শাসনেই আক্রান্ত হলেন মজিদ মাস্টারের স্ত্রী, অভিযুক্ত শাসক দল
শাসনে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারের সময় আক্রান্ত হলেন মজিদ মাস্টারের স্ত্রী তথা জেলা পরিষদে সিপিএম প্রার্থী আসফ নুর বেগম, প্রাক্তন মন্ত্রী রেখা গোস্বামী, প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তী-সহ সিপিএমের একাধিক মহিলা নেত্রী। আহত হন জনা দশেক। বৃহস্পতিবার বিকেলের ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল। অভিযোগ, ভাঙচুর করা হয় সিপিএমের মিছিলে থাকা কয়েকটি গাড়ি। মহিলাদের ব্যাগ, মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়।
এক সময় শাসনের ‘শেষ কথা’ বলে পরিচিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মজিদ মাস্টার। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, “শাসনে আমরা কেন প্রচার করছি, সেই রাগেই তৃণমূলের লোকজন হামলা করে।” প্রতিবাদে এ দিন সন্ধ্যায় দেগঙ্গায় আধ ঘণ্টা বারাসত-টাকি রোড অবরোধ করে সিপিএম। অভিযোগ অস্বীকার করে এই ঘটনাকে সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলেই দাবি করেছে তৃণমূল। এলাকায় পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ নামানো হয়েছে। তবে কেউ ধরা পড়েনি।
ভাঙচুর হওয়া গাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।
সিপিএমের অভিযোগ, পঞ্চায়েতে প্রচার করা দূর-অস্ত্, তৃণমূলের চাপে কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন আসফ নুর বেগম। এ দিন তাঁকে নিয়েই প্রচারে বেরোন প্রায় শ’তিনেক মহিলা সংগঠনের নেত্রী ও কর্মীরা। ছিল ছ’টি ম্যাটাডর, একটি জিপ ও কয়েকটি ব্যক্তিগত গাড়িও। সিপিএমের দাবি, শাসনের দিকে ঢুকতেই আচমকা মাঝে একটি ট্রাক ঢুকিয়ে আটকে দেওয়া হয় মিছিলের গাড়িগুলি। শুরু হয় বোমাবাজি।
রমলাদেবীর অভিযোগ, সেই সময় প্রায় শ’খানেক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক গাড়ি থেকে মহিলা নেত্রী, চালকদের টেনে নামিয়ে পেটায়। রেয়াত করা হয়নি মিছিলে থাকা কর্মী-সমর্থকদেরও। তাঁর দাবি, “মিছিলের চারদিকে বোমা ফাটাচ্ছিল তৃণমূলের লোকজন। প্রাণ বাঁচাতে আমাদের যে যে-দিকে পারে ছোটে।” আহত হন নুর বেগম, রেখা গোস্বামী, রমলা চক্রবর্তী, ইলা নন্দী, রেখা মৈত্র-সহ উত্তর ২৪ পরগনায় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির একাধিক নেত্রী ও মিছিলে থাকা কর্মী-সমর্থকেরা। জখম সিপিএম কর্মী সফিকুল ইসলাম ও সোমা চক্রবর্তীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পুলিশ গিয়ে আক্রান্তদের উদ্ধার করে। পরে নামে র্যাফ।
সিপিএমের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “৩০ বছর শাসনে তো কাউকে ঢুকতে দেয়নি সিপিএম। এখন ওদের লোকই ওদের মারছে। এর মধ্যে তৃণমূলের কেউ নেই।” শাসনের ঘটনার নিন্দা করেছেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। তাঁর অভিযোগ, শুধু শাসন নয়, উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা পরিষদ আসনগুলিতে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ঠেকাতেই বাসন্তী রোড বরাবরও তৃণমূল সন্ত্রাস করছে। গৌতমবাবুর আরও অভিযোগ, ওই সন্ত্রাসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এ রকম চলতে থাকলে তাঁরাও চুপ করে বসে থাকবেন না বলে এ দিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন গৌতমবাবু। তিনি জানান, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাসন্তী রোড অবরোধ করা হবে। গৌতমবাবুর কথায়, “জেলা পরিষদের আসনগুলি আমরা মুকুল রায়ের হাতে ফুলের বোকে হিসাবে উপহার দিতে পারব না।” তাঁর হুঁশিয়ারি, প্রয়োজনে তাঁরা বাসন্তী রোড অবরোধ করবেন। তবে কবে তা করা হবে, তা তাঁরা পরে জানাবেন। মিছিল-অবরোধ করলে মানুষের অসুবিধা হয় জানিয়েও গৌতমবাবু বলেন, “অন্য উপায় না থাকলে ওই পথেই যেতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধ করার কথা ভাবতে হতে পারে। সেই অবরোধে পুলিশ আসবে। যে কোনও ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ লাঠিচার্জ বা গ্রেফতার করতে পারে। কর্মসূচিতে হাজার হাজার লোক আসবেন। যেমন ৪০০-৫০০ মহিলা শাসনে গিয়েছিলেন।” গৌতমবাবুর আরও হুঁশিয়ারি, “দরকার হলে বাইক বাহিনীর বাইক কেড়ে নিয়ে থানায় জমা দেব।”
গৌতমবাবুর ব্যাখ্যা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৫টি এবং উত্তর ২৪ পরগনার ১০টি জেলা পরিষদ আসন বাসন্তী রোড লাগোয়া এলাকায় আছে। ওই ২৫টা আসনের মধ্যে ২০-২২টা বামেরা এ বার জিতে যেতে পারে। সেই জন্যই ওই এলাকায় সিপিএমকে ঠেকাতে আরাবুল, শওকত, ভজাই, বাবু মাস্টার প্রমুখ দুষ্কৃতীকে নামানো হচ্ছে। ফলে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৭টা এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ১৮টা মোট ৩৫টি জেলা পরিষদ আসনে কাজ করা সবচেয়ে বেশি মুশকিল হচ্ছে বামেদের পক্ষে। গৌতমবাবু জানান, উত্তর ২৪ পরগনায় তাঁদের ২২৯ জন প্রার্থী তৃণমূলের সন্ত্রাসে বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.