আর্থিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ
খয়রাতির খরচ নিয়ে প্রশ্ন সিএজি’রও
ত দিন সরব ছিলেন বিরোধীরা। এ বার আঙুল তুলল কেন্দ্রীয় হিসাবরক্ষক কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-ও। ক্ষমতায় এসে গত দু’বছরে মেলা-খেলা-উৎসবের নামে দেদার খরচের অভিযোগ উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে। রাজকোষের অর্থে সংখ্যালঘু ছাত্রদের মেধাবৃত্তি, ইমাম ভাতা, বিভিন্ন পেশার কৃতীদের পেনশন প্রদান কিংবা সাইকেল-ফুটবল বিলি ঘিরে যেমন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তেমন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে রাজস্বের টাকা বরাদ্দেরও সমালোচনা হয়েছে কম নয়। এমন নানাবিধ খরচ সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে এ বার রাজ্যের অর্থ দফতরকে হুঁশিয়ার করে দিল সিএজি-র রাজ্য শাখা, অর্থাৎ অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (এজি)-এর অফিস।
শুধু তা-ই নয়, কোন কোন খরচে তাদের আপত্তি, তার তালিকাও এজি তৈরি করেছে। তাদের তরফে রাজ্যের প্রিন্সিপ্যাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল (পিএজি) অর্থ দফতরকে চিঠি দিয়ে বলেছেন, রাজকোষের টাকা নিয়ে এই সব ‘খয়রাতি-কারবারে’ অবিলম্বে লাগাম টানতে হবে, মেনে চলতে হবে আর্থিক নিয়ম-শৃঙ্খলা। করদাতাদের টাকা কী ভাবে খরচ হচ্ছে, তার উপরে সিএজি’র তীক্ষ্ন নজর রয়েছে বলেও রাজ্যকে সতর্ক করেছেন পিএজি।
টুজি স্পেকট্রাম-কোলগেট-রেলগেটের মতো বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের জেরে কেন্দ্রের ইউপিএ-২ সরকার ইতিমধ্যেই সিএজি’র তোপের মুখে। এখন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে তাদের এ হেন ‘প্রতিকূল পর্যবেক্ষণ’ অর্থ দফতরকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। শৃঙ্খলাভঙ্গ নিয়ে এজি’র হুঁশিয়ারিতে মহাকরণের অর্থ-আধিকারিকদের একাংশ অশনি সঙ্কেতও দেখছেন। একান্তে তাঁদের কারও কারও আক্ষেপ, “সবই বুঝছি। তবু কিছু করা যাচ্ছে না। কারণ, এই ধরনের কাজে টাকা খরচের আদেশ আসছে প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে। আমাদের হাত-পা বাঁধা।”
বিতর্কের কিছু ব্যয়
• সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের মেধাবৃত্তি

• ফুটবল ও সাইকেল বিলি
• মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ • সংখ্যালঘু, তফসিলির নানা প্রকল্প
• পেশাদারদের পেনশন তহবিল • স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তা
• পণ্যপ্রবেশ কর খরচের নানা খাত • সমাজ সচেতনতায় খরচ
রাজ্য বাজেট পেশ হওয়ার পরে সরকারের আয়-ব্যয়, হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিয়ে পিএজি-র সঙ্গে রাজ্যের অর্থ-কর্তাদের আলোচনার প্রথা এ বছরই চালু হয়েছে। পোশাকি ভাষায় যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘এন্ট্রি কনফারেন্স।’ স্থির হয়েছে, বিগত অর্থবর্ষে সরকারি তহবিল খরচে গরমিল নজরে পড়লে কনফারেন্সে পিএজি তা সরকারি প্রতিনিধিদের গোচরে আনবেন। চলতি বাজেটেও অস্বচ্ছতা থাকলে, তা নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। এবং গত ২১ জুন আয়োজিত সেই প্রথম ‘এন্ট্রি কনফারেন্সে’ পিএজি কার্যত অর্থ দফতরকে চার্জশিট ধরিয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রে মন্তব্য করা হয়েছে। কী রকম?
