। বারাসত আরটিও-অফিস সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে ভুয়ো তথ্য দাখিল করে প্রায় ছ’হাজার গাড়ির রেজিস্ট্রেশন পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে কতগুলি চোরাই, কতগুলি পুরনো গাড়ি সেই ছবিটা অবশ্য পরিষ্কার নয়। তদন্তকারী দল বারাসত গিয়ে আরটিও অফিসের কম্পিউটার থেকে ওই সব গাড়ির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে।
এই ঘটনা সামনে আসার পরে অন্য আরটিও-র কর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। এক কর্তার কথায়, “এমন ঘটনা যে কোনও আরটিও-তে ঘটতে পারে। ঘটছে না, এমন কথাও হলফ করে বলা যায় না। কিন্তু কোনও অভিযোগ না পেলে কিছু করার নেই। তবে আমাদের নজরদারি বাড়াতে হবে।” পরিবহণ দফতরের কর্তাদের ধারণা, বারাসতের ঘটনায় বড়সড় দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসতে পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.