কার্ড মাহাত্ম্য
চিরটাকাল ধার নেওয়াকে বেশ খাটো নজরেই দেখি আমরা। দোকানে-বাজারে প্রায়ই চোখে পড়ে ‘আজ নগদ, কাল ধার’। অথচ কী আশ্চর্য! পকেটের পার্স থেকে ক্রেডিট কার্ড মুখ বাড়ালে, সেই ধারে কেনারই কী অসম্ভব খাতির! যেন নোটের বান্ডিল নয়, ক্রেডিট কার্ডের গোছা পকেটে রাখাই আসল কেতা। এই প্রজন্মের ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’। তবে তার মানে এই নয় যে, ক্রেডিট কার্ড মানেই শুধু দেখনদারি। রেস্তোরাঁর বিল, রেলের রিজার্ভেশন, বিমানের টিকিট, ওয়েবসাইটে কেনাকাটা প্রায় সব কিছুতে এখন প্রায়ই প্রয়োজন পড়ে এই ‘প্লাস্টিক মানি’র। সব থেকে বড় কথা, এই কার্ড পকেটে থাকা মানে, বিনা নগদেও কেনাকাটা চালু। হঠাত্‌ কোনও বিপদে টাকার জোগান। এবং দুই ক্ষেত্রেই এখনকার মতো ধার নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিনা সুদে সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়ার সুবিধা। কিন্তু সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনই কার্ড ব্যবহারে সামান্য অসতর্ক হলেই পায়ে পায়ে বিপদ অপেক্ষা করবে আপনার জন্য। হয়তো হাতে আসবে বিরাট অঙ্কের বিল। কখনও আবার সামান্য ক’টা টাকা বাকি থেকে যাওয়ায় গুনতে হবে চড়া সুদ। তাই এই সমস্ত ঝামেলা-ঝক্কি এড়াতে এক্কেবারে গোড়া থেকে ব্যাপারটা একটু বুঝে নেওয়া ভাল। আসুন আজ সেই আলোচনায় বসি।
কার্ডের কথা
• ক্রেডিট কার্ড হল ধারে পণ্য বা পরিষেবা কেনার অন্যতম সহজ মাধ্যম। নগদ টাকার বদলে প্লাস্টিকের এই কার্ড ‘ঘষে’ই (সোয়াইপ করে) আপনার কাছে পণ্য-পরিষেবার দাম নিতে পারে বড় এবং মাঝারি শহরের অসংখ্য বিপণি।
• মূলত ইস্যু করে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক।
• প্রত্যেক কার্ডের ধারে কেনার নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমা (ক্রেডিট লিমিট) থাকে।
• কেনাকাটার পর সাধারণত ৪৫ দিন পর্যন্ত (ব্যাঙ্ক কিংবা কার্ড বিশেষে কম-বেশি হতে পারে) বিনা সুদে ধার মেটানোর সুযোগ পাওয়া যায়।
• ঠিকানায়/ ই-মেলে/ এসএমএসে বিল আসার পর নির্ধারিত দিনের মধ্যে টাকা মিটিয়ে দিতে হবে চেকে কিংবা নগদে। সরাসরি টাকা ‘ট্রান্সফার’ করতে পারেন এটিএম কিংবা নেট মারফতও।
• পুরো টাকা দিতে না-পারলে, জমা করতে হয় ন্যূনতম অঙ্ক। তবে চড়া সুদ দিতে হয় বাকি টাকার উপর। ন্যূনতম অঙ্কও (মিনিমাম ডিউ) মেটাতে না-পারলে, দিতে হয় লেট-ফি। এ নিয়ে একটু পরেই বিস্তারিত আলোচনা করব।
• রেলের বা বিমানের টিকিট-সহ বিভিন্ন পরিষেবা কিংবা পণ্য অনলাইনে কেনা যায় কার্ডের মাধ্যমে।
• কার্ডে কেনাকাটায় পেতে পারেন ক্যাশ ব্যাক, বোনাস, গিফ্‌ট পয়েন্টের মতো বাড়তি সুবিধা।
• তোলা যায় এটিএম থেকে টাকাও। তবে ক্রেডিট কার্ডে তোলা টাকা ঋণ হিসেবে গণ্য হওয়ায়, তার উপর চড়া সুদ গুনতে হবে আপনাকে।

