সম্পাদকীয় ২...
পুষ্টির কার্যকারণ
জ্ঞানই শক্তি। ইংরাজ পণ্ডিত ফ্রান্সিস বেকনের (১৫৬১-১৬২৬) উদ্ধৃতি হিসাবেই ইহা পরিচিত, যদিও ইহা জোর দিয়া বলা শক্ত যে, এমন একটি কথা তাঁহার আগে কেহ কখনও বলেন নাই। আদি উৎস যাহাই হউক, কথাটির সত্যতা ইতিহাসে বহুলপ্রমাণিত। বিশেষত, সরকারি নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে ‘জ্ঞান’-এর গুরুত্ব অপরিসীম। কোনও বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য না থাকিলে নীতি প্রণয়ন করা কঠিন হয়। তাহা অপেক্ষাও গুরুতর সত্য, যথেষ্ট জ্ঞান না থাকিতেও সরকার অনেক সময় এমন নীতি প্রণয়ন করে, যাহার পরিণাম ক্ষতিকর হইয়া দাঁড়ায়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর গবেষক পূর্ণিমা মেননের একটি বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি জানাইয়াছেন, ভারতের নাগরিকদের পুষ্টির মান কেমন, সেই বিষয়ে যথেষ্ট সাম্প্রতিক তথ্য পাওয়া যায় না। কিছু কিছু অঞ্চলের তথ্য আছে, কিছু কিছু বর্গের তথ্যও পাওয়া যায়, কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান শেষ পাওয়া গিয়াছে ২০০৫ সালে। জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা (এন এফ এইচ এস) তাহার পর আর হয় নাই। পরবর্তী সমীক্ষা এই বছরে বা আগামী বছরে হইবার কথা। আশঙ্কা হয়, এই নির্ঘণ্টটিও নির্বাচনী রাজনীতির প্রবল অভিঘাতে বিলম্বিত হইবে না তো? বাংলাদেশে পুষ্টি বিষয়ক সমীক্ষা হয় তিন বছর অন্তর, ভারতে বুঝি কার্যত দশসালা সমীক্ষাই সাব্যস্ত হইবে!
অথচ এ দেশে দারিদ্রের পরিমাপ করিতে এবং দারিদ্র দূরীকরণের নীতি রচনা করিতে বরাবর পুষ্টির মানকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে। দারিদ্র সীমা বা দারিদ্র রেখা বলিয়া যে আয় তথা ব্যয়ের অঙ্কটি নির্দিষ্ট করা হয়, তাহা মাপিবার প্রধান ভিত্তি হইল ন্যূনতম পুষ্টি। যদি এমন হইত যে, আয় বা ব্যয়ের অঙ্কটি জানা গেলেই অর্জিত পুষ্টির মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাইত, তাহা হইলে গোল ছিল না। কিন্তু বাস্তব অনেক বেশি জটিল। আয়ব্যয় তো দূরস্থান, এমনকী কোনও ব্যক্তির পুষ্টি কেবল তাহার আহারের পরিমাণ হইতেও সম্যক বোঝা যায় না। প্রথমত, আহার্যের সম্ভারটি সুষম কি না, সেই আহার্য হইতে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণগুলি যথাযথ ভাবে মিলিতেছে কি না, তাহা নির্ভর করে তালিকায় কী কী আহার্য থাকিতেছে তাহার উপর। এ দেশে পুষ্টির মাত্রা নির্ধারণে ক্যালরির উপর যত জোর দেওয়া হইয়াছে, অন্য পুষ্টিগুণের উপর, বিশেষত ভিটামিন বা খনিজের মতো বিভিন্ন ধরনের ‘মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট’-এর উপর জোর পড়িয়াছে তাহার তুলনায় অনেক কম। দ্বিতীয়ত, একই আহার্য হইতে বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন মাত্রার পুষ্টি অর্জন করেন, শারীরিক সক্ষমতার উপর, বিশেষ রোগব্যাধির উপর সেই মাত্রার তারতম্য নির্ভরশীল থাকে। এক কথায় বলিলে, খাদ্য পুষ্টির উপকরণ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, কিন্তু একমাত্র উপকরণ নয়। সুতরাং শুধু খাদ্যের হিসাব জ্ঞান হিসাবে যথেষ্ট নয়, সরাসরি পুষ্টি বিষয়ক তথ্য জানা চাই। তাহা না হইলে নীতি দুর্বল হইতে বাধ্য। কারণ, জ্ঞানই শক্তি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.