সম্পাদকীয় ১...
গণতান্ত্রিক
গোয়ার পানজিম নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের স্বপ্নপূরণের পথে একটি বড় ধাপের সাক্ষী থাকিল। তাঁহার এই উত্থানে দলের একটি অংশ অসুখী— মোদী প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান ঘোষিত হইবার পরের দিনই লালকৃষ্ণ আডবাণীর রাজনৈতিক সন্ন্যাস ঘোষণার সিদ্ধান্তটি সেই অ-সুখের মোক্ষম প্রমাণ। আডবাণীকে বাদ রাখিলেও যাঁহারা মোদীর এই উত্থানের বিরোধী, তাঁহারা দলে কিছু কম তাৎপর্যপূর্ণ নহেন। দলের বাহিরেও দীর্ঘকালীন জোটসঙ্গী নীতীশ কুমার ঘোষিত ভাবেই মোদীর বিরোধী। ঘরের ও বাহিরের প্রতাপশালী বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও মোদীর এই উত্থান একটি বিশেষ কারণে উল্লেখযোগ্য— দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে। অরুণ জেটলি ব্যতীত বিজেপি-র কোনও বড় মাপের নেতাই নিঃশর্তে মোদীর সমর্থক ছিলেন না। নাগপুরও যে সর্বান্তঃকরণে মোদীর পার্শ্বে দাঁড়াইয়াছিল, তাহাও নহে। তবু মোদীই ছিলেন দলের কর্মীদের পছন্দের মুখ। বস্তুত, সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপি-র সব সমাবেশেই নরেন্দ্র মোদীর সমর্থনে স্লোগানের ঝড় তুলিয়াছেন কর্মীরা। তাঁহারা স্পষ্ট করিয়া দিয়াছেন, তাঁহারা আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মোদীর নেতৃত্বেই লড়িতে চাহেন। মোদীর রাজনীতি এবং শাসনপদ্ধতি লইয়া দলে-বাহিরে যে সংশয় রহিয়াছে, তাহাকে এক কথায় উড়াইয়া দেওয়ার অবকাশ নাই। কিন্তু একই রকম সত্য দলের নিচু মহলে তাঁহার জনপ্রিয়তা। বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে সেই জনপ্রিয়তারই স্বীকৃতি মিলিল। ভারতের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলেই যেখানে সিদ্ধান্ত উপর মহল হইতে চাপাইয়া দেওয়া হয়, সেখানে বিজেপি-র অভ্যন্তরে এই গণতন্ত্রের চর্চা বিশেষ মনোযোগ দাবি করে।
নরেন্দ্র মোদী আজ দলের সর্বভারতীয় মুখের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাইয়াছেন বলিয়াই নহে, তাঁহার রাজনৈতিক উত্থানের গল্পটি এই অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র-চর্চারই উপাখ্যান। তাঁহার পরিচয় ছিল, তিনি বিজেপি-র একটি প্রাদেশিক শাখার প্রধান। তাঁহার শাসনপদ্ধতি মাঝেমধ্যেই গণতন্ত্রের সীমানা লঙ্ঘন করে, এই অভিযোগ নূতন নহে। কিন্তু একই সঙ্গে কর্মীদের নিকট তাঁহার জনপ্রিয়তা বাড়িয়াই চলিয়াছে। কেবল নিজের রাজ্যেই নহে, সর্বভারতে। অন্যান্য প্রাদেশিক নেতাদের সহিত এইখানেই নরেন্দ্র মোদীর পার্থক্য। বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতি সেই ঊর্ধ্বমুখী পারদেরই স্বীকৃতি দিল। এই স্বীকৃতিটির রাজনৈতিক দাম প্রভূত। নেহরু-পরবর্তী কংগ্রেসের ‘সিন্ডিকেট’ ইন্দিরা গাঁধীকে এই স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয় নাই। ইন্দিরাকে নূতন দল গড়িয়া নিজের পক্ষে থাকা জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিতে হইয়াছিল। আবার, ইন্দিরা-সৃষ্ট সেই কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ শাখাই, তিন দশকের ব্যবধানে, আর এক নেত্রীর জনপ্রিয়তাকে তাহার যোগ্য মর্যাদা দিতে অসম্মত হইয়াছিল। তাঁহাকেও নূতন দল গড়িয়া লইতে হইয়াছিল। তাহার পর পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের কী হইল, তাহা সেই নেত্রী যেমন জানেন, তাঁহার আধিপত্য মানিতে অসম্মত কংগ্রেস নেতারাও জানেন। বিজেপি-র জাতীয় কর্মসমিতি সেই ভুল করে নাই। দল যে প্রকৃত প্রস্তাবে কর্মীদেরই সংগঠন, ফলে তাঁহাদের সম্মিলিত ইচ্ছাই যে চরম, তাহা বিস্মৃত না হওয়া বিচক্ষণতার প্রমাণ।
নরেন্দ্র মোদী তাঁহার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের পথের প্রথমার্ধটি পার হইলেন। তিনি রাজ্যের নেতা হইতে দলের সর্বভারতীয় মুখ হইয়াছেন। এর পরের ধাপ দেশের নেতৃত্ব। তিনি বিলক্ষণ জানেন, কাজটি কঠিনতর। তাঁহাকে বৃহত্তর জনসমাজের নিকট গ্রহণযোগ্য হইয়া উঠিতে হইবে। তাঁহার ভাবমূর্তির পরিবর্তন প্রয়োজন। মোদী সে বিষয়ে সচেতন। তিনি ‘লৌহপুরুষ’ হইতে ‘বিকাশপুরুষ’-এ রূপান্তরিত হইতে চাহেন। গুজরাতে উন্নয়নের যে মডেল তিনি গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহা সফল হইয়াছে। ভারতের শিল্পপতিরা তাঁহাকে, সেই সাফল্যের কারণেই, পছন্দ করেন। প্রশ্ন হইল, তিনি তাঁহার ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদী’ পরিচয়কে পিছনে ফেলিয়া সর্বজনগ্রাহ্য হইয়া উঠিতে পারিবেন কি? অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরমত-সহিষ্ণুতা, সুশাসন প্রভৃতি কি তাঁহার নেতৃত্বের সঙ্কেত হইয়া উঠিবে? আগামী দিনে নরেন্দ্র মোদীকে এই প্রশ্নগুলির যথার্থ উত্তর সন্ধান করিতে হইবে। তাহার উপরই তাঁহার স্বপ্নপূরণের সম্ভাবনা নির্ভর করিতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.