সুবিধার সাতকাহন
• মোটা নগদ টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর প্রয়োজন নেই।
• কোনও বিপদে (যেমন অসুস্থতা) হঠাত্‌ টাকার প্রয়োজন হলে, এই কার্ড যথেষ্ট কাজে আসতে পারে।
• হাতে নগদ না-থাকলেও ধারে কেনার সুযোগ।
• নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধার মেটাতে পারলে, সুদ গোনার ঝক্কি নেই।
• বছরে ৩৬৫ দিনই ব্যবহার করা যায়।
• বড় বিপণি কিংবা শপিং মল তো বটেই, নগদের পরিবর্তে এখন কার্ডে পেমেন্ট নেয় অনেক ছোট দোকানও। অনলাইনে কেনাকাটায় অনেক ক্ষেত্রে একান্ত জরুরি।
• ক্রেডিট কার্ডের ভিত্তিতে অনেক সময়ে আলাদা করে পার্সোনাল লোন (ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঋণ) দেওয়ার প্রস্তাব দেয় ব্যাঙ্ক। এই ধার কার্ডে ঋণের যে-ঊর্ধ্বসীমা থাকে, তার বাইরে। এবং আর পাঁচটি ঋণের মতোই কিস্তির মাধ্যমে তা শোধ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কের প্রাপ্য আসল ও সুদের অঙ্ক ক্রমশ কমে আসে।

জানুন অসুবিধাও
• অনিয়ন্ত্রিত খরচের সম্ভাবনা বাড়ে। বেড়ে যায় দুমদাম কিছু কিনে ফেলার (ইমপালসিভ বায়িং) প্রবণতাও।
• ঋণের টাকা সময়মতো না-মেটালে, গুনতে হয় চড়া সুদ। বছরে এই হার ৩০-৩৬ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। দিতে হতে পারে অন্যান্য মাসুলও।
• অনলাইনে কার্ড ব্যবহার করলে, সুরক্ষা নিয়ে মাথাব্যথা থাকে।
• কথায়-কথায় কার্ড বার করলে, নজরে রাখে আয়কর দফতর।

চাইলেই পাব?
এ কথা ঠিকই যে, ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য আপনাকে ফোনে বিস্তর পীড়াপিড়ি করে ব্যাঙ্কগুলো। কিন্তু কিছু দিন আগেও যেমন ঢালাও ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার চল ছিল, সেই সংখ্যায় এখন বেশ কিছুটা ভাটা। কারণ, ব্যাঙ্কগুলি দেখেছে, অনেকেই ঝোঁকের মাথায় ক্রেডিট কার্ড নিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে কেনাকাটার পর হিমসিম খাচ্ছেন টাকা মেটাতে। তাই এখন কারও নামে কার্ড ইস্যু করার আগে তাঁর যাবতীয় রেকর্ড ভাল করে খতিয়ে দেখছে ব্যাঙ্কগুলি।
ধরুন, আপনি যদি কার্ড চান, তা হলে অন্তত নীচের জিনিসগুলি আগাম দেখবেই সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কটি
ঋণের ইতিহাস: এখনও পর্যন্ত কী কী ধার (গাড়ি-বাড়ি কিনতে, ব্যক্তিগত কাজে, আগে থেকেই রয়েছে এমন ক্রেডিট কার্ডে ইত্যাদি) করেছেন। তা শোধেরই বা রেকর্ড কেমন।
সিবিল রিপোর্ট: সাধারণত কারও ধার এবং তা শোধের এই ‘ইতিহাস’ পেতে সিবিল (ক্রেডিট ইনফর্মেশন ব্যুরো অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড)-এর দ্বারস্থ হয় ব্যাঙ্ক। কবে কোথায় কত টাকা ধার নিয়েছেন থেকে শুরু করে আপনার ক্রেডিট কার্ডের ‘পেমেন্ট রেকর্ড’ সবই তোলা থাকে সিবিলের খাতায়। দেখা যায়, কী ভাবে ধারের টাকা শোধ দিয়েছেন বা দিচ্ছেন আপনি। কার্ড পাবেন কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করে ওই রিপোর্টের উপর। সিবিল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে www.anandabazar.com ওয়েবসাইটে গিয়ে গত ১৩ ডিসেম্বরের ‘বিষয়-আশয়’ দেখতে পারেন।
• যে-ব্যাঙ্কের কার্ড চাইছেন, সেখানে আপনার অ্যাকাউন্ট থাকলে, নিজেদের ভাঁড়ারে থাকা লেনদেনের যাবতীয় রেকর্ডও খুঁটিয়ে দেখবে তারা।
• যেখানে থাকেন কিংবা কাজ করেন, সেখানে ফোন করে এমনকী লোক পাঠিয়েও আপনার সম্পর্কে তথ্য যাচাই করতে পারে ব্যাঙ্কগুলি।

