বিনা লড়াইয়ে আগেই জয়ী তৃণমূল
ভোট ‘শেষ’, রাস্তা সেই তিমিরে
নির্বাচন হবে। এই আশায় বুক বেঁধেছিলেন লাভপুরের স্বর্ণজোলের সমীরণ মণ্ডল, মহুটারের কুশময় হাজরারা। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর অদ্ভুত পরিস্থিতি সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। তাই দফা বৃদ্ধি কিংবা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কচকচানি নিয়ে তাঁদের একটুও মাথা ব্যাথা নেই। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদের সব কটি আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। তাই ভোটের প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে। তালবোনার সিপিএম সমর্থক নিধির সাহা, কিংবা কাশিয়াড়ার তৃণমূল কর্মী সুবীর দাসরা ভেবেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট নতুন করে ভোট প্রক্রিয়ার নির্দেশ দেবে। তই বলে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া কিংবা সরাসরি নির্বাচনে বিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন করে ভোট চাননি তাঁরা। চেয়েছিলেন ভোটের সৌজন্যে গ্রামের রাস্তাটি সংস্কারের প্রশাসনিক উদ্যোগ।
কাদা ঠেলে। শাহআলমপুরে ছবিটি তুলেছেন সোমনাথ মুস্তাফি।
২০০৮ সালের নির্বাচনে লাভপুর ব্লকের জেলা পরিষদের দু’টি আসন দখল করেছিল সিপিএম। পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের মধ্যে সিপিএম ১৬, ফব ৫, তৃণমূল ৫, কংগ্রেস ২, বিজেপি ১, সিপিআই ১টি দখল করে। পঞ্চায়েতের ১৩০টি আসনের মধ্যে সিপিএম ৬৫, তৃণমূল ২৪, ফব ২১, বিজেপি ৭, কংগ্রেস ৬, নির্দল ৩, সিপিআই ২, আরএসপি ১টি পায়। পঞ্চায়েত সমিতি ছিল বামেদের দখলে। ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টি সিপিএম, ১টি ফব, বাকি ৫টি তৃণমূল জোটের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ বার নির্বাচনে জেলা পরিষদে ৩টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৩২টি, পঞ্চায়েতের ১৪৭টি আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা ছাড়া ভোট ময়দানে কেউ নেই। তাই হতাশ হয়ে পড়েছেন লাভপুরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, বুথে ভোটকর্মী এবং পুলিশের যাতায়াত তথা ভোট পরিচালনার স্বার্থে গ্রামাঞ্চলে দীর্ঘদিন অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকা রাস্তা নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি সংস্কারের ব্যবস্থা নেয় প্রশাসন। কিন্তু এ বারে ওই উদ্যোগ সমীক্ষার স্তরে থমকে গিয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে বুথ হয় কুরুন্নাহার পঞ্চায়েতের সাহআলমপুর প্রাথমিক স্কুলে। সেখানে ভোট দেন বাবলাডাঙা, শাহআলমপুর, স্বর্ণজোল গ্রামের বাসিন্দারা। লাভপুর-গুনুটিয়া সড়ক থেকে ওই বুথের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। কিন্তু সংস্কারের অভাবে মোরামের ওই রাস্তা বর্তমানে খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। একই অবস্থা বিপ্রটিকুরী পঞ্চায়েতের বুধুরা, মালিতপুর, কাশিয়াড়া গ্রামেও। মালিতপুর প্রাথমিক স্কুলে ভোট দিতে যেতে হয় মালিতপুর, তালবোনা, মহুটারের ভোটারদের। কাশিয়াড়া স্কুলের বুথ গোপ্তা, কাশিয়াড়া, শেখপাড়ার ভোটারদের জন্য বরাদ্দ। লাভপুর-বোলপুর সড়কের তাঁতবানী বাসস্ট্যান্ড থেকে মালিতপুরের দূরত্বও প্রায় ৩ কিলোমিটার। ওই বাসস্ট্যান্ট থেকে কাশিয়াড়ার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। কাশিয়াড়া যাওয়ার পথে মান্দারি গ্রামে সম্প্রতি কিছুটা ঢালাই রাস্তা হলেও দু’টি গ্রামের যাতায়াতের সিংহভাগ মোরাম রাস্তা সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
অন্য দিকে, ওই একই সড়কের ইন্দাস-বাসস্ট্যান্ড থেকে বুধুরা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। ওই বুথে বুধুরার আট শতাধিক ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। কিন্তু গ্রামের মোরাম রাস্তার অবস্থা এখানেও বেহাল। মালিতপুরের বাসিন্দা, সিপিএম সমর্থক বৈদ্যনাথ মাঝি, কাশিয়াড়ার সুভাষ মণ্ডল, শাহআলমপুরের তৃণমূল সমর্থক বিপ্লব দাসরা বলেন, “ভোটের চাইতে আমাদের কাছে বড় বিষয় গ্রামের রাস্তা। ভেবেছিলাম ভোটের সৌজন্যে প্রশাসন রাস্তা সংস্কার করবে। প্রকল্পও তৈরি হয়েছিল বলে শুনেছিলাম। কিন্তু সব মাঠে মারা গেল!” নির্বাচন বিধি নিষেধ জনিত কারণে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কুরুন্নাহার পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান, সিপিএমের জয়ন্তী দলুই, ফব টিকিটে জেতা বিপ্রটিকুরী পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান পম্পা থান্দার। লাভপুরের বিডিও দেবাশিস চৌধুরী অবশ্য বলেন, “এখানে নির্বাচন ভেসতে যাওয়ায় জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে ওই সব এলাকায় রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব নয়। কিন্তু কেন এত দিন ওই রাস্তা সংস্কার হয়নি দেখছি। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.