রাফার ‘যুদ্ধবিমানে’ বধ জোকার
প্যারিসে ফরাসি ওপেন এরিনা যাঁর নামাঙ্কিত, সেই রোঁলা গারো মাত্র তিরিশ বছর বয়সে মারা যান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন। তরুণ পাইলট। যুদ্ধবিমান চালানোর দক্ষতা থাকলেও ইউরোপে বেশি পরিচিত ছিলেন এয়ার রেস-এর জন্য। ১৯১১-এ প্যারিস থেকে মাদ্রিদ এয়ার রেস রোলাঁ গারোর জন্যই বিখ্যাত।
রিয়াল মাদ্রিদ ভক্ত রাফায়েল নাদালও শুক্রবার রোলাঁ গারোয় যেন যুদ্ধবিমান চালিয়ে শত্রু বধ করলেন! চার ঘণ্টা ৩৭ মিনিটের সর্বোচ্চ মানের টেনিস-যুদ্ধে নোভাক জকোভিচকে ম্যারাথন পাঁচ সেটে নাদাল হারালেন ৬-৪, ৩-৬, ৬-১, ৬-৭ (৩-৭), ৯-৭। না, বিশ্বের দুই সেরা টেনিস তারকার লড়াইয়ে জিতেও নাদাল কিছু পাননি। তাঁর আগের দিনের কথা মতোই রবিবারের ফরাসি ওপেনের ফাইনালে পা রেখেছেন কেবল। কিন্তু সেটা তো শুকনো পরিসংখ্যান বিশ্বের একমাত্র ক্লে কোর্ট মেজরের। টেনিস রোম্যান্টিক বরং অনেক বেশি করে মনে রাখবে ক্লে কোর্ট সম্রাটকে তাঁর টেনিস-বসতবাড়ি থেকেই কেমন আর একটু হলেই উৎখাত করে দিচ্ছিলেন বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকা।
ন’বছর আগে ফরাসি ওপেনে পা রাখা ইস্তক নাদালকে রোলাঁ গারোয় হারাতে পেরেছেন মাত্র এক জন। ২০০৯-এর শেষ ষোলোয় রবিন সোডারলিং। এ দিন জকোভিচ প্রায় ‘সোডারলিং’ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু চটচটে ক্লে কোর্টে নাদাল যেন সত্যিই আরও বড় আঠা। এখান থেকে তাঁকে নড়ানো যেন দুঃসাধ্য। নইলে টাইব্রেকারহীন চূড়ান্ত নির্ণায়ক পঞ্চম সেটের প্রথম গেমেই নাদালের সার্ভিস ব্রেক করেও কী ভাবে জকোভিচের মতো যেন বুকে দু’টো হৃদপিণ্ড লাগিয়ে কোর্টে নামা অফুরান স্ট্যামিনার প্লেয়ার অষ্টম গেমে নিজের সার্ভিস খুইয়ে মোক্ষম সময়ে নাদালকে ম্যাচে অভাবিত ফিরে আসার সুযোগ দেন? টিভি ধারাভাষ্যে বরিস বেকার তখন বলছেন, ‘নাদালকে হিংস্র জন্তুর মতো দেখাচ্ছে! যে তার শিকার কব্জা করে ফেলেছে!”
পরের আটটা গেমে নাদাল আক্ষরিকই নিখুঁত টেনিস খেলেছেন। ষোড়শ গেমে জকোভিচের ফোরহ্যান্ড বেসলাইনের বাইরে পড়ে নাদালকে সার্ভিস গেম ব্রেক, সেট, ম্যাচ সব এনে দিল যখন, জকোভিচের মুখে যেন স্বজন হারানোর শোক! ফরাসি ওপেন চলাকালীন দিনকয়েক আগেই নিজের টেনিস জীবনের প্রথম কোচ এবং তাঁরই কথায় “দ্বিতীয় মা’ জেলেনা জেনচিচের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর জকোভিচের চোখমুখ যেমনটা হয়েছিল! গত বছর ফরাসি ওপেনের ঠিক আগে মন্টেকার্লো মাস্টার্সের সময় জকোভিচ তাঁর প্রিয় দাদুর মৃতুর খবর পেয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন। নিজের শহরের টুর্নামেন্ট থেকে সরে না দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে নাদালের কাছেই হেরে যান। রোলাঁ গারোতেও এ বার জকোভিচের কপালে সেটাই ছিল। তফাতের মধ্যে ম্যাচটা ছিল সেমিফাইনাল।
কিন্তু ‘দ্বিতীয় মা’-র মৃত্যুর পর প্রায় নীরব হয়ে পড়া জকোভিচ এই ম্যাচ নিয়েই প্রথম নিজের নীরবতা ভেঙে ছিলেন। “আমি জেতার কথা ভেবেই নামব নাদালের বিরুদ্ধে,” আগের দিন বলেছিলেন তিনি। লড়াইটাকে মহাকাব্যিক স্তরে তুলে নিয়ে গেলেও সেই শপথ অবশ্য রাখতে পারেননি। তিন-তিন বার নাদাল আর জকোভিচ ‘ব্যাক-টু ব্যাক’ সার্ভিস ভেঙেছেন একে অন্যের। এই পর্যায়ের টেনিসে যা প্রায় বিরল। এক বার তো নাদালকে (চতুর্থ সেটে) তাঁর ম্যাচ উইনিং সার্ভিস গেমে ব্রেক করেন জকোভিচ! নিজে তার আগের গেমেই সার্ভিস হারিয়ে ম্যাচ হারার খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও! প্রথম দিকে যদি ম্যাচটা দু’জনের সর্বোত্তম মানের ব্যাকহ্যান্ড লড়াই হয়ে থাকে, তা হলে শেষের দিকে দুই টেনিস মহারথীই অবিশ্বাস্য সব ফোরহ্যান্ড শট নিয়েছেন। প্রচণ্ড পাওয়ার, ভয়ঙ্কর গতি, অবিশ্বাস্য কোর্ট কভারিং আর উচ্চাঙ্গ স্কিলে ম্যাচটার এমন স্তরে উত্তরণ ঘটেছিল যে, ফাইনালটা নামেই রবিবার হবে। আসল ফাইনাল এ দিনই দেখে ফেলল বিশ্ব টেনিস। অন্য সেমিফাইনালে সঙ্গাকে ৬-১, ৭-৬ (৭-৩), ৬-২ হারিয়ে নাদালের সামনে পড়েছেন তো ডেভিড ফেরার! রবিবার হয়তো চ্যাম্পিয়নের হাতে উসেইন বোল্টের ট্রফি তুলে দেওয়ার মুহূর্তটাই ফাইনালের ইউএসপি!
তৃতীয় সেটে নাদাল যখন জকোভিচকে ৬-১ উড়িয়ে দিলেন, তখনও বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বলেছেন, “জোকারের দম মোটেই শেষ হয়নি। এটা ওর পঞ্চম সেটের জন্য দম জমিয়ে রাখা।” বাস্তবেও ঠিক সেটাই দেখা গিয়েছে। শেষ দু’টো সেটে প্রতিটা পয়েন্টের জন্য দু’জনের মরণপণ লড়াই দেখে বিবিসি টিভিতে জন ম্যাকেনরোর মন্তব্য, “রাফা-জোকার এখন টেনিসের সেই গ্রহে বিরাজ করছে, যে গ্রহে স্বয়ং টেনিসদেবতা বিরাজমান!”
সত্যিই। ফিলিপ শাতিয়ের কোর্টে এ বারের ফরাসি ওপেনের সবচেয়ে উষ্ণ দুপুর (তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি) থেকে মনোরম সন্ধে জুড়ে নাদাল আর জকোভিচের রূপ ধরে টেনিসদেবতাই ছিলেন!

রাফায়েল নাদাল
... (ফরাসিতে) ভীষণ স্পেশ্যাল এই জয়টা আমার কাছে। কারণ নোভাক এক জন গ্রেট চ্যাম্পিয়ন। (এর পর ‘আর পারব না’ বলে ইংরেজিতে) এই কোর্টটা গোটা ট্যুরে আমার সবচেয়ে প্রিয়। কিন্তু নোভাক যে কত বড় ফাইটার আমি জানি। সে কারণে চতুর্থ সেটে আমি যখন ম্যাচ জেতার জন্য সার্ভিস করছি তখন হাওয়ার বিপরীতে সার্ভিস করায় জেতার ব্যাপারে একশো ভাগ নিশ্চিত ছিলাম না। বরং জানতাম সামনে আরও কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে। তবে আমিও লড়াইয়ের জন্য তৈরি ছিলাম। গত বছর অস্ট্রেলীয় ওপেনে এ রকমই মহাকাব্যিক ম্যাচ খেলেছিলাম। সে দিন নোভাক জিতেছিল। আজ ছিল আমার জেতার পালা।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.