ডেবিট-ক্রেডিট ফারাক
অনেকেই প্রশ্ন করেন, ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেও তো পণ্য-পরিষেবার দাম মেটানো যায়। তা হলে তার সঙ্গে ক্রেডিট কার্ডের পার্থক্য কোথায়?
ক্রেডিট কার্ডের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে এতক্ষণ আলোচনা করেইছি আমরা। তাই দু’য়ের মধ্যে ফারাক স্পষ্ট করে বুঝতে ডেবিট কার্ড সম্পর্কেও দু’চার কথা জেনে রাখা ভাল
• সাধারণত ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলা যায়। তবে এমন ব্যাঙ্কও আছে, যাদের এটিএম থেকে টাকা তোলার জন্য আলাদা কার্ড রয়েছে। তাই ডেবিট কার্ড মানেই যে তা এটিএম কার্ড হবে, এমনটা না-ও হতে পারে।
• ডেবিট কার্ডেও পণ্য-পরিষেবার দাম মেটানো যায়। কিন্তু ধারে নয়, সরাসরি নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে।
• অনলাইন কেনাকাটাতেও এই কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেখানেও দাম মেটানোর টাকা কাটা যাবে সরাসরি অ্যাকাউন্ট থেকেই।

কার্ডের রকমফের
প্রাইভেট লেবেল: এই ধরনের কার্ডে পেমেন্ট কিন্তু সকলে নেবে না। হয়তো দেখা গেল, তা দিয়ে আপনি কেনাকাটা করতে পারবেন একটি বা দু’টি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে।
জেনারেল পারপাস: ক্রেডিট কার্ড বলতে সাধারণত এইগুলিকেই বুঝি আমরা। বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড সংস্থার (ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স ইত্যাদি) ট্রেডমার্ক ব্যবহার করে এই কার্ড ইস্যু করে ব্যাঙ্কগুলি। নাম থেকেই পরিষ্কার যে, এটি আপনি ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ওয়েবসাইট, শপিং মল, বিপণি ইত্যাদিতে। এমনিতে গ্রাহকদের সঙ্গে কার্ড সংস্থাগুলির সরাসরি তেমন কোনও যোগাযোগ থাকে না। কিন্তু অজস্র রেস্তোরাঁ, বিপণি, ওয়েবসাইট ইত্যাদির সঙ্গে তাদের চুক্তি থাকায়, এই কার্ডের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক।
প্ল্যাটিনাম-ক্লাসিক-সিগনেচার: মাস্টার, ভিসা ইত্যাদি যে সব কার্ডের কথা আলোচনা করলাম, তাদেরও আবার রকমফের আছে। যেমন, প্ল্যাটিনাম, সিগনেচার ইত্যাদি। এক এক কার্ডে ঋণের ঊর্ধ্বসীমা এক এক রকম।

