নিজের বাড়িতে শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু শিক্ষকের
মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন সোমবার রাত আটটা নাগাদ। বলেন, ভাড়া ফ্ল্যাটে আর থাকতে ভাল লাগছে না। বোনের বিয়ে হলেই ফ্ল্যাট কিনে মাকে নিয়ে আসবেন।
ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই টালিগঞ্জের রিজেন্ট কলোনির ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় মিলল ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী (২৯) নামের ওই স্কুলশিক্ষককে। কয়েকটি বাংলা সিনেমা ও সিরিয়ালেও তিনি অভিনয় করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ জানায়, মৃতের হাত-পা কালো রঙের ফিতে দিয়ে বাঁধা ছিল। মুখে লাগানো ছিল লিউকোপ্লাস্ট। ময়না-তদন্তে জানা গিয়েছে, রাত ১১টা নাগাদ শ্বাসরোধে মৃত্যু হয়েছে ইন্দ্রজিতের। তাঁর দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। পুলিশ জানায়, ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ধস্তাধস্তির চিহ্নও মিলেছে। ল্যাপটপ, মোবাইল, হিরের আংটি, সোনার হার, দুল-সহ আরও বেশ কিছু জিনিস উধাও। পুলিশ জানিয়েছে, ফ্ল্যাটের ভিতরের জিনিস লণ্ডভণ্ড অবস্থায় ছিল। ফ্ল্যাটের দরজাও ছিল খোলা। পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীরা ইন্দ্রজিতের পরিচিত। তাঁর তিন বন্ধুকে জিজ্ঞসাবাদের জন্য আটক করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ। আরও কিছু বন্ধুর খোঁজ চলছে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ইএসডি) সুজয় চন্দ বলেন, “খুনের পিছনে একাধিক ব্যক্তি রয়েছে। তবে খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।” পুলিশ জানায়, ইন্দ্রজিতের বন্ধুদের বয়ানেও অনেক অসঙ্গতি মিলেছে।
ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী
পুলিশ ও স্থানীয়েরা জানান, রায়চকের গোবিন্দপুর কালীচরণ হাইস্কুলের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক ইন্দ্রজিতের বাড়ি সোনারপুরের বারেন্দ্রপাড়ায়। তাঁর বাবা-মা ও বোন ওই বাড়িতে থাকেন। অবিবাহিত ইন্দ্রজিৎ তিন বছর আগে রিজেন্ট কলোনির ওই বহুতলের একতলার ফ্ল্যাটটিতে মাসিক দশ হাজার টাকা ভাড়ায় থাকতে শুরু করেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ওই ফ্ল্যাটে ইন্দ্রজিতের অনেক বন্ধুবান্ধবের যাতায়াত ছিল। অনেক রাত পর্যন্ত ফ্ল্যাটে হুল্লোড় চলত বলেও তাঁরা পুলিশকে জানান।
ইন্দ্রজিতের ফ্ল্যাটে দু’টি ঘর। পুলিশ জেনেছে, ওই রাতে ভিতরের ঘরে তিন বন্ধুকে থাকতে বলে বাইরে থেকে দরজা আটকে দেন ইন্দ্রজিৎ। বাইরের ঘরে ওই শিক্ষকের সঙ্গে অপরিচিত এক যুবক ছিল বলে পুলিশকে জানান তাঁর বন্ধুরা। দেড় ঘণ্টা পরে রাত ১১টা নাগাদ ডাকাডাকি করেও ঘরের বাইরে থেকে ইন্দ্রজিতের সাড়া পাননি ওই তিন জন। ঘর থেকে বেরোতে না পেরে তাঁরা তখন ফোন করে আর এক বন্ধুকে ডাকেন। পুলিশ জানায়, সেই বন্ধু এসে ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখতে পান, একটি ঘরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ইন্দ্রজিৎ। উধাও হয়ে গিয়েছেন ইন্দ্রজিতের সঙ্গে থাকা ‘বন্ধুটি’। এর পরে পাশের বন্ধ ঘর থেকে বার করা হয় বাকি তিন বন্ধুকে।
ইন্দ্রজিতের প্রতিবেশী তনয় দত্ত বলেন, “রাতে আমাকে ওর কয়েক জন বন্ধু ডেকেছিল। আমি এসে দেখি, ঘরের মধ্যে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ইন্দ্রজিৎ। আমি তাঁদের বলি, ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে।” তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এম আর বাঙুর হাসপাতালে। সেখানে ইন্দ্রজিতকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
মঙ্গলবার যাদবপুর থানার সামনে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রজিতের বাবা পার্থ চক্রবর্তী বলেন, “মেধাবী ছাত্র ছিল। স্কুল সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়ে ২০০৯ সালে স্কুলে চাকরি পায়।” ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন ইন্দ্রজিতের মা ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে সোমবার রাতে আটটা নাগাদ শেষ বার কথা হয়েছিল। বন্ধুদের জন্য ও সব সময়ে চিন্তা করত। নিজের জন্য কিছু কিনলে বন্ধুদের জন্যও কিনত।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.