সম্পাদকীয়...
অগ্নিগর্ভ মিশর
তুরস্কের আগুন এখনও নেভে নাই, ইতিমধ্যেই মিশরে নূতন করিয়া দাবানলের সংকেত। প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুর্সির শাসনকালের প্রথম বর্ষপূর্তিতে বিরোধীরা তাঁহার ইস্তফার দাবিতে দেশময় আন্দোলনের ডাক দিয়াছেন। এই মর্মে অন্তত দেড় কোটি মিশরীয়ের স্বাক্ষর সংগৃহীত হইয়াছে। মিশরের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী আলেকজান্দ্রিয়ায় জাস্টিস অ্যান্ড ফ্রিডম পার্টির বকলমে মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকদের সহিত বিরোধীদের তুমুল সংঘর্ষ হইয়াছে, যাহাতে দুই জনের মৃত্যু হইয়াছে। হিংসা ও অরাজকতার মোকাবিলায় সরকারও নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করিয়াছে। ২০১১-র জানুয়ারিতে স্বৈরাচারী শাসক হোসনি মুবারকের পদত্যাগের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের সময় মিশর যে চেহারা লইয়াছিল, তাহা যেন ফিরিয়া আসিয়াছে।
মহম্মদ মুর্সির শাসন সম্পর্কে দেশবাসীর ক্ষোভ থাকিতেই পারে। গত এক বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের অবস্থা শোচনীয়, জ্বালানি সরবরাহে সমূহ সংকট, মূল্যবৃদ্ধি আকাশছোঁয়া, বেরোজগারি কমারও লক্ষণ নাই, বিনিয়োগকারীরা দেশ ছাড়িতেছেন। লিবিয়া ও কাতারের সহায়তা ছাড়া মিশরের মুদ্রাকে বাঁচানোও কঠিন হইত। ক্ষোভ অতএব স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখা দরকার, এই আর্থিক সংকটের অনেকটাই মুবারক-জমানার অবদান। মুর্সি মিশরের দীর্ঘ ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, তাঁহার ক্ষমতার নীতিগত, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক বৈধতা আছে। মেয়াদ ফুরাইবার আগে তাঁহাকে পদত্যাগ করিতে বলার কোনও নৈতিক অধিকার বিরোধীদের নাই। ক্ষমতা হইতে মহম্মদ মুর্সি কিংবা তাঁহার মুসলিম ব্রাদারহুড সরিয়া গেলে দেশের শাসনব্যবস্থায় যে শূন্যতা সৃষ্টি হইবে, তাহা কে পূরণ করিবে? বিরোধীদের অনেকে সেনানায়কদের ফিরাইতে চাহেন, কেহ কেহ মুবারককেও! ইহা কি জনসাধারণের দাবি? প্রতিবেশী সিরিয়ার দৃষ্টান্ত মুর্সি-বিরোধীদের রাস্তার আন্দোলনে উৎসাহিত করিয়া থাকিতে পারে। সিরিয়ায় যাহা ঘটিতেছে, তাহার অনুরূপ পরিণতির জন্য মিশরের জনগণ কি প্রস্তুত?
বিগত সাত দশক ধরিয়া মুসলিম ব্রাদারহুডই প্রতিবাদী কণ্ঠ হিসাবে মুখর হইয়াছে। একের পর এক সেনা-সমর্থিত স্বৈরাচারী শাসকের স্বেচ্ছাচারের শিকারও ছিলেন প্রধানত ব্রাদারহুডের নেতা-কর্মীরাই। সে সময় কিন্তু আজকের গণতন্ত্রীদের অধিকাংশেরই দেখা মেলে নাই। প্রেসিডেন্ট মুর্সি যে-সব অগণতান্ত্রিক ডিক্রি জারি করিতেছেন, তাহার বিরুদ্ধতা অবশ্যই কাম্য। তবে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করিয়া শাসনপ্রণালীতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করায় তাঁহার যাবতীয় পদক্ষেপকে ‘গণতান্ত্রিক’ বলিয়া মান্য করিতে হইবে। ব্রাদারহুডের নেতৃত্বকেও উপলব্ধি করিতে হইবে, তাঁহাদের একক প্রয়াসে মিশর স্বৈরাচারমুক্ত হয় নাই, গণতন্ত্রীদেরও ভূমিকা ছিল। তাই তাঁহাদেরও সঙ্গে লইয়া চলিতে হইবে। দরকষাকষি চলুক, কে ক্ষমতার কতটা অংশীদারি পাইবে, তাহা লইয়া দ্বন্দ্বও স্বাভাবিক। গণতন্ত্রে এ ধরনের বিরোধ কাম্যও বটে। কিন্তু নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাসীন হওয়ার এক বছরের মাথায় ইস্তফা দিতে বলা হাস্যকর। এই দাবি শিরোধার্য করিয়া লইলে যে নজির স্থাপিত হইবে, তাহা ভবিষ্যতেও মিশরের কোনও শাসক গোষ্ঠীকে আপন পূর্ণ মেয়াদ রাজত্ব করিতে দিবে না। যে-গণতন্ত্রীরা আজ মিশরের পথে-পথে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে শামিল, তাঁহারা কোনও দিন ক্ষমতাসীন হইলেও একই বিড়ম্বনার সম্মুখীন হইবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.