যিনি কার্ডে কেনাকাটায় বেশি টাকা
খরচ করেন, তাঁর হয়তো সিগনেচার কার্ড। আবার যাঁর খরচ কম, তাঁর প্ল্যাটিনাম। তাই কোন ‘রং’-এর কার্ড বেছে নেবেন, বিপণন কৌশল হিসেবে তাকে ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ হিসেবে তুলে ধরে ব্যাঙ্কগুলি।
অ্যাড-অন কার্ড: ধরুন, রামবাবুর একটি ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। এ বার নিজের স্ত্রীর জন্য একটি অ্যাড-অন কার্ড দিতে ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন জানালেন তিনি। সে ক্ষেত্রে
(১) এ বার থেকে নিজেরটির পাশাপাশি স্ত্রীর ওই কার্ডের ধার মেটানোর দায়িত্বও বর্তাবে রামবাবুর উপর। অর্থাত্‌, অ্যাড-অন কার্ডে কেনাকাটা যিনিই করুন না-কেন, টাকা মেটানোর দায় মূল কার্ডের মালিকেরই।
(২) এই কার্ড নিলে কিন্তু ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ে না। তা শুধু দু’টি কার্ডে ভাগ হয়ে যায়। ধরা যাক, রামবাবুর কার্ডে শোধ না-করে কেনার সীমা ছিল দু’লক্ষ টাকা। স্ত্রীর নামে অ্যাড-অন কার্ড নেওয়ার মানে এই নয় যে, এখন তা বেড়ে হল চার লক্ষ টাকা। বরং স্ত্রী যদি কার্ডে ৫০ হাজারের বাজার করে ফেলেন, তা হলে তাঁর ভাগে পড়ে থাকবে আর দেড় লক্ষ টাকা।
কো-ব্র্যান্ডেড: অনেক সময়ে কোনও কর্পোরেট কিংবা দাতব্য সংস্থার সঙ্গে জোট বেঁধে বিশেষ কার্ড আনতে পারে ব্যাঙ্ক। সাধারণত এই কার্ড ব্যবহার করলে বিভিন্ন রকম পয়েন্ট পাওয়া যায়। বাড়তি সুবিধা মেলে জোট বাঁধা সংস্থার পণ্য বা পরিষেবা কিনলেও। তবে এ জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশ মেনে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কটিকে।
কর্পোরেট ক্রেডিট কার্ড: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্কের বিভিন্ন কর্পোরেট গ্রাহক থাকে। যেমন ধরা যাক, ‘ক’ সংস্থার কর্মীদের বেতন হয় ‘খ’ ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে (স্যালারি অ্যাকাউন্ট)। এই সমস্ত ক্ষেত্রে অনেক সময়েই ‘ক’-এর কর্মীদের কার্ড দেয় ‘খ’। এটিই কর্পোরেট ক্রেডিট কার্ড নামে পরিচিত।
এর বাইরেও বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড থাকতে পারে। তবে উপরের নামগুলিই বেশি শুনি আমরা।

দায় কার উপর?
• কোনও কারণে গ্রাহকের মৃত্যু হলে, তাঁর ঋণের দায় কারও উপর বর্তাবে কি না (কিংবা কার উপর বর্তাবে), তা কিন্তু শুরুর নথিতেই স্পষ্ট লেখা থাকে। তাই গোড়াতেই তা পড়ে দেখুন।
• মনে রাখবেন, সেখানে দায় অন্য কারও কাঁধে যাওয়ার কথা থাকলে, তবেই তা বর্তাবে। নইলে নয়।

কার্ডে বিমা
• অনেক সময় গ্রাহকদের বিমার সুবিধা দেয় ব্যাঙ্ক। তাই কার্ড হাতে পাওয়ার সময় দেখুন, তা পাচ্ছেন কি না।
• তেমন সুবিধা থাকলে, নমিনির নাম এবং তাঁর সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য (ঠিকানা, ই-মেল, যোগাযোগের নম্বর ইত্যাদি) ব্যাঙ্কের কাছে জমা দিন।
• যে-বিমা সংস্থার কভারেজে আপনি রয়েছেন, তার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর চেয়ে নিতে ভুলবেন না।

