সারদা মামলা
সিবিআই তদন্ত আপাতত নয়, নির্দেশ হাইকোর্টের
সারদা কাণ্ডে আপাতত সিবিআই তদন্তের বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পেল রাজ্য সরকার।
বুধবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য সরকার নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) উপরে ভরসা রাখছে তারা। তবে সিটকে তদন্ত করতে হবে হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রতি মাসে আদালতকে রিপোর্ট দিতে হবে তাদের। পাশাপাশি, সারদার আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর জন্য গঠিত শ্যামল সেন কমিশনকেও তিন মাস অন্তর রিপোর্ট দিতে অনুরোধ করেছে বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারপতি মৃণালকান্তি রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। সারদা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিধাননগরে বিশেষ আদালত তৈরির সুপারিশও করেছেন বিচারপতিরা।
সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত চেয়ে যে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল, বুধবার তার রায় দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। কেন এখনই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা দিয়ে আদালত বলেছে, এটা ঠিক যে সিবিআই -কে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়ার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু শীর্ষ আদালত বারবার সাবধান করে দিয়ে বলেছে, সেটা যেন একমাত্র বিশেষ এবং ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে হয়।
সারদা কাণ্ড কেন ব্যতিক্রমী, তা বোঝাতে আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে এই দুর্নীতিতে তৃণমূলের দুই সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং সৃঞ্জয় বসুর যুক্ত থাকার কথা বলা হয়েছিল। আবেদনকারীদের যুক্তি ছিল, শাসক দলের দুই সাংসদ যেখানে দুর্নীতিতে যুক্ত, সেখানে রাজ্য সরকারের তদন্ত নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। সেই যুক্তি খারিজ করে আদালত বলেছে, কোনও রাজনীতিকের নিজস্ব কর্মক্ষেত্র থাকতেই পারে। তার অর্থ এই নয় যে, সেই কাজের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত। কুণালকে পুলিশ ইতিমধ্যেই জেরা করেছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। এই দু’জনের কেউ যদি এই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থেকেও থাকেন, তা হলেও রাজ্য প্রশাসনকে সে জন্য দায়ী করা চলে না। কোনও অপরাধের সঙ্গে কোনও রাজনীতিকের যোগ থাকলেই এটা প্রমাণিত হয় না যে প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজসেই তা হয়েছে।
বুধবার বিধাননগর আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেবযানী সুদীপ্তকে। —নিজস্ব চিত্র
তবে সিবিআই তদন্তের দাবি যে একেবারে খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে না, বরং স্থগিত রাখা হচ্ছে, তা জানিয়ে বিচারপতিরা বলেছেন, সিট কী ভাবে তদন্ত করবে তার উপরেই সব নির্ভর করছে। তাদের তদন্ত প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে পরবর্তী কালে যে কোনও ব্যক্তি ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারেন বলে রায়ে জানানো হয়েছে।
সিট কী ভাবে তদন্ত করবে সে ব্যাপারেও দিন কিছু নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। তারা বলেছে, এই মামলার তদন্তে যদি কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিট -এর সাহায্য চায় তা হলে তা দিতে হবে। তবে সিট এখন খুব ব্যস্ত। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের তদন্তের কাজ শেষ করতে হবে। তাই কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে আগে থেকে সময় ঠিক করে নিয়ে তবেই সিটের সঙ্গে দেখা করতে হবে। পাশাপাশি রাজ্য সরকার যাতে সিট -কে সব রকম পরিকাঠামোগত সাহায্য করে সে কথাও বলা হয়েছে। প্রয়োজনে বিধাননগর কমিশনারেটে একটি বিশেষ আদালত গঠন করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের নির্দেশকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করবেন বলে দিনই জানিয়ে দিয়েছেন আবেদনকারীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যে আর্জি নিয়ে এই মামলা করা হয়েছিল, তারই কোনও রায় মিলল না।” সুব্রতবাবু মনে করেন, প্রতারণার ব্যাপ্তি এত বিশাল যে, রাজ্যের কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তার তদন্ত সম্ভব নয়। সেই পরিকাঠামোই তাদের নেই। একমাত্র কেন্দ্রীয় কোনও তদন্তকারী সংস্থার পক্ষেই এই তদন্ত সম্ভব। তাঁর আরও যুক্তি, সারদা গোষ্ঠীর ব্যবসা রয়েছে দেশ জুড়ে। বিভিন্ন রাজ্যে বহু মানুষের সঙ্গে ওই সংস্থা প্রতারণা করেছে। দু’টি রাজ্যে ইতিমধ্যেই সিবিআইতদন্ত শুরু হয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গেও সিবিআই তদন্তই হওয়া উচিত।
দিকে, গ্রেফতার হওয়ার ৫৫ দিনের মাথায় বুধবার সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায় -সহ চার অভিযুক্তের হাতে চার্জশিট ধরালো বিধাননগর কমিশনারেট। ধৃতদের দিন বিধাননগর এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। তাঁদের সকলকেই জুন পর্যন্ত ফের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ছাড়াও সারদার এক এজেন্টের অভিযোগের ভিত্তিতে নতুন একটি মামলায় সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতারের আবেদন জানায় পুলিশ। আদালত তা মঞ্জুর করে।
দিন কোর্ট লকআপেই অভিযুক্তদের হাতে চার্জশিট ধরায় পুলিশ। তাঁদের আইনজীবীরা আদালতে একযোগে অভিযোগ জানান যে, বেশ কয়েক জন সাক্ষীর বয়ান, সিজার লিস্ট -সহ একাধিক তথ্য তাঁদের মক্কেলদের দেওয়া হয়নি। এবং চার্জশিটে কী আছে তা ভাল ভাবে পড়ার আগেই তাঁদের দিয়ে স্বাক্ষর করানো হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন, আবেদন করলে যে সব তথ্য চাইছেন, তা দেওয়া হবে। আদালতের বাইরে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষ অবশ্য বলেন, “আইন অনুযায়ী যা তথ্য দেওয়ার কথা, তা -
দেওয়া হয়েছে।”
এজলাসে সুদীপ্ত প্রথম দিকে শান্ত ভাবে বসে সওয়াল -জবাব শুনছিলেন। কিন্তু পরে চার্জশিট নিয়ে সওয়াল -জবাব শুরু হতেই উদ্বিগ্ন ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ান। দেবযানীর মধ্যে অবশ্য কোনও উদ্বেগ লক্ষ করা যায়নি।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.