ডালমিয়া কঠোর, জমি হারাচ্ছেন শ্রীনি
ক্রিকেট-প্রশাসক হিসেবে নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে যে দিন কঠোর ভূমিকায় আবির্ভূত হলেন জগমোহন ডালমিয়া, সে দিনই বোর্ড রাজনীতিতে আরও জমি হারিয়ে ফেললেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন!
দিল্লি দরবারে সোমবার কলঙ্ক-বিদ্ধ ভারতীয় ক্রিকেটকে পরিষ্কার করতে ‘অপারেশন ক্লিন আপ’ হাজির করে ফেললেন বোর্ডের অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট ডালমিয়া। বেটিংয়ে জড়িয়ে পড়া রাজস্থান রয়্যালস মালিক রাজ কুন্দ্রাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হল। ডালমিয়া আরও মনে করিয়ে দিলেন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ককেও (কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট) ছাড় দেবে না বোর্ড। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চলা পর্যন্ত কিছু বলা হবে না। তার পর বোর্ড ব্যাপারটা নিয়ে বসবে। একই সঙ্গে আবার সেপ্টেম্বরের বোর্ড নির্বাচন ঘিরে অভিনব জোট তৈরির চেষ্টাও শুরু হয়ে গেল। বোর্ডের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট শশাঙ্ক মনোহরকে নিজেদের দলে রাখার কাজ শুরু করে দিল জেটলি-ডালমিয়া গোষ্ঠী।
শ্রীনিবাসন-অপসারণের পরে বিরোধীদের মধ্যেই দু’টো গোষ্ঠীর জন্ম হয় বোর্ডে। এক দিকে ছিলেন পওয়ার-মনোহর-মোদী। উল্টো দিকে শ্রীনিবাসনের সমর্থনপুষ্ট জেটলি-ডালমিয়া গোষ্ঠী। পওয়ার শিবিরে মনোহর নাম লিখিয়েছিলেন কারণ তিনি মনে করেন, শ্রীনিকে হটানোর সেরা সুযোগটা জেটলিরা ফেলে এসেছিলেন চেন্নাইয়ের বৈঠকে। কিন্তু বোর্ড মহলের খবর, নির্বাচনে শ্রীনিকেই আরও চাপে ফেলতে মনোহরকে দলে পাওয়ার চেষ্টায় নেমেছেন জেটলিরা। যাতে অপসারিত বোর্ড প্রেসিডেন্টের মসনদে ফেরার সম্ভাবনা আরও কমে যায়। কেউ কেউ আরও বলাবলি করছেন, ললিত মোদীকেও আর ছাড় দেওয়া হবে না। তাঁরও শাস্তির ব্যবস্থা করবে বোর্ড।
সাংবাদিক বৈঠকে ডালমিয়া। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
পওয়ার বনাম জেটলি-ডালমিয়া দ্বন্দ্ব এ দিন আরও এক বার ধরা পড়েছে বৈঠকে। তবে অদৃশ্য ভাবে, অজয় শিরকের জায়গায় বোর্ডের নতুন কোষাধ্যক্ষ নির্বাচন নিয়ে। জেটলি-ডালমিয়া গোষ্ঠী ওই পদে চাইছিল মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট রবি সবন্তকে (যিনি শেষ পর্যন্ত কোষাধ্যক্ষ হলেন)। তার কারণও আছে। ক্রিকেট মহলের খবর, এমসিএ প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন পওয়ার। যেটা মোটেই পছন্দ ছিল না জেটলি-ডালমিয়া গোষ্ঠীর। প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট আই এস বিন্দ্রা এক বার বৈঠকে চেষ্টা করেছিলেন সবন্তের মনোনয়ন আটকাতে। লাভ হয়নি। ঠিক যেমন বিন্দ্রার লাভ হয়নি প্রশ্ন তুলে যে, ডালমিয়া কী ভাবে এমন জরুরি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকতে পারেন? যেখানে তিনিই যে অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট, সেটা কোথাও পরিষ্কার বলা নেই। সবন্ত সেই তত্ত্ব উড়িয়ে বলে দেন, বোর্ডের পাঁচ সদস্য যদি কোনও এক জনকে ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠক ডাকার প্রস্তাব দেয়, তাতে বোর্ডের আইন ভাঙে না। ডালমিয়া তো সেটাই করেছেন। তা হলে অন্যায়টা কোথায়?
