পর্যাপ্ত বাহিনীর নির্দেশ ঘিরে
ফের রাজ্য-কমিশন দ্বন্দ্ব
ঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে রাজ্য সরকারকে পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। কিন্তু প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চের এই অন্তর্বর্তী রায় ঘিরেও সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কমিশনের মতে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে ১৭০ কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনী লাগবে। অন্য দিকে রাজ্য সরকারের দাবি, তারা যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে, সেটাই পর্যাপ্ত। পর্যাপ্ত বাহিনী বলতে কী বোঝানো হয়েছে আজ, মঙ্গলবার তা হাইকোর্টের কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে কমিশন সূত্রের খবর।
ঘটনাচক্রে এ দিনই পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সরকার ও কমিশনের মধ্যে সংঘাতকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট। কেন বার বার কমিশনকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর আরও প্রশ্ন, সরকার যদি আদালতের নির্দেশ না-মানে, তা হলে কমিশন কেন আদালত অবমাননার মামলা করছে না?
রাজ্য সরকারের যথাযথ সহযোগিতা না-পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে সোমবার হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে নালিশ জানায় কমিশন। পাশাপাশি, সরকারের বিরুদ্ধে পাঁচ দফা অভিযোগ এনে পৃথক একটি মামলা দায়ের করে তারা। কমিশনের অভিযোগগুলি হল:
(১) মনোনয়ন পর্বে প্রয়োজনীয় রক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না;
(২) নির্বাচনের সময় রাজ্য কত বাহিনী দিতে পারবে, তা এখনও জানানো হয়নি;
(৩) ৪০০ পর্যবেক্ষকের তালিকা দেওয়ার কথা থাকলেও সব নাম এখনও দেওয়া হয়নি;
(৪) নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এখনও বরাদ্দ হয়নি;
(৫) সংবিধান অনুসারে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হওয়ার পরে পঞ্চায়েত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ভার কমিশনের হাতে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্য তা মানতে চাইছে না।
কমিশনের পাঁচ নালিশ
• মনোনয়ন পর্বে প্রয়োজনীয় রক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না
• নিবার্চনের সময় কত বাহিনী তা জানানো হয়নি
• এখনও ৪০০ পর্যবেক্ষক দিতে পারেনি রাজ্য
• নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ রাজ্য এখনও দেয়নি
• পঞ্চায়েত এলাকায় আইনশৃঙ্খলার ভার পায়নি কমিশন
হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ
• মনোনয়ন পর্বের জন্য পর্যাপ্ত বাহিনী মোতায়েন করতে হবে
• প্রতিটি ইচ্ছুক ব্যক্তি যেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন

মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাদের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজন হয়,
তাদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দরকার নেই।
সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পঞ্চায়েতমন্ত্রী
কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল আদালতে বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় গণ্ডগোল চলছে। অনেকেই মনোনয়ন জমা দিতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় বাহিনী নেই। এই অবস্থায় অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব। মনোনয়ন পর্বে আরও নিরাপত্তা চাই।” কমিশনের বক্তব্য, মনোনয়ন জমা দেওয়ার কেন্দ্রে যথেষ্ট নিরাপত্তা বাহিনী থাকলেও ব্লকে ব্লকে আরও বাহিনী প্রয়োজন। রাজ্য সরকার কত বাহিনী দেবে তা জানতে চেয়ে কমিশন চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সরকার তার উত্তর দেয়নি।
প্রধান বিচারপতি জানতে চান, রাজ্য সরকারকে কমিশন যে চিঠি দিয়েছে, সেখানে কি মনোনয়ন পর্বে কত বাহিনী লাগবে তা বলা হয়েছিল? সমরাদিত্যবাবু বলেন, কমিশন প্রথম থেকেই বলছে মনোনয়ন পর্বে ৩০০ কোম্পানি বাহিনী লাগবে। তবে এখন যে হেতু তিন দফায় নির্বাচন হচ্ছে, তাই ৩৪০টি ব্লকের প্রতিটিতে আধ কোম্পানি হিসেবে মোট ১৭০ কোম্পানি হলেই হয়ে যাবে।
অন্য দিকে রাজ্যের এজি বিমল চট্টোপাধ্যায় বলেন, মনোনয়ন পর্ব নিয়ে কোন সমস্যা নেই। রাজ্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর পরেও যদি আদালত কিছু জানতে চায়, তা হলে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জেনে তিনি জানাবেন।
এর পরেই আদালত বলে, ইচ্ছুক প্রত্যেক ব্যক্তি যাতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন তা সুনিশ্চিত করতে হবে রাজ্যকে। সে জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। যে নির্দেশ ঘিরে ফের রাজ্য-কমিশন টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। কমিশন ১৭০ কোম্পানি সশস্ত্র বাহিনী চাইলেও স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের দাবি, কোর্টের নির্দেশ মেনেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত বলতে কত, তা কোর্ট বলেনি। এখন মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ চলছে দক্ষিণবঙ্গের ১৩টি জেলায়। কোথাও আইনশৃঙ্খলার তেমন অবনতি হয়নি।
এই অবস্থায় আজ, মঙ্গলবার আদালতের কাছে ‘পর্যাপ্ত’ শব্দের ব্যাখ্যা চাইবে কমিশন। যা শুনে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাইকোর্টে যদি বাহিনীর প্রসঙ্গ ওঠে, তা হলে কোথায় কত বাহিনী দেওয়া হবে এবং কোথা থেকে বাহিনী চাওয়া হয়েছে তা জানিয়ে দেবে রাজ্য।” একই সঙ্গে বিরোধীদের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, “মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাদের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রয়োজন হয়, তাদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দরকার নেই।” কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর দল তৃণমূলই তো নিরাপত্তার অভাবে মনোনয়ন জমা দিতে না-পারার অভিযোগ তুলেছিল? সে কথা কবুল করে সুব্রতবাবু জানান, গত বার অর্ধেক আসনে প্রার্থীই দিতে পারেননি তাঁরা।
অবাধ পঞ্চায়েত নির্বাচন করানোর জন্য হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে এ দিন বামফ্রন্টের তরফেও মামলা করা হয়। মনোনয়ন জমা দিতে না-পেরে মামলা করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৪৬ জনও।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.