বদ্রীতে এখনও আটক ৯০০
উত্তরাখণ্ডে মৃতের সংখ্যা নিয়ে মিটছে না বিতর্ক
দিন পনেরো কেটে গেল। কিন্তু বানভাসি উত্তরাখণ্ডে মৃতের সংখ্যা আসলে কত, নিখোঁজই বা কত জন, তা নিয়ে এখনও অথৈ জলে রাজ্য সরকার। গত কালই উত্তরাখণ্ড বিধানসভার স্পিকার গোবিন্দ সিংহ কুঞ্জওয়াল মন্তব্য করেন, এই বিপর্যয়ে মারা গিয়েছেন হাজার দশেকেরও বেশি মানুষ। তবে তাঁর এই মন্তব্যের সমালোচনা করে খোদ মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা অবশ্য বলেছিলেন, এখনও ৩০০০ মানুষ আটকে রয়েছেন। তবে মৃতের সংখ্যা কোনও ভাবেই হাজার ছাড়াবে না। তবে আজ রাজ্য সরকারের এই দাবিকে ধুলোয় মিশিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কতৃর্পক্ষ জানিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডের এই বিপর্যয়ে হাজার দশেকেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। আটক এখনও ১৫০০।
আজ, রবিবার অবশ্য সুর বদলেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় বহুগুণা। এ দিন তিনি বলেন, এই ধরনের বিপর্যয়ের পর ঠিক কত জন মারা গিয়েছেন, তার নির্ভুল পরিসংখ্যান দেওয়াটা খুব কঠিন। বহু মানুষের দেহ নদীর জলে ভেসে গিয়েছে। অনেকের দেহ এখনও চাপা পড়ে রয়েছে পাহাড় থেকে নেমে আসা টন টন পলি-পাথরের নীচে। বিপর্যস্ত এলাকাগুলিকে দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, বিপর্যস্ত এলাকার কোনও বাসিন্দা ৩০ দিনের বেশি নিখোঁজ থাকলেই তাঁর পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ২০০ জনের একটি দল তৈরি করা হয়েছে। তাতে রয়েছেন পুলিশ, স্বাস্থ্য, পশু বিশেষজ্ঞ-সহ নানা দফতরের অফিসারেরা। কেদারনাথ এবং রামবরায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করে সেখান থেকে দেহ উদ্ধার করাই এই দলটির কাজ। মড়কের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই গণচিতার আয়োজন করে কেদারনাথে শেষকৃত্য হয়েছে ৩৪টি দেহ। এখনও নানা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে ৫০-৬০টি দেহ। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেগুলিরও শেষকৃত্য করার চেষ্টা চলছে।
উত্তরাখণ্ডে ভেঙে পড়া বায়ুসেনার কপ্টার চালক উইং কম্যান্ডার ড্যারেল ক্যাস্টিলিনোর
কফিনের পাশে তাঁর স্ত্রী ও কন্যা। মুম্বইয়ে ড্যারেলের শেষকৃত্য হল রবিবার। ছবি: এপি।
এ দিন বদ্রীনাথ থেকে আরও ২০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে রাজ্য সরকার সূত্রে জানানো হয়েছে। এখনও অন্তত ৯০০ জন সেখানে আটকে রয়েছেন। তাঁদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ উদ্ধার করে নামিয়ে নিয়ে আসার আগে পর্যন্ত তাঁদের সুস্থ রাখা। রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় ১০ ডিগ্রিরও নীচে। অথচ মাথার উপর ছাদ বলতে নেই প্রায় কিছুই। ঠিক নেই খাবারেরও। রাজ্য সরকারের দাবি, তাদের নিয়মিত খাবার এবং ওষুধপত্র দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জোর কদমে কাজ শুরু হয়েছে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া গ্রামগুলিতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার। তবে বেশ কিছু রাস্তা ইতিমধ্যেই সারিয়ে ফেলা গিয়েছে। তাই ফের সড়কপথে চালু হয়েছে যোগাযোগ। তাই ট্রাকে করেও পাঠানো হচ্ছে ত্রাণ। কেবলমাত্র হেলিকপ্টারের ভরসায় না থেকে আটকে পড়া বেশ কিছু মানুষজনকে নামিয়ে আসা হচ্ছে হাঁটিয়েই।
এ দিন রাজ্যের মুখ্যসচিব সুভাষ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন ডিজিপি সত্যব্রত বনশল। তার পরে বনশল জানান, “মেঘভাঙা বৃষ্টির পর পাহাড় থেকে নেমে আসা চাঁই চাঁই পাথরের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে বহু এলাকা। সেগুলির নীচে আটকে থাকা দেহগুলি উদ্ধার করাই আমাদের কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।” কংগ্রেসের মুখপাত্র অম্বিকা সোনি এ দিন জানান, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী উত্তরাখণ্ডের উদ্ধার কাজ নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
সহকর্মীদের কাঁধে কফিন। উত্তরাখণ্ডে ভেঙে পড়া বায়ুসেনার
কপ্টার চালক উইং কম্যান্ডার ড্যারেল ক্যাস্টিলিনোর শেষযাত্রা।
রাজ্য সরকারের রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতিতেই এমন বিপর্যয় ঘটেছে, এই অভিযোগ উঠেছিল আগেই। কিন্তু আজ রাজ্যের আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়, তাদের আগাম সতর্কতা জারি করা সত্ত্বেও সাবধান হয়নি রাজ্য। তাদের দাবি, ১৪ এবং ১৫ তারিখ পাহাড়ে প্রচণ্ড বৃষ্টি এবং ধস নামতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছিল রাজ্য সরকারকে। এই সব এলাকার বাসিন্দাদের সুরক্ষিত এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চারধাম যাত্রা কিছু দিনের জন্য স্থগিত রাখার প্রস্তাবও দিয়েছিল তারা। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি বহুগুণা সরকার। রাজ্যের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, প্রতি বছরই আবহাওয়া দফতর ভারী বৃষ্টিপাত হবে বলে সতর্কতা জারি করে। কিন্তু এ বার যে এমন বিপর্যয় হবে, সে কথার উল্লেখ ছিল না।
—ছবি: এপি।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.