সাইনবোর্ডে ফের বরাদ্দ ২৪ লক্ষ
বেহাল দিক-নির্দেশ, নয়া টার্মিনাল যেন ভুলভুলাইয়া
লকাতায় পা দিয়ে জিএম তো খানিকটা ঘাবড়েই গিয়েছিলেন। সিঙ্গাপুর থেকে এসেছেন। কিন্তু বিমান থেকে টার্মিনালে ঢুকে বুঝতে পারছিলেন না, কোন দিকে যাবেন। কনভেয়ার বেল্ট থেকে ব্যাগ নিয়ে ইতিউতি উঁকি মেরেও বোঝা যাচ্ছিল না, কোন পথে গেলে টার্মিনালের বাইরে বেরোনো যাবে। জিএম তো ভারতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার পদে রয়েছেন। সম্প্রতি কলকাতায় এসে তাঁর সেই অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে হেসে বললেন, “যে যাত্রী প্রথম বেল্ট থেকে ব্যাগ তুলে বাইরের দিকে হাঁটা লাগালেন, অন্য সব যাত্রীদের দেখছিলাম তাঁকেই অনুসরণ করতে। আমিও তা-ই করলাম। তবে, সেই যাত্রী যদি পথ হারিয়ে ফেলতেন তা হলে পিছনে আমাদেরও সেই একই দশা হতো।” কলকাতার নতুন টার্মিনালে নামার পরে গত তিন মাসে বহু যাত্রীর অভিজ্ঞতার সঙ্গে হুবহু মিলে যাবে তাঁর এই অভিজ্ঞতার ছবি। কারণ, টার্মিনাল চালুর তিন মাস পরেও নির্দেশিকার সেই পুরনো সমস্যা রয়েছে। ১১ মার্চ থেকে একে একে বিমানসংস্থাগুলি তাদের উড়ান চালু করেছিল এই নতুন টার্মিনালে। প্রথম থেকেই সমস্যা ছিল নির্দেশিকা নিয়ে। বিদেশে বা দিল্লি-মুম্বই-হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরেও টার্মিনালের ভিতরে এমন ভাবে বড় বড় বোর্ডে দিক-নির্দেশ করা রয়েছে যে যাত্রীকে বিমান ধরতে গিয়ে বা বিমান থেকে নেমে শহরে ঢুকতে গিয়ে কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না। কিন্তু, কলকাতার নতুন টার্মিনালে দিক নির্দেশ থাকলেও তা এত ছোট এবং তা বসানোর ক্ষেত্রে এত পরিকল্পনার অভাব ছিল যে, তা নিয়ে নিত্যদিন সমস্যায় পড়ছিলেন যাত্রীরা।
দিক-বিভ্রান্তির সমস্যা মেটাতে বসানো হয়েছে নতুন এই বোর্ডগুলি।
সেই সমস্যা সমাধানে একটি কমিটিও গঠন করেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সেই কমিটির পরামর্শ মেনে কলকাতারই এক সংস্থাকে দিয়ে বড় বড় সাইন বোর্ড তৈরি করে নতুন টার্মিনালের ভিতরে লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। কোথায় সিঁড়ি, কোথায় লিফ্ট, কোথায় শৌচাগার, কোথায় বিমানে ওঠার কত নম্বর গেট নতুন করে তৈরি হচ্ছে সেই সব বোর্ড। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “এই কাজে আমাদের ২৪ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। প্রায় দেড়শো নতুন সাইনবোর্ড বানানো হচ্ছে। যার মধ্যে ৩০ শতাংশ বোর্ড আমরা ইতিমধ্যেই বসিয়ে ফেলেছি।” প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে ২৪০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে কলকাতার এই নতুন টার্মিনাল তৈরিতে, একটি পেশাদার সংস্থাকে দিয়ে সেই কাজ করানো হয়েছে, সেখানে আবার নতুন করে নির্দেশিকা সংক্রান্ত বোর্ড বসাতে কেন ২৪ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে? তাহলে কি পরিকল্পনার অভাব ছিল? প্রথমেই যদি বড় বড় বোর্ড বসানো হতো তাহলে তো নতুন করে এই ২৪ লক্ষ টাকা খরচ করতে হতো না।
টার্মিনালের তিন মাস