মহাকরণের খবর: সে দিন পিএজি-র অফিস অর্থ-অফিসারদের ডেকে জানিয়ে দিয়েছে, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে সরকারি খরচের বহর বেড়েছে বহু গুণ। দু’বছরই নানাবিধ নতুন খরচের খাতা (সাব হেড/হেড অফ অ্যাকাউন্টস) খোলা হলেও বহু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আর্থিক শৃঙ্খলার ধার ধারেনি রাজ্য। অর্থ দফতরকে পিএজি এ-ও জানিয়েছেন, ভারতীয় সংবিধানের ১৫০ ধারা অনুযায়ী, সরকার খরচের নতুন খাতা খুলতে চাইলে এজি-র পরামর্শ ও অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। অথচ পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনেক ক্ষেত্রে তা মানছে না বলে পিএজি’র অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে তথ্য সহকারে পিএজি জানিয়েছেন, গত অর্থবর্ষে (২০১২-১৩) সরকারের এমন নতুন ১১টি খরচ-খাতের সন্ধান মিলেছে, যেগুলো খোলা হয়েছে এজি-র পরামর্শ বা অনুমোদন ছাড়া। এ ক্ষেত্রে অন্তত ১৭৮ কোটি টাকা সরকার ব্যয় করেছে, যার অধিকাংশ দান-খয়রাতিতে। পিএজি’র সাফ কথা, দেরি হলেও এখন সেগুলোর অনুমোদন নিতে হবে। তাঁরা যাচাই করে দেখবেন, ওই খরচের আদৌ যৌক্তিকতা আছে কি না। চলতি অর্থবর্ষের (২০১৩-১৪) বাজেট-প্রস্তাব খুঁটিয়ে দেখে এজি’র অফিস জানিয়েছে, রাজ্য এ বার ৯১টি নতুন খরচের খাতা খুললেও এজি-র আগাম অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অন্তত ২০১৫ কোটি টাকার সেই ব্যয়-বরাদ্দেরও সিংহভাগ নির্ধারিত উপভোক্তাদের মধ্যে নানা বিলি-বণ্টন খাতে।
এই পর্যবেক্ষণের প্রেক্ষাপটে পিএজি স্টিফেন হাংরে প্রশ্ন তুলেছেন এন্ট্রি কনফারেন্সে। তাঁর বিশ্বাস, খরচের যে সব নতুন ক্ষেত্র সরকার তৈরি করেছে, তার পিছনে নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। “তা হলে এজি-কে এড়িয়ে যাওয়ার যুক্তি কী?” বৈঠকে অর্থ-কর্তাদের কাছে জানতে চান স্টিফেন। এমন সব ক্ষেত্রে এজি-কে এড়িয়ে যাওয়াটা আর্থিক শৃঙ্খলাভঙ্গেরই সামিল বলে তিনি দাবি করেন। পিএজি’র বক্তব্য: সরকার জনস্বার্থে খরচ করতেই পারে। কিন্তু রাজকোষের অর্থ ব্যয়ে নজরদারি থাকবে না এমনটা হতে পারে না।
সরকার কি সত্যিই রাজকোষের অর্থ ব্যয়ের নিয়ম-শৃঙ্খলা ভাঙছে?
রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র মন্তব্য করতে চাননি। যদিও তাঁর দফতরের কর্তাদের অনেকে মনে করছেন, পিএজি-র তোলা অভিযোগগুলি যুক্তিযুক্ত। এই মহলের ব্যাখ্যা: মুখ্যমন্ত্রী গত বছর অর্থ দফতরকে আগাম না-জানিয়ে একাধিক প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখতেই ওই সব খাতে তড়িঘড়ি নতুন খরচের খাতা খুলতে হয়েছে। এক অফিসারের কথায়, “তখন পিএজি-র আগাম অনুমোদন নিতে গেলে আমাদেরই প্রশ্নের সামনে পড়তে হতো।” তবে মহাকরণের খবর: পিএজি’র বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে বেকার ভাতা, কন্যাশ্রী বা ক্লাবকে অনুদানের মতো কিছু প্রকল্পে সরকার এখন বাড়তি সতর্ক। কিন্তু ইতিমধ্যে যে সব ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙা হয়েছে?
অর্থ-কর্তারা জানাচ্ছেন, পিএজি এমন সব প্রকল্পের তালিকা হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় নতুন করে এজি-র অনুমোদন নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। “তাতে কপালে যা থাকে, তা-ই হবে!” মন্তব্য এক অফিসারের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.