পাভলভ
‘অখাদ্য’ বর্জন করে কোমর বাঁধলেন রোগীরা
পোকা ধরা চালের ভাত, জলের মতো ডাল, মশলা ছাড়া আধসেদ্ধ সব্জি। মাঝেমধ্যে মাছ থাকে ঠিকই, কিন্তু তা-ও ছাল আর আঁশে ভরা। মুরগির মাংস যা দেওয়া হয়, তাতে রক্ত লেগে থাকে। রক্ত মোছার পরে যেটুকু পড়ে থাকে, তাতে ছালের অংশই বেশি। ডিমও বেশির ভাগ দিনই থাকে পচা। এমনকী পানীয় জলও পাওয়া যায় না সব সময়ে। বলা হয়, জল ধরে রাখার জায়গা নেই।
অভিযোগ, এ ভাবেই চলছে পাভলভ মানসিক হাসপাতাল। দিনের পর দিন বিষয়টির প্রতিকার না হওয়ায় এ বার রোগীরা নিজেরাই অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন। কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁদের প্রশ্ন, “রাস্তার কুকুরকে নয়, মানুষকে খেতে দিচ্ছেন আপনারা। এটা কেন সব সময়ে ভুলে যান?” সাত দিনের মধ্যে দু’দিন এই প্রশ্ন তুলে খাবার বয়কটও করেছেন তাঁরা। হাসপাতালের সুপারের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁরা বলেছেন, ডাল-আলুসেদ্ধ দিয়ে ভাত খেতেও তাঁরা তৈরি। শুধু তার মানটা যেন ভাল হয়। মাছ-ডিম দিলে অন্তত মাছের আঁশগুলো যেন ঠিকমতো ছাড়ানো হয়, আর ডিমটা যেন পচা না হয়। এ ছাড়া, জল ধরে রাখার জন্য যেন কয়েকটা ড্রাম কেনা হয়। এই দাবিগুলি পূরণ না হলে আমরণ অনশনের হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা।
তবে পাভলভের সুপার রাঘবেশ মজুমদারের দাবি, “খাবার নিয়ে সমস্যা রয়েছে ঠিকই, কিন্তু মাস কয়েক হল খাবারের টাকা বাড়ার পরে খানিকটা উন্নতি হয়েছে। চেষ্টা করছি যাতে মান আরও ভাল হয়। তবে খাবার একেবারে মুখে তোলার অযোগ্য, তা বলা যাবে না। আমরা তো নিয়মিত পরখ করি।”
অন্য দিকে, পাভলভের রোগীদের অধিকার নিয়ে লড়ছে যে সংগঠন, তাদের তরফে অদিতি বসুর বক্তব্য, “ওই খাবার দিনের পর দিন মুখে তোলা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। রোগীরা প্রয়োজনে ডাল, আলুসেদ্ধ আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খেতেও রাজি। কিন্তু সেটুকু যেন যথাযথ মানের এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়।”
মঙ্গলবার ওই সংগঠনের মধ্যস্থতায় সরাসরি স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন রোগীরা। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বাস্থ্য ভবন থেকে ওই হাসপাতালে প্রতিনিধি পাঠানো হয়। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বৈঠকও হয়েছে। দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত হবে।”
সরকারি হাসপাতালের পথ্য নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। দিনের পর দিন ট্যালট্যালে ডাল আর স্বাদ-গন্ধহীন ঘ্যাঁটই পাতে পড়ে রোগীদের। বারবার বলা হলে খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে আলোচনায় বসেন কর্তৃপক্ষ। কিছুদিনের জন্য বদলায় পরিস্থিতি। তার পরে ফের যে কে সেই! কিন্তু মানসিক হাসপাতালের সমস্যাটা অন্যত্র। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই জানাচ্ছেন, মানসিক রোগীদের বক্তব্যকে আমলই দেওয়া হয় না। পাভলভের এক চিকিৎসকের কথায়, “পাগলকে যা দেওয়া হবে, তা-ই খাবে, এই মানসিকতা নিয়ে যদি কোনও কাজ করা হয়, তা হলে তার চেহারাটা এমনই দাঁড়াবে।”
কেন পাভলভে খাবারের এমন দুরবস্থা? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, রোগী প্রতি খাবারের জন্য ৬০ টাকা বরাদ্দ। হাসপাতালে থাকার কথা ২৫০ রোগী। কিন্তু থাকেন প্রায় ১০০ জন বেশি। যেমন এই মুহূর্তে রয়েছেন ৪০৪ জন। তাই মানের সঙ্গে আপোস করা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন সরবরাহকারী সংস্থার কর্মীদের একটা অংশও।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.