বিনোদন
স্মৃতি এবং সত্তা নিয়ে ঋতু-সন্ধ্যা
য়েক বছর আগে ঋতুপর্ণের একটি ছবিতে তাঁর লেখা গানই মূল সুরটা বেঁধে দিল।
‘খেলা খেলা দিয়ে শুরু, খেলতে খেলতে শেষ
কেউ বলেছিল ছি ছি, কেউ বলেছিল বেশ!’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নজরুল মঞ্চে ঋতুপর্ণ ঘোষের স্মরণসভায় এই গানটিই তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনের উদ্যাপন হয়ে উঠল। ব্যক্তিগত জীবনে বারবার রহস্য ও বিতর্কের কিনার ছুঁয়ে যাওয়া চলচ্চিত্রকারের স্মরণ-অনুষ্ঠান ঠিক বাঁধা গতে হাঁটল না। সচরাচর যা হয়ে থাকে শোকোচ্ছ্বাস, প্রয়াত শিল্পীর সৃষ্টির প্রশংসার বাইরে তাঁর নিজেকে বদলানোর সাহসটাকেও এ দিন বাংলার সংস্কৃতি-জগত কুর্নিশ জানাল। “ঋতুপর্ণ যে ঠিক ‘তথাকথিত পুরুষ’ নয়, এটা বুঝতে আমার সময় লেগেছিল।”—বললেন বন্ধু অপর্ণা সেন। তাঁর কথায়, “ভাবতে অবাক লাগে, জিন্স-পরা কোঁকড়া চুলের ছেলেটা কী ভাবে স্টাইল আইকন হয়ে উঠল। নিজের আঁতুড়ঘরে নিজেকে ক্রমাগত বদলেছে ঋতু। সেটাই আমাদের সেলিব্রেট করার কথা।”
...তিনি মেলালেন
ঋতুপর্ণের প্রিয় জুঁই ফুলের মালা তাঁর ছবিতে পরিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, পাশে প্রসেনজিৎ। মঙ্গলবার, নজরুল মঞ্চের স্মরণসভায়। —নিজস্ব চিত্র
ব্যক্তিগত জীবনে বয়সের ভেদ ভুলে ঋতুপর্ণের ‘তুই’ সম্বোধন বহু বার উপহাসের লক্ষ্য হয়েছে। সুচিত্রা ভট্টাচার্য এ দিন প্রথম দেখা, প্রথম আলাপেই তাঁর বাড়ি বয়ে ঋতুপর্ণের এই ‘তুই’ ডাকে আপন করে নেওয়ার কথা বললেন। “ঋতু প্রথম বার আমার বাড়ি এসে প্রথম কথাটাই বলল, সুচিত্রাদি তোর ‘দহন’ আমি নিলাম।’’ ছবিতে তাঁর অভিনেতা-অভিনেত্রী-কলাকুশলী-সহকারীরা অনেকেই বারবার ‘ঋতুদা’র ‘আদর নিস্’ এসএমএস-টা আর আসবে না বলে বেদনাহত হলেন।
কিন্তু এই নরম মেয়েলি ঋতুপর্ণ যে কতটা সাহসী, তা উঠে এল যৌন সংখ্যালঘু সমাজের মানুষ অনিন্দ্য হালদারের কথায়, “ও আমাদের সবার মুখ। এখন তো আমাদেরও বলা হয় ঋতুপর্ণ। ঋতুদা আমার মতো অনেকের কষ্টের আশ্রয় হয়ে উঠেছিল।” নারী চরিত্রের শেষতম পুরুষ অভিনেতা চপল ভাদুড়ীও (একটি ছবিতে ঋতুপর্ণের সহ-শিল্পী) ‘ঋতুবাবু’র সাহসে মুগ্ধ। এমনকী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও ঋতুর সাহসের প্রশংসা করে বলেন, “কাউকে খুশি করার জন্য নিজের মত থেকে, নিজের পথ থেকে ও সরে আসেনি।”
সমাজের মূলধারা থেকে প্রান্তিক-গোষ্ঠী, সিনেমা, সাহিত্য, বিজ্ঞাপন, সঙ্গীত-জগতের নানা রঙের মানুষকে মিলিয়ে দেওয়াই শুধু নয়, ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাসের অবস্থান থেকে কার্যত ভিন্ন মেরুর দু’জনকেও মিলিয়ে দিলেন ঋতুপর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ বার কোনও অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল প্রায় এক বছর আগে। উত্তমকুমারের তিরোধান-দিবসে মহানায়ক-সম্মান প্রদানের আসরে। বঙ্গ-বিভূষণের জন্য এ বার সৌমিত্রর কথা ভাবা হলেও তাঁর শীতল প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টি এগোয়নি। এ দিন কিন্তু দু’জনেই একসঙ্গে মঞ্চে উঠলেন। ‘আপনজন’ ঋতু-র ছবিতে দু’জনেই জুঁই ফুল ছড়িয়ে দিলেন। দীর্ঘক্ষণ পাশাপাশি বসেই অনুষ্ঠান দেখেন মমতা ও সৌমিত্র। মুখ্যমন্ত্রীর নতুন কবিতার বই ‘ঋতুরাজ’ এ দিন আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করলেন ঋতুপর্ণের সহচর বিশু, দিলীপ ও গোবিন্দ। বইটি ঋতুপর্ণকে উৎসর্গীকৃত। প্রথম কবিতাটি ঋতুকে নিয়েই লিখেছেন মমতা। ঋতুপর্ণের বাড়িতে ছড়িয়ে থাকা তাঁর আঁকা ছবি, লেখার খসড়া ও বই সংরক্ষণে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানালেন অপর্ণা। মুখ্যমন্ত্রীর তরফেও তখনই শিল্পীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে এগোনো হবে বলে জানানো হয়।
‘ঋতুপণর্র্ এবং’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির আহ্বায়ক ছিলেন ঋতুপর্ণের ভাই ইন্দ্রনীল ঘোষ ও বাংলা চলচ্চিত্র-টিভি পরিবারের সকলে। প্রসেনজিৎ ও তরুণ পরিচালক-অভিনেতাদের এক রঙের পাঞ্জাবি-উত্তরীয় চড়িয়ে সব কিছুর তদারকিতে দেখা গেল। রবীন্দ্রসঙ্গীত, ঋতুপর্ণের নিজের লেখা গান, উষা উত্থুপের কণ্ঠে জন লেননের ‘ইম্যাজিন’, ‘চিত্রাঙ্গদা’র নাচের দৃশ্যও মিলে গেল সন্ধের পরিসরে। হতে চাওয়া ও হয়ে ওঠার সরণিতে ঋতুপর্ণের এই মোহন অভিসারের রেশটুকুই শেষ পর্যন্ত থেকে গেল।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.