ভার্চুয়াল কার্ড
• অনলাইনে কার্ড ব্যবহারের অন্যতম জনপ্রিয় এবং সুরক্ষিত পদ্ধতি।
• ধরুন, কার্ডে ঋণের ঊর্ধ্বসীমা এক লক্ষ টাকা। কিন্তু কিনবেন ১০ হাজার টাকার জিনিস। সুতরাং পুরো কার্ড ব্যবহারের দরকারই নেই। এই সমস্ত ক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো অঙ্কের (এ ক্ষেত্রে হয়তো ১১ হাজার টাকা) ভার্চুয়াল কার্ড তৈরি করতে পারেন।
• ব্যাঙ্কের সাইটে যান। লগ-ইন করে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য (নম্বর, এক্সপায়ারি ডেট ইত্যাদি) দিন। জানান, কত টাকার কার্ড চান। ব্যস, ভার্চুয়াল কার্ড তৈরি।
• এই কার্ডেও আসল কার্ডের মতোই সব তথ্য থাকবে। এবং তা ব্যবহার করা যাবে এক বারই। ফলে জালিয়াতের হাতে পড়লেও তা দ্বিতীয় বার ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সর্বনাশা স্কিমিং-হ্যাকিং
• কার্ড সোয়াইপ করার সময়েই একটি বিশেষ যন্ত্র দিয়ে তা থেকে যাবতীয় তথ্য হাতানোর নাম কার্ড স্কিমিং। এই তথ্য নাগালে পেলে, তা দিয়ে নকল কার্ড তৈরি করে আপনার নামে কেনাকাটা করতে পারে অন্য কেউ। ঠেকানোর উপায় বিল পেমেন্টের সময়ে অন্যের হাতে কার্ড দিলে সজাগ থাকা।
• আর হ্যাকিং হল ইন্টারনেটে সিঁদ কেটে তথ্য চুরি। চোর যে-ভাবে সোনা-দানা চুরি করে, ঠিক তেমনই নেটে ঢুকে অন্যের তথ্য হাতানোর নাম হ্যাকিং। মনে রাখবেন, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ‘হ্যাক’ করে কিন্তু আপনাকে পথে বসাতে পারে অন্য কেউ।
এই সম্ভাবনা এড়াতে ব্যাঙ্কের আসল সাইট ভাল করে চিনুন। নেটে কার্ড ব্যবহারে সাবধানী হন। বিস্তারিত জানতে www.anandabazar.com ওয়েবসাইটে গিয়ে গত ১৮ অক্টোবরের ‘বিষয়-আশয়’ দেখতে পারেন।

কার্ড হারালে কী করব?
• প্রথমেই ব্যাঙ্ককে জানান। যাতে অন্য কেউ তা ব্যবহার করতে না-পারে।
• কোনও জঙ্গি বা নিষিদ্ধ সংগঠন তা ব্যবহার করলে যাতে বিপদে না-পড়েন, সে জন্য এফআইআর করে রাখা ভাল।
• কার্ড ‘ইনশিওর’ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তা হারানোর পর অন্য কেউ ব্যবহার করলেও, তার জন্য আর্থিক খেসারত আপনাকে দিতে হবে না।