অধিকর্তা বলেন, “প্রথম থেকেই কিছু নির্দেশিকা ছিল। ঠিক ছিল, নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে যাওয়ার পরে সেখানে নানা ধরনের বিপণি বসবে। সেই বিপণির সারি পেরিয়ে গেলে তবে যাত্রীরা বিমানে ওঠার বোর্ডিং গেট খুঁজবেন। তাই বিপণির জায়গা ছেড়ে দিয়ে সেই নির্দেশিকা লাগানো হয়েছিল। তা ছাড়া, সিলিং এতটাই উঁচুতে যে যেখান-সেখানে উপর থেকে ঝুলিয়ে বোর্ড লাগানো কার্যত অসম্ভব। এ দিকে, বিপণি সে ভাবে আসেনি। ফলে নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ফাঁকা জায়গায় গিয়ে যাত্রীরা নির্দেশিকা খুঁজে না পেয়ে দিশাহারা হয়ে যাচ্ছেন।” অন্য শহর থেকে এসে সিঙ্গাপুর-কর্তার মতো যাঁরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও সমস্যার কারণ একই বলে তিনি জানান। কারণ, বিদেশ থেকে এসে কলকাতায় নামার পরেই যে কর-মুক্ত বিপণি দেখতে পাওয়ার কথা যাত্রীদের, সেই জায়গাও এখন ফাঁকা।দোকান অবশ্য আস্তে আস্তে বসতে শুরু করেছে। বিদেশি জুতোর একটি দোকান বসেছে মাত্র এক সপ্তাহ আগে। সেই দোকানের কর্মী মানস দত্ত বলেন, “দিনে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হচ্ছে। তবে, আশা ছিল প্রায় ৬০ হাজার টাকার কাছাকাছি বিক্রি হবে।”
বিমানবন্দরের অধিকর্তা জানিয়েছেন, সমস্ত বিপণি যাতে তাড়াতাড়ি বসে যায়, তা দিল্লি থেকে দেখা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের অফিসারদের মতে, চার-পাঁচ মাস আগেও দিল্লি-মুম্বই-হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় নেমে পুরনো টার্মিনাল দেখে নাক শিঁটকোতেন যাত্রীরা। দুবাই-লন্ডন থেকে আসা যাত্রীদের কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার পরে সেটা বন্ধ হয়েছে। বিমানসংস্থার এক অফিসারের কথায়, “এখন নতুন ঝাঁ চকচকে টার্মিনাল দেখে যাত্রীরা দেশ-বিদেশের তাবড় বিমানবন্দরের সঙ্গে তার তুলনা শুরু করে দিচ্ছেন। অথচ মাত্র তিন মাস আগে চালু হয়েছে সে কথা তাঁদের মাথায় থাকছে না। এক লাফে যাত্রীদের প্রত্যাশা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।” অথচ সেই প্রত্যাশার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
ব্যবসায়িক কাজে কলকাতা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন সৈকত বসু। বললেন, “এই টার্মিনাল ব্যবহার করতে এখন আমাদের কাছ থেকে উন্নয়নের জন্য বিমান টিকিট ছাড়াও আলাদা করে টাকা নিচ্ছে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ। ফলে এখানে অন্যান্য উন্নত বিমানবন্দরের মতো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া আমাদের প্রত্যাশা নয়, অধিকারের মধ্যে পড়ে। কর্তৃপক্ষ তা দিতে বাধ্য।” কলকাতায় রাশিয়ান দূতাবাসের যুবা অফিসার আর্থার কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন। সঙ্গে তিন-চার জন সঙ্গী। তাঁর কথায়, “এত বড় টার্মিনালে যত্রতত্র রেস্তোরাঁ থাকা উচিত। আমার হাতে সময় থাকলে যেখানে বসে এক কাপ কফি খেতে পারব। সে সব কোথায়?”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.