জীবাণুর চোখরাঙানি সর্দি-গর্মির মরসুমে
খনও তীব্র গরমে দরদর করে ঘাম হচ্ছে, আবার কখনও বা মেঘলা আকাশ আর ঠান্ডা হাওয়া জুড়িয়ে দিচ্ছে শরীর। দিন কয়েক আগে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে গরমের অস্বস্তি ভাবটা কেটে গিয়েছিল। সোমবার থেকে ফিরে এসেছে গরম। সঙ্গে অস্বস্তিকর আবহাওয়া। এই আবহাওয়ায় সক্রিয় হচ্ছে রোগজীবাণু। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার চাপ অনেক ক্ষেত্রেই সইতে পারছে না শরীর। কাহিল শরীরকে সহজেই কাবু করে ফেলছে ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া এবং অন্য পরজীবীরা। যার নিট ফল মহানগরীর বিভিন্ন অংশে ডাক্তারের চেম্বার উপচে পড়ছে জ্বর, পেটের রোগ, মূত্রনালির সংক্রমণ এমনকী টাইফয়েডের রোগীও।
শহরের বিভিন্ন চিকিত্‌সক এবং জীবাণু বিশেষজ্ঞেরা এই অবস্থা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে শিশুরা। চিকিত্‌সকেরা জানাচ্ছেন, এখন গ্রীষ্মের ছুটিতেও ছোটদের বাইরে বেরোনোয় কোনও খামতি নেই। খেলাধুলো করে ফিরেই তেষ্টা মেটাতে অনেকে সঙ্গে সঙ্গে জল বা সরবত খাচ্ছে। তার ফল হচ্ছে মারাত্মক। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হয়ে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় অনেকেই খাওয়াদাওয়া বা পোশাকের ব্যাপারে সাবধান থাকছে না। ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মশাবাহিত রোগের প্রকোপ এখন কম। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া সাময়িক স্বস্তি দিলেও তার জায়গা নিয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস। তাদের দাপটে গ্রীষ্মের ছুটিতে অনেকেই কাবু হয়ে শয্যাশায়ী। চিকিত্‌সক সুব্রত মৈত্র বলেন, “ঘন ঘন তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে শরীর ঠিক খাপ খাওয়াতে পারছে না। প্রচণ্ড গরম, ঘামে ভেজা পোশাক পরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো, বাড়ি ফিরে খানিকটা বিশ্রাম না নিয়েই স্নানের জেরেই জ্বর হচ্ছে। সঙ্গে সর্দি-কাশি। বহু ক্ষেত্রেই জ্বরের মেয়াদ তিন-চার দিন পেরিয়ে যাচ্ছে। তখন বাধ্য হয়েই আমরা অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছি।”

কী কী হচ্ছে
• ভাইরাসঘটিত জ্বর
• সর্দি-কাশি
• টাইফয়েড
• পেট খারাপ
• মূত্রনালির সংক্রমণ

কী করবেন
• প্রচুর জল খান
• শরীর ঠান্ডা রাখে এমন খাবার খান
• ঘরের এসি-র তাপমাত্রা নির্দিষ্ট করে রাখুন
• ছাতা, রোদ-চশমা পরে বাইরে বেরোন
• হালকা সুতির পোশাক পরুন

কী করবেন না
• রান্নায় বেশি তেল-মশলা নয়
• রাস্তার জল, কাটা ফল খাবেন না
• ফ্রিজের জল খাবেন না
• ঘামে ভেজা পোশাকে বেশিক্ষণ থাকবেন না
• এসি ঘর থেকে ঘন ঘন বাইরে বেরোবেন না
• বাড়ি ফিরে সঙ্গে সঙ্গে স্নান করবেন না
ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ-এর সহ-অধিকর্তা প্রবাল নিয়োগী বলেন, “তাপমাত্রার এমন পরিবর্তনে ভাইরাসেরা বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠছে। তাতেই জ্বর আর পেটের গোলমাল হচ্ছে। কখনও বা বমি। এই অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্‌সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রচুর জল না খেলে শরীর জলশূন্য হয়ে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে।”
পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, “প্রথমে ভাইরাল সংক্রমণ। পরে ব্যাকটেরিয়ার দাপট। জ্বর তো হচ্ছেই। সঙ্গে মূত্রনালীর সংক্রমণ। জল কম খাওয়ার জন্য বহু ক্ষেত্রে এমন হয়। বহু ক্ষেত্রে এই সংক্রমণগুলি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে পড়ছে। রাস্তায় জল বা কাটা ফল খেয়ে টাইফয়েডও হচ্ছে অনেকের।”
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেজ (নাইসেড)-এর বিজ্ঞানী প্রভাসচন্দ্র সাধুখাঁ বলেন, “জল থেকে ডায়েরিয়াল ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। তাতে গোড়ায় পেট খারাপ এবং তার থেকে জ্বর হচ্ছে। সাধারণ ভাবে অসুখটার মেয়াদ তিন থেকে চার দিন। তবে সেটাই কাবু করে দিচ্ছে পরের বেশ কয়েকটি দিন। তবে সবের মূলেই তাপমাত্রার পরিবর্তন।”
অতএব আগামী বেশ কয়েকটা দিন এই ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার আশা কম।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.