ডিসচার্জ নোটে ‘ভুল’ করে ক্যানসার লিখল হাসপাতাল
হাসপাতালের দুই ডিসচার্জ নোট।
জন্ডিসে আক্রান্ত ২০ বছরের ছেলেকে ই এম বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন উত্তর কলকাতার বাসিন্দা অরুণ দাস। হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময়ে ‘ডিসচার্জ সামারি’ দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান তিনি। সেখানে স্পষ্টই লেখা হয়েছে, তাঁর ছেলের গলব্লাডার ক্যানসার। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় গোটা দিনটা কাটানোর পরে অন্য এক চিকিৎসকের কাছে ছেলেকে নিয়ে যান অরুণবাবু। সমস্ত রিপোর্ট দেখে এ বার সেই চিকিৎসকের অবাক হওয়ার পালা! ক্যানসারের কোনও লক্ষণই তো কোথাও নেই। তা হলে?
বিভ্রান্ত অরুণবাবু ফের ছোটেন ওই বেসরকারি হাসপাতালে। এ বার তাঁর সম্বল দ্বিতীয় চিকিৎসকের আশ্বাসটুকু। বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা এ বার জানান, আগের বার তাঁদের টাইপে ভুল হয়ে গিয়েছিল! ক্যানসার (প্যাপিলারি কার্সিনোমা) নয়, রোগীর গলব্লাডার আংশিক সঙ্কুচিত হয়েছে জানিয়ে নতুন করে একটি ‘ডিসচার্জ সামারি’ও দেন।
হতভম্ব দাস পরিবার বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি কসবা থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। দ্বারস্থ হয়েছেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ও রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলেরও। তাঁদের বক্তব্য, ক্যানসারের মতো একটি মারণ রোগের বিষয়ে লেখার সময়ে কেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকেরা আরও যত্নবান হলেন না? ওই ভুল তথ্য জানার পরে তাঁদের পরিবার যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে কাটিয়েছে, তার উপশম কী ভাবে হবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। হাসপাতালের সিইও স্বরাজব্রত পুরকায়স্থ বলেন, “ভুলটা ভুলই। সেটা আমরা মেনে নিচ্ছি। যিনি টাইপ করেছিলেন, তাঁর অসতর্কতায় এটা ঘটেছে। আমরা ওই কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। যে রেসিডেন্ট মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ওই ডিসচার্জ সামারিতে সই করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, ভুল ধরা পড়া আর তার পরে তা সংশোধনের মধ্যেই কি বিষয়টি শেষ হয়ে যাচ্ছে? যদি সংশ্লিষ্ট রোগীর পরিবার অন্য কোনও চিকিৎসকের কাছে না যেতেন, তা হলে কী হতে পারত? এমন ঘটনা তো অন্য হাসপাতালেও ইতিপূর্বে ঘটেছে। কোনও রোগীর সম্পর্কে নিদান হাঁকার আগে বেসরকারি হাসপাতালগুলির তরফে কী ধরনের সতর্কতা থাকা উচিত?
রোগী-স্বার্থ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠনের তরফে জহর সরকার বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালগুলির গয়ংগচ্ছ মনোভাব কোথায় পৌঁছেছে, এই ঘটনা থেকে সেটাই প্রমাণিত হয়। রোগীর হাতে এই ধরনের কাগজপত্র তুলে দেওয়ার আগে কোনও চেকিং-এরই ব্যবস্থা নেই এই সব জায়গায়।”
বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া এ কথা মানতে চায়নি। সংগঠনের সভাপতি প্রদীপ টন্ডন বলেন, “যথেষ্ট কড়া নিয়ম আছে, সেটা মেনে চললে ভুল হওয়ার কথা নয়।” কী নিয়ম? তিনি বলেন, “চিকিৎসকের হাতে লেখা ডিসচার্জ সামারি হাসপাতালের এক জন দায়িত্ববান কর্মীর টাইপ করার কথা। তার পরে মূল লেখার সঙ্গে ওই টাইপ করা অংশটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা তাঁর অনুপস্থিতিতে আরএমও মিলিয়ে দেখবেন। তার পরে তা রোগীর পরিবারের হাতে দেওয়া হবে। আদর্শ হল, হাতে লেখা কপি এবং টাইপ করা কপি দু’টিই রোগীর পরিবারকে দেওয়া। ফটোকপি থাকবে হাসপাতালের ফাইলে।”
ইদানীং ক্রেতা সুরক্ষা দফতরেও এই ধরনের অভিযোগ আকছার আসছে বলে আদালত সূত্রের খবর। আইনজীবী প্রবীর বসু বলেন, “সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দায়িত্ব এখানে সবচেয়ে বেশি। জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা মিশনও বার বার সেই কথাই বলে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.