নিজের অন্যায় দেখছেন না নির্বাসিত রাজ কুন্দ্রাও। বোর্ডের সিদ্ধান্ত জানার পরপরই এক কড়া বিবৃতি পেশ করেছেন তিনি। দুপুরে ডালমিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “কুন্দ্রা যতই নিজেকে নির্দোষ বলুন, দিল্লি পুলিশের কাছে বেটিং নিয়ে ওঁর স্বীকারোক্তি আছে। আইপিএল সিইও সুন্দর রামনও কিছু তথ্য পেয়েছেন,” বলে যাওয়ার ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে বিবৃতি দিয়ে বোর্ডকে একহাত নিয়ে রাখলেন কুন্দ্রা। যেখানে লিখলেন, ‘কোনও তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই আমাকে বলির পাঁঠা করা হল...যদি বেটিং করতে চাইতাম তো দেশের বাইরেই সেটা করতাম...এই সিদ্ধান্তের বিচার চাইব আমি...এমন একপেশে সিদ্ধান্তে আমি স্তম্ভিত...।’
গুরুনাথ-কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে যে কমিশন, তারাই কুন্দ্রার ব্যাপারটা দেখবে। কেউ কেউ আবার যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন। বলাবলি করছেন, রাজস্থান মালিক বা তাঁর টিমকে কঠিন শাস্তি দিতে হলে তো সবার আগে চেন্নাই সুপার কিংস নিয়ে চরম সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হয়। সেটা পারবে কমিশন? কবে রিপোর্ট জমা দেবে কমিশন, সেটাও বোর্ড জানায়নি। ডালমিয়া-গোষ্ঠীরই এক জন যেমন সন্দেহ প্রকাশ করলেন কমিশন নিয়ে। সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বলছিলেন, “ব্যক্তিগত মত যদি জানতে চান তা হলে বলব, তদন্ত কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থাকলে ন্যায়বিচার অনেক বেশি আশা করা যেত। বা যেহেতু এটা তদন্তমূলক বিষয়, তাই সিবিআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত অফিসার থাকলেও নিরপেক্ষতা নিয়ে ভাবতে হত না।” পাল্টা হিসেবে কারও আবার মনে হচ্ছে, কমিশনের রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকাও নাকি আদতে রাজনৈতিক চাল। সেপ্টেম্বরের আগে যদি রায় দিয়ে দেয় কমিশন, যদি দেখা যায় গুরুনাথ নির্দোষ, শ্রীনিকে আটকানো যাবে গ্যারান্টি কোথায়?
আর প্রশাসক ডালমিয়া? তাঁকে আজ কতটা অতীতের মতো দুঁদে মনে হল? বোর্ডের গরিষ্ঠ অংশের মত, ডালমিয়া যা করেছেন সেটা এত দিন কেউ করতে পারেনি। শুদ্ধকরণের মরিয়া চেষ্টার একটা ছাপ অন্তত খুঁজে পাওয়া গিয়েছে তাঁর পদক্ষেপে। যেমন চিয়ারলিডারদের নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল। যেমন ম্যাচের শেষের নৈশপার্টি তুলে দেওয়া হল। জাতীয় নির্বাচকদের আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে যুক্ত থাকারও বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হল। বলা হচ্ছে, ডালমিয়া চেয়েছিলেন বিনোদন যথাসম্ভব কমিয়ে আইপিএলকে ক্রিকেটে ফেরাতে। সেই লক্ষ্যে ডালমিয়া ব্যর্থ, কী ভাবে বলা যাবে? কিন্তু কেউ কেউ আবার বলছেন, প্রাথমিক ধাপ হিসেবে একদম ঠিক আছে। তবে সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের মাঠে ঢোকাও নিষিদ্ধ করে দিলে ভাল হত। আরও বলা হচ্ছে, ডালমিয়ার হাতে সব ছাড়া থাকলে তিনি আইপিএলটাই এক বছর বন্ধ রাখতেন। রেখে শুদ্ধকরণে নামতেন। কিন্তু তা সম্ভব হল না। তাই কিছু মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, কঠোর প্রশাসক হিসেবে আবির্ভূত হলেও বোর্ডের নিরঙ্কুশ আধিপত্য ডালমিয়ার এই মুহূর্তে আছে তো?

বোর্ডের এক ডজন দাওয়াই
• নিষিদ্ধ চিয়ারলিডার। বন্ধ ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফের ‘আফটার ম্যাচ’ পার্টি।
• ম্যাচ চলাকালীন ডাগআউট বা ড্রেসিংরুমে টিম মালিকদের প্রবেশ নিষেধ।
• আইপিএল শুরুর আগে সব প্লেয়ার ও সাপোর্ট স্টাফকে নিজেদের মোবাইল নম্বর বোর্ডকে জানাতে হবে।
• টিম হোটেল এবং মাঠে পর্যাপ্ত সংখ্যায় দুর্নীতিদমন শাখার অফিসার।
• ম্যাচের সময় মাঠে মোবাইল ‘জ্যাম’ করে দেওয়া।
• কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচকদের জড়িয়ে থাকা চলবে না।
• কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার সঙ্গে কী আর্থিক লেনদেন হচ্ছে, তা প্রত্যেক প্লেয়ারকে জানাতে হবে।
• প্লেয়ার বা সাপোর্ট স্টাফের সঙ্গে কী ধরনের চুক্তি হচ্ছে, কত টাকা দেওয়া হচ্ছে জানাতে হবে ফ্রাঞ্চাইজিদের।
• ইয়ার ফোন বা মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে পারবে না প্লেয়াররা।
• বোর্ডের কোড অব কন্ডাক্ট অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে প্লেয়ার, সাপোর্ট স্টাফ, ফ্রাঞ্চাইজি মালিকদের।
• আইপিএল নিয়ে নতুন সুপারিশ পেতে অধিনায়কদের মিটিং।
• শীঘ্রই নিরাপত্তা নিয়ে নতুন নীতি।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.