নেওয়ার আগে শর্ত দেখুন সাবধানের মার নেই
ক্রেডিট কার্ড ব্যাগে পোরার আগে যাবতীয় শর্ত (টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন্স) অবশ্যই দেখে নেবেন। খুদে হরফের সব লেখা পড়া হয়তো সব সময়ে সম্ভব হয় না। কিন্তু কিছু জিনিস না-দেখলেই নয়। আলাদা ভাবে বড় হরফে (এরিয়েল-১২) গ্রাহকের সামনে তা তুলে ধরার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশও দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। অন্তত সেগুলো দেখতে ভুলবেন না। এর মধ্যে রয়েছে
• কার্ড নেওয়ার প্রাথমিক খরচ (জয়েনিং ফি)।
• গ্রাহক হিসেবে বছরে দেয় টাকা (অ্যানুয়াল মেম্বারশিপ ফি)।
• ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক থেকে নগদ টাকা ধার নিলে দেয় অর্থ (ক্যাশ অ্যাডভান্স ফি)।
• বিভিন্ন কেনাকাটায় সার্ভিস চার্জ।
• টাকা মেটানোর সুদমুক্ত মেয়াদ। অর্থাত্‌, কার্ডে কেনাকাটার পর কত দিনের মধ্যে ধার মিটিয়ে দিলে তার জন্য সুদ গুনতে হবে না।
• মাসে এবং বছরে দেয় সুদের হার।
• সময়ে ধার শোধ করতে না-পারলে জরিমানার অঙ্ক।
• কার্ডে কত টাকা পর্যন্ত ধার পেতে পারেন আপনি (ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বা ক্রেডিট লিমিট)।
• নগদে ধার মিলবে সর্বাধিক কত টাকা।
• বিল স্টেটমেন্ট আসবে কত দিন অন্তর? আসবেই বা কী ভাবে? শুধুই ডাকে? না কি চাইলে ই-মেল আর এসএমএসেও তা পাওয়া যাবে?
• দেয় ন্যূনতম অঙ্ক (মিনিমাম অ্যামাউন্ট পেয়েব্‌ল)।
• বিল নিয়ে কোনও সমস্যা হলে, যেতে হবে কার কাছে? সংশ্লিষ্ট অফিসারদের ঠিকানা ও নম্বর।
• ২৪X৭ কল সেন্টারের নম্বর।
• গ্রাহক পরিষেবার (কাস্টমার কেয়ার) টোল-ফ্রি নম্বর।
• যে যে ব্যাঙ্কের কার্ড নিচ্ছেন, তাদের পুরো ঠিকানা।
• কত দিনের মধ্যে ধার না-মেটালে তা অনাদায়ী (ডিফল্ট) হিসেবে গণ্য হবে। তখন টাকা শোধ করে সমস্যা মিটিয়ে ফেলারই বা উপায় কী?
• কোনও কারণে গ্রাহকের মৃত্যু হলে কিংবা তিনি কর্মক্ষমতাহীন হয়ে পড়লে, ধারের দায় উত্তরাধিকারীর উপর বর্তাবে কি না। সেই টাকা ফেরত পেতে ব্যাঙ্কই বা কী করবে?
• কার্ডের সঙ্গে বিমা আছে কি না। তার জন্য আলাদা প্রিমিয়াম গুনতে হবে কি?
• চাইলে কার্ড সারেন্ডারের (ফেরত দেওয়া) উপায়।
• কার্ড হারালে কী করণীয়? সে ক্ষেত্রেই বা গ্রাহককে দিতে হবে কত টাকা?
• কার্ডের জন্য নিজের সম্পর্কে কোন কোন তথ্য ব্যাঙ্ককে জানাতে বাধ্য আপনি।
• কার্ড হাতে পেলে সবার আগে তার পিছনে সই করুন।

• যেখানে সেখানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন না। বিশেষত অচেনা, অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে।

• রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পর কিংবা কেনাকাটার শেষে দাম মেটাতে কার্ড কারও হাতে দিলে, সতর্ক নজর রাখুন। চোখ বুজে সই না-করে খুঁটিয়ে দেখুন বিল-ও।

• অপরিচিত ব্যক্তিকে কার্ডের নম্বর কিংবা তথ্য কখনওই নয়। কাউকে তা জানাতে এড়িয়ে চলুন ই-মেল কিংবা এসএমএস-ও।

• ক্রেডিট কার্ডের টাকা সুদমুক্ত মেয়াদের মধ্যেই মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। না-হলে অন্তত জমা দিন ন্যূনতম অঙ্ক (মিনিমাম অ্যামাউন্ট)। যাতে নিদেনপক্ষে ‘লেট-ফি’র টাকাটুকু বাঁচে।

• ‘বিল স্টেটমেন্ট’ অবশ্যই খুঁটিয়ে দেখুন। মিলিয়ে নিন, সব কেনাকাটা আপনারই তো?

• ক্রেডিট কার্ডে কখন কত টাকা ‘কাটছে’, তা বুঝতে মোবাইল অ্যালার্টের সুবিধা নিন।

• পকেটে নগদ টাকা থাকলে, কার্ডের ব্যবহার কম করুন।

• সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কেনাকাটা না-করাই ভাল। মনে রাখবেন, আখেরে সেই টাকা কিন্তু আপনাকেই মেটাতে হবে।

• এটিএম থেকে ক্রেডিট কার্ডে টাকা তোলা এড়িয়ে চলুন। কারণ, যে দিন তা তুলবেন, সুদ দিতে হবে সেই মুহূর্ত থেকেই।

• কার্ড হারালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্ককে তা জানাতে ভুলবেন না।
 
