প্রতিবাদে সরব বিরোধীরাও
সাংবাদিক নিগ্রহ নিয়ে কড়া বার্তা মমতার
ব্যারাকপুরে সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেছেন, “ব্যারাকপুরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।”
তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এলাকায় গোলমালের ছবি তুলতে গিয়ে শুক্রবার আক্রান্ত হন ‘এবিপি আনন্দে’র সাংবাদিক আস্তিক চট্টোপাধ্যায় এবং ‘২৪ ঘণ্টা’ চ্যানেলের বরুণ সেনগুপ্ত। তাঁদের দু’জনকেই গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে আস্তিককে কলকাতায় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রায় দেড় বছর আগে যাদবপুরের গাঙ্গুলিবাগানে তৃণমূলের মিছিল থেকে হামলা হয়েছিল সাংবাদিকদের উপর। সে দিনের ঘটনা নিয়ে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, “মিথ্যা কথা। সব সাজানো। খোঁজ নিয়ে দেখেছি কিছু হয়নি।” কিন্তু এ দিন ব্যারাকপুরের ঘটনায় প্রথম থেকেই মুখ্যমন্ত্রী কড়া মনোভাব নিয়েছেন। পুলিশ অভিযুক্তদের খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু করেছে। ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সি। ঘটনার এফআইআর-এর প্রতিলিপি রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের কাছে পাঠিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।
টিটাগড়ে সিটু-র এক সভায় বুদ্ধবাবু বলেন, “গত দু’বছর ধরে রাজ্যে ভয়ঙ্কর অবস্থা চলছে। এখানে এসে শুনছি, ব্যারাকপুরে তৃণমূলের সঙ্গে তৃণমূলের মারামারি হচ্ছে। ওরা যা পারে করুক। কিন্তু দু’জন সাংবাদিককে এমন ভাবে মেরেছে, ওঁরা গুরুতর আহত। এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।” আহতদের দেখতে যেতে পারলে ভাল লাগত বলে সভায় জানান বুদ্ধবাবু। কিন্তু সভার পরে অন্য কাজ থাকায় যেতে পারছেন না, সেটাও জানান তিনি।
শাসক দলের এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব স্থানীয় কোনও গোষ্ঠীর কাজ নয় বলে মন্তব্য করেন সূর্যবাবু। তাঁর অভিযোগ, “একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন তৃণমূল এক বিধায়ত অন্য গোষ্ঠীর মাথায় রাজ্যসভার এক সাংসদ, তৃণমূলের সর্বভারতীয় নেতা। যিনি সব সময় মুখ্যমন্ত্রীর আশপাশে থাকেন।” সূর্যবাবু বলেন, “শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি হচ্ছে আর তার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন এই ঘটনা বন্ধ করতে এবং যথাযথ তদন্তের স্বার্থে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।” বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বাঁকুড়ায় বলেন, “গত ৩ দিনে ১১ জন সংবাদ-প্রতিনিধির উপর হামলা হয়েছে। এর পরিণতি কোথায়? যে পরিস্থিতিতে রাজ্যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তার বিবরণ মানুষের কাছে পৌঁছনো উচিত।”
সাংবাদিকদের উপর এই আক্রমণের কড়া নিন্দা করেছে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআই (এমএল) লিবারেশনও।
কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও ব্যারাকপুরের ঘটনার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে দলের মধ্যে তা থামছে না। এর শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদেরও।” ধৃতরা যেন জামিন না পায়, তার দাবি তোলেন দীপা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ তৃণমূল নিজেদের অপরাধ চেপে রাখতে চেয়েছিল। সাংবাদিকরা তা তুলে ধরছিলেন বলে তাঁদের উপরে আক্রমণ হয়েছে।”
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করছেন, “তৃণমূল কোনও ভাবেই এই কাজে মদত দেয় না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়।” ব্যারাকপুরের ঘটনায় আক্রমণকারীদের হাতে তৃণমূলের পতাকা ছিল। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে পার্থবাবু বলেন, “হাতে তৃণমূলের পতাকা থাকলেই কেউ তৃণমূল হয় নাকি? দলের কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে পার্থক্য আছে।” সরকার আহত সাংবাদিকদের সর্বতো ভাবে সাহায্য করবে বলে জানান তিনি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও বলেন, “জঘন্য ঘটনা। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। যারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, সেই দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে।” গোলমালের ছবি তুলতে গিয়ে ছোটখাটো প্রতিরোধের মুখে পড়ার অভিজ্ঞতা অনেক সাংবাদিকেরই রয়েছে। কিন্তু এতটা মারাত্মক হামলার মুখে পড়তে হবে তা ভাবেননি আস্তিক-বরুণরা।
আস্তিক বলেন, “ভেবেছিলাম, ওরা বড়জোর কাজে বাধা দেবে। কিন্তু খবর করতে গিয়ে নিজেরা খবর হব, তা কখনও ভাবিনি!” কাকতালীয় ভাবে র্যাফের গাড়িটা ব্যারাকপুরের সদরবাজারে এসে না পড়লে কী হতে পারত ভেবে এখনও শিউরে উঠছেন চিকিৎসাধীন বরুণ।
এ দিন নয়াবস্তিতে গোলমালের ছবি তুলতে যেতেই তাঁকে ঘিরে ধরে ৫০-৬০ জন দুষ্কৃতী। বরুণ জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের হাতে ছিল লাঠি-রড-পাইপগান। মাটিতে ফেলে তাকে মারতে মারতেই এক জন চেঁচিয়ে ওঠে, “এটাকে বাঁচিয়ে রেখে কী লাভ, দে ব্যাটাকে পুড়িয়ে!”
একই সময়ে আলিগল মহলে আস্তিককে মোটরবাইক থেকে টেনে নামিয়ে মাটিতে ফেলে মারছিল দুষ্কৃতীরা। ‘এবিপি আনন্দ’ চ্যানেলের লোগো-আঁকা বুমটা আস্তিকের মাথাতেই আছড়ে ভাঙে তারা। এখানেও মুহূর্তে জ্যারিকেন ভর্তি কেরোসিনের জোগান চলে আসে। অভিযোগ, আস্তিককে পুড়িয়ে মারারও হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা। মাটিতে পড়ে-থাকা বরুণের গায়ে কেরোসিন ঢালতে শুরু করেছিল দু’-চার জন। ঘটনাচক্রে সেই সময়েই র‌্যাফের একটি গাড়ি ওই তল্লাট দিয়ে যাচ্ছিল। কিছুটা দূরে বালিঘাটে ভাঙচুর-হাঙ্গামার খবর পেয়ে র‌্যাফ সেখানে যাচ্ছিল।
র‌্যাফের গাড়ি দেখে পালায় দুষ্কৃতীরা। র‌্যাফের কর্মীরাই বরুণকে উদ্ধার করেন। অন্য দিকে কয়েক জন সাংবাদিকের তৎপরতায় উদ্ধার হয় আস্তিক। সাংবাদিকেরাই প্রথমে আস্তিককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তখনও এলাকায় তৃণমূলের পতাকা হাতে দুষ্কৃতীদের জটলা। পরে পুলিশের সাহায্যে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আস্তিক পুলিশকে জানিয়েছেন, সদরবাজারে দুষ্কৃতীদের সবার হাতেই রড-ছুরি বা পাইপগান ছিল। তাঁর কথায়, “ওরা প্রথমেই জিজ্ঞেস করে, কোন চ্যানেল থেকে এসেছিস? এবিপি আনন্দ শুনে সঙ্গে-সঙ্গেই ‘মার শালাকে’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.