বুধবার মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলন
মাওবাদী দমনে থানা স্তরে শক্তি বাড়ানোর পরামর্শ দেবে কেন্দ্র
ভীরে যাও। আরও গভীরে যাও।
মাওবাদী দমনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কানে এই সুরটাই গেঁথে দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসি নেতাদের উপরে হামলার পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নতুন করে রাজ্যগুলিকে বোঝাতে চাইছে, মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় আরও গভীরে ঢুকতে হবে। তার জন্য সবার আগে প্রত্যন্ত এলাকার থানাগুলিকে দুর্ভেদ্য ও শক্তিশালী করতে হবে। তার পরে ধীরে ধীরে মহকুমা, জেলা এবং রাজ্য স্তরে মাওবাদী দমনে বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলছিলেন, “ছত্তীসগঢ়ের মতো কয়েকটি রাজ্যে পরিস্থিতিটা এখন এর ঠিক উল্টো। মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, রাজ্য পুলিশের ডিজি, রাজ্যের গোয়েন্দা বাহিনী এখানে এসেই সব শেষ। থানা স্তরে কোনও শক্তিই নেই। বস্তারের অধিকাংশ এলাকায় থানার অফিসাররা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে রয়েছেন।”
বুধবার দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের কেন্দ্রীয় সম্মেলন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য যাবেন না, বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করবেন অমিত মিত্র। সন্ধেয় পশ্চিমবঙ্গ-সহ ন’টি মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশের ডিজিদের সঙ্গে আলাদা করে দু’ঘণ্টার বৈঠক হবে। সেই বৈঠকেই এই ‘গভীরে যাও’-এর সুর বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। একই সঙ্গে তাঁদের উদ্দেশ্য, রাজনৈতিক নেতৃত্বের মনে একটা কাঁপুনি ধরানো। ওই বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হবে যদি মাওবাদীরা নন্দকুমার পটেলদের খুন না করে অপহরণ করত এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের থেকে মুক্তিপণ চাইত তা হলে কী হত? সেক্ষেত্রে সরকারকেই মাওবাদীদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে হত। যদি মাওবাদীরা পটেলের মুক্তির বিনিময়ে তাদের কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতার মুক্তি চাইত, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারকে তা মেনে নিতে হত।
মাওবাদীরা সেটা করল না কেন তবে? গোয়েন্দাদের ধারণা, অপহরণটা মাওবাদীদের পরিকল্পনায় ছিল না অথবা নিচুতলার ক্যাডাররা নেতাদের কথা মতো কাজ করেনি। তারা নন্দকুমার পটেল বা মহেন্