মাসুল-যুদ্ধে সামিল এ বার মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা
গ্রাহক টানতে এক সময়ে মোবাইল ফোনে কথা বলার মাসুল হ্রাসের যুদ্ধে নেমেছিল টেলিকম শিল্প। এ বার সেই একই যুদ্ধ শুরু হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তত এক থেকে দেড় বছর মাসুল হ্রাস ও বাড়তি সুবিধা দেওয়ার এই প্রবণতা বজায় থাকবে। কারণ বাজার বাড়াতে টেলিকম সংস্থাগুলির কাছে এটাই আপাতত একমাত্র হাতিয়ার।
এয়ারটেল, ভোডাফোন ও আইডিয়া ইতিমধ্যেই তাদের টুজি-ইন্টারনেট পরিষেবার মাসুল ৮০-৯০% হ্রাসের কথা ঘোষণা করেছে। একই ভাবে টাটা ডোকোমো-ও তাদের টুজি এবং থ্রিজি পরিষেবার মাসুল আগামী ১ জুলাই থেকে ৯০% কমানোর কথা বলেছে। সকলেরই আশা, এর ফলে বাড়বে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ব্যবহার।
ফোনে কথা বলার পরিষেবায় মাসুল-যুদ্ধের সময়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল টেলিকম শিল্প। কিছু সংস্থার অভিযোগ ছিল, নতুন কয়েকটি সংস্থা গ্রাহক টানতে মাসুল হ্রাসের কৌশল নেওয়ায় আখেরে ক্ষতি হচ্ছে এই শিল্পের। তাদের বক্তব্য ছিল, এতে ব্যবসা চালানো দুষ্কর। কারণ, সংস্থাগুলির আর্থিক স্বাস্থ্যের উপর চাপ পড়ছিল।
তা হলে কেন ফের টুজি পরিষেবায় ইন্টারনেটের মাসুল কমানোর পথে হাঁটছে সংস্থাগুলি? বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবসা বাড়াতে এখন আর অন্য কোনও উপায় নেই। যেমন উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-র ভারতে টেলিকম বিভাগের প্রধান রোমল শেট্টির বক্তব্য, বছর কুড়ি আগে মোবাইল ফোনে কথা বলার মাসুল অনেক চড়া ছিল। পরে তা অনেক কমে এলে মোবাইল সাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় হয়। কিন্তু এখন কথা বলার ব্যবসা থেকে সংস্থাগুলির আয় বাড়ানোর সুযোগ প্রায় নেই। বরং আয়ের নতুন উৎস হতে চলেছে ইন্টারনেট-সহ তথ্য আদান-প্রদানের (ডেটা) পরিষেবাই।
তাঁর দাবি, উন্নত দেশগুলিতে টেলিকম ব্যবসার ৬০% আসে এ ধরনের পরিষেবা থেকেই। বছর চার-পাঁচ আগে ভারতে তা ছিল ১০-১২%। আবার তার ৫০ শতাংশেরও বেশি আসত এসএমএস পরিষেবা থেকে। এখন তথ্য আদান-প্রদান পরিষেবা থেকে আয় কিছুটা বাড়লেও তা খুব বেশি হলে ২০%। যার ৪০% এসএমএস পরিষেবার থেকে আসছে। কিন্তু যেহেতু ফোনে কথা বলার প্রবণতা কমছে, তাই তথ্য আদান-প্রদানের বাজারই সকলের লক্ষ্য। তিনি বলেন, “আগামী ১২-১৮ মাস এই প্রবণতাই চলবে।”
সেলুলার অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার ডিজি রাজন এস ম্যাথুজের দাবি, হোয়াটসঅ্যাপ-এর মতো পরিষেবা আবার বাজার কাড়ছে এসএমএস ও ইন্টারনেট পরিষেবার। ফলে ব্যবসা বাড়াতে নিত্য নতুন কৌশল স্থির করতে হচ্ছে সংস্থাগুলিকে। ইন্টারনেটের মাসুল হ্রাস যার অন্যতম। সে ক্ষেত্রে পরিষেবা দেওয়ার খরচ উপেক্ষা করেও ন্যূনতম মাসুল স্থির করছে তারা।
আইডিয়া-র এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা চাই গ্রাহকেরা আরও বেশি করে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করুন।” যে-সব সার্কেলে তা কম এবং থ্রিজি পরিষেবা নেই, মূলত সেখানেই পরীক্ষামূলক ভাবে মাসুল হ্রাস করেছে সংস্থাটি। মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট পরিষেবার সুবিধা মানুষের কাছে সহজলভ্য করতে চায় ভোডাফোন ইন্ডিয়া। সংস্থার সিইও বিবেক মাথুর জানান, এ জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শহরে পৌঁছনোও জরুরি। টাটা ডোকোমো-রও আশা, এতে ইন্টারনেট পরিষেবার জনপ্রিয়তা বাড়বে।
তবে অধিকাংশ সংস্থাই দেশ জুড়ে তাদের সব সার্কেলে এই মাসুল হ্রাস করেনি। শেট্টির দাবি, কথা বলার পরিষেবার মতো ইন্টারনেট পরিষেবার মাসুল দেশ জুড়ে কমার সম্ভাবনা কম। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই কিছু সার্কেলে এই কৌশল নেবে সংস্থাগুলি। শেট্টির বক্তব্য, বিদেশের মতো মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট পরিষেবার জনপ্রিয়তা এ দেশে নেই। এই পরিষেবার জন্য উপযুক্ত সস্তার ফোনও বাজারে নেই। তেমনই গ্রাহককে সহজে আকর্ষণ করে এমন বিষয়বস্তুও (কনটেন্ট) অমিল। ফলে গ্রাহকের পকেটের চাপ কমিয়ে বাজার ধরাই একমাত্র উপায়। সহায়ক পরিকাঠামো দ্রুত গড়ে উঠলে হয়তো মাসুল হ্রাসের ততটা প্রয়োজন হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁদের সামনে বিকল্প পথ খোলা নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.