ফেলে রেখে কাজ কী?
ক্রেডিট কার্ডের টাকা যে সুদমুক্ত মেয়াদের (কেনাকাটার পর যত দিন পর্যন্ত সুদ গুনতে হয় না) মধ্যেই মিটিয়ে ফেলা ভাল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এ বিষয়ে দু’একটা কথা জেনে রাখা জরুরি
• কার্ডের বিল স্টেটমেন্টে দু’রকম ‘ডিউ’ (পাওনা)-এর উল্লেখ থাকে।
(১) মিনিমাম অ্যামাউন্ট (অন্তত যতটা দিতেই হবে)।
(২) টোটাল (মোট দেয় অঙ্ক)।
• মনে রাখবেন, শুধু ন্যূনতম অঙ্ক মিটিয়ে দিলে জরিমানা বা লেট-ফি দিতে হবে না ঠিকই, কিন্তু বাকি টাকার উপর চড়া হারে সুদ গুনতে হবে। ফলে ঋণের অঙ্ক মোটা হলে, নতুন করে আর কিছু না-কেনা সত্ত্বেও দীর্ঘ দিন তার বোঝা ঘাড়ে চেপে থাকার সম্ভাবনা।
• মনে করুন, ২০১৩ সালের জুনে কার্ডে ৫০ হাজার টাকার জিনিস কেনা হল। বিলে দেখা গেল, ‘মিনিমাম অ্যামাউন্ট ডিউ’ হিসেবে দিতে হবে তার মাত্র ৫% (২৫০০ টাকা)।
গ্রাহক হয়তো ওই ন্যূনতম অঙ্ক মিটিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন। বাকি বকেয়া টাকার উপর চড়া হারে সুদ বসতে থাকল (ধরা যাক, মাসে ৩.১৫%)। সে ক্ষেত্রে সুদে-আসলে যে অর্থ শেষ পর্যন্ত শোধ করতে হবে, তার অঙ্ক বিপুল। প্রতি মাসে ন্যূনতম টাকা মিটিয়ে গেলে পুরো টাকা শোধ হতে লেগে যাবে ১৪৯ মাস! তার মানে, ওই ধারের বোঝা টানতে হবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত!
www.whatsthecost.com নামে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে ঋণের অঙ্ক, সুদের হার এবং মিনিমাম অ্যামাউন্ট দিলে, কোন ঋণ শোধ করতে কত দিন লাগবে, তা স্পষ্ট জানা যাবে। তবে হ্যাঁ, বিদেশি সাইট হওয়ায় সেখানকার সব হিসাব পাউন্ডে। কিন্তু তাতে কোনও অসুবিধা নেই। কারণ, পাউন্ড তো এ ক্ষেত্রে একটা চিহ্ন মাত্র। তাই ধার শোধে কত সময় লাগবে, সেই অঙ্কের উত্তর পাউন্ডে যা হবে, টাকাতেও তাই।
• সুতরাং, পারলে সুদমুক্ত মেয়াদেই পুরো ধার মিটিয়ে ফেলুন। একান্তই না-পারলে, শোধ করুন যত দ্রুত সম্ভব। শুধু ন্যূনতম অঙ্ক চুকিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়ার কারণ নেই।
 
সমস্যা হলে কার কাছে
অনেক সময়ে গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন, ব্যাঙ্ক তাঁদের এমন কেনাকাটার বিল পাঠিয়েছে, যা তাঁরা করেনইনি। কখনও দেখা যায়, কার্ড দেওয়ার সময়ে যে-প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, পরে রাখা হচ্ছে না তার অনেক কিছুই। এ ধরনের যে কোনও সমস্যা হলে
• প্রথমে ব্যাঙ্ককে চিঠি লিখুন (ই মেল-ও করতে পারেন)। সমস্যার কথা বিস্তারিত জানান। সম্ভব হলে জুড়ে দিন উপযুক্ত প্রমাণও।
• এক-দু’মাসের মধ্যে ব্যাঙ্কের তরফ থেকে উত্তর না-পেলে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিযুক্ত ব্যাঙ্কিং লোকপালের (ওম্বাড্সম্যান) সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
• অভিযোগ জানানোর ঠিকানা—
ব্যাঙ্কিং লোকপালের দফতর
প্রযত্নে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ভবন)
১৫, নেতাজি সুভাষ রোড
কলকাতা- ৭০০০০১
ফোন নম্বর: (০৩৩)-২২৩০ ৬২২২/ ৫৫৮০/ ৪৯৮২
ই-মেল: bokolkata@rbi.org.in


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.