মনোনয়ন ফেরাচ্ছি নিজের ইচ্ছায়, বললেন প্রার্থীরা
কোথাও ‘অনুরোধ’, কোথাও বা ঠাণ্ডা চাহনি। সোমবার বহু জায়গাতেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন বহু প্রার্থীই। সোমবার কেতুগ্রামে একের পর এক মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন বিরোধীরা। সঙ্গে ছিলেন শাসকদলের প্রতিনিধিরা। একই চিত্র মঙ্গলকোটেও। কেতুগ্রাম ১ ব্লকে ৮টি পঞ্চায়েতে ১১৭টি আসনের মধ্যে ৫৬টিতেই বিরোধীরা প্রার্র্থী দিতে পারেনি। ২৪টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ৭টি আসনে তৃণমূল আগেই জিতে গিয়েছিল। এ দিন সিপিএমের মোট ৩৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১ জন টিকেছে। কংগ্রেসের ২১ জনের মধ্যে মোটে ৩ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি তরুণ মুখোপাধ্যায় তৃণমূলের ‘ভয়ে’ পঞ্চায়েত সমিতি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এক মাত্র তিনিই সিপিএম-বিরোধী প্রার্থী হিসেবে কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিল। এ বার বরং তৃণমূলের দ্বন্দ্বের জেরে কেতুগ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সঙ্গে নির্দলের লড়াই হচ্ছে।
কেতুগ্রাম ১ ব্লক অফিসের সামনে টহল।—নিজস্ব চিত্র।
এ দিন কেতুগ্রাম ১-এর ব্লক সদর কান্দরায় গিয়ে দেখা যায়, ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেই বিরোধী প্রার্থীরা কেউ মোটরবাইকে, কেউ মোটরভ্যানে করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য ব্লক দফতরে গিয়েছেন। সঙ্গে এলাকার তৃণমূল নেতারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বিকেল থেকেই বিভিন্ন গ্রামে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা মাঠে নেমে পড়েছিলেন। তার জেরে ভোটের আগেই ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি (পালটিয়া, রাজুর, কান্দরা, মোড়গ্রাম-গোপালপুর, পাণ্ডুগ্রাম ও আগড়ডাঙা) তৃণমূলের হাতে আসতে চলেছে। আনখোনাতে ১৫টি আসনের মধ্যে ১১টি আসনে সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হবে। বেরুগ্রামে ১২টি আসনের মধ্যে ৯টি-তে নির্দলের সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হবে। পঞ্চায়েত সমিতিতেও ২৪টির মধ্যে ১৯টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল।
ব্লক অফিসে গিয়ে দেখা গেল, দফতর ঘিরে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শেখ শাহানেওয়াজ ও শাসকদলের কর্মীরা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু পুলিশ। চুপচাপ বিডিও-র ঘরে গিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে ফিরে যাচ্ছেন বিরোধী প্রার্থীরা। ইতিউতি তাকিয়ে কয়েক জন বললেন, “চারিদিক থেকে নাম প্রত্যাহার করার অনুরোধ এলেও তা করিনি। কিন্তু গতকাল তৃণমূলের বেশ কয়েক জন আমার বাড়ি গিয়েছিল। বাড়ির মহিলাদের নাম প্রত্যাহার করার জন্য বলে এসেছে। সে কথা ফেলি কী করে?” সিপিএমের ভাগীরথী অজয় জোনাল কমিটির সদস্য ফারুক মির্জার অভিযোগ, “তৃণমূল নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়ে প্রার্থীদের তুলে এনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছে।” তার পরেই সতর্কতা, “কারও নাম জানতে চাইবেন না। ওঁদের পরিবার নিয়ে থাকতে হবে তো!” কংগ্রেসের এক প্রার্থী বলেন, “তৃণমূলের হাতে-পায়ে ধরেছিলাম, যাতে অন্তত প্রতিটা পঞ্চায়েত থেকে একটা দু’টো আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়। সেটাও হতে দিল না। এই বৃষ্টিতে বাধ্য হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে এসেছি।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “সিপিএমের মতোই সন্ত্রাস চালাচ্ছে তৃণমূল। যে তিন জন প্রার্থী মনোনয়ন তোলেননি, তাঁদের কেউ-কেউ গ্রামছাড়া।” ব্লক প্রশাসন এবং পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, প্রার্থীরা ‘স্বেচ্ছায়’ মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন বলে তাদের জানিয়েছেন। তাঁদের জবানবন্দির ভিডিও রেকর্ডিং করা আছে। বিধায়ক শেখ শাহানেওয়াজও বলেন, “বিরোধীরা ব্লক অফিসে আসতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছিল। কাটোয়া মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ে দেখা গিয়েছে, বিরোধীরা সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। তাই অনেকগুলো পঞ্চায়েত আমাদের হাতে চলে এসেছিল। তাই বিরোধীরা আর প্রার্থী হবে না বলে স্বেচ্ছায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছে।”
বর্ধমান-২ ব্লকের বড়শূল ব্লক অফিসে মনোনয়ন প্রত্যাহার করছিলেন সিপিএমের বামচণ্ডীপুর পঞ্চায়েতের প্রার্থী সান্ত্বনা বাগদি। ফিরে যেতে যেতে বললেন, “খুব চাপ ছিল।” খানিক পরেই বৈকুন্ঠপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রার্থী শেখ আজাদ রহমানকে নিয়ে এলেন তৃণমূলের কিছু লোকজন। মনোনয়ন প্রত্যাহার করে তিনি বলে গেলেন, “মিলেমিশেই তো গ্রামে থাকতে হবে। এক ঘরে হব নাকি?” বর্ধমান-১ ব্লকের কামনাড়া ব্লক অফিসের বাইরে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ফর্ম হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাঘাড়-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী আরতি গিরি। তাঁকে আগলে তৃণমূলের এক নেতা। এগোতেই ধমকে উঠলেন,“এত কথা বলেন কেন?” বর্ধমান (উত্তর) মহকুমাশাসকের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে তখন একটানা কেঁদে চলেছেন আউশগ্রামে ৫৫ নম্বর জেলা পরিষদের কংগ্রেস প্রার্থী তথা কংগ্রেস নেতা তাপস গোস্বামী। ধরা গলায় বললেন, “আর পারলাম না। প্রতি রাতে বাড়ির সামনে ওরা মোটরবাইক নিয়ে পাহারা দিচ্ছিল।” ভাতারে কংগ্রেসের জেলা পরিষদ প্রার্থী মুন্সী আনারুল হককেও জোর করে মনোনয়ন তোলাতে বাধ্য করানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তবে সেই অভিযোগ তারা অস্বীকার করেছে।
কালনা ১ ব্লকেও বেগপুর পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের মধ্যে তিনটিতে তৃণমূল ছাড়া অন্য কেউ প্রার্থী দেয়নি। ৬টি আসনে সিপিএম মনোনয়ন তুলে নেওয়ায় পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলেই যাবে। সুলতানপুর পঞ্চায়েতেও বেশ কিছু মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে সিপিএম। বেগপুরের তৃণমূল নেতা ইনসান মল্লিক অবশ্য বলেন, “ভয়ের কোনও ব্যাপার নেই। সিপিএম আর কংগ্রেস অনেককে ভুল বুঝিয়ে মনোনয়ন জমা করিয়েছিল। তাঁরাই আজ প্রত্যাহার করলেন।” যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন, তাঁদের বেশির ভাগই এড়িয়ে গিয়েছেন। বেগপুরের কর্পূরডাঙা গ্রামের এক যুবক বললেন, “আমাদের বন্ধুবান্ধব সবাই তৃণমূল। আমি ভুল করে কংগ্রেসের হয়ে মনোনয়ন তুলেছিলাম। আজ প্রত্যাহার করে নিলাম।” তৃণমূলের এক নেতা পাশ থেকে বলে উঠলেন, “বলেছিলাম না, কাউকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর করা হয়নি। প্রমাণ হল তো!” তৃণমূল শিবিরে একটা অস্বস্তি ছিল ২৭ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দলের প্রার্থীর সঙ্গে মনোনয়ন জমা দেওয়া পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মহিতোষ তালিতকে নিয়ে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য বারবার মহিতোষবাবুর কাছে ফোন যায়। বিকেল ৩টে নাগাদ তিনি ব্লক অফিসে গিয়ে মনোনয়ন ফিরিয়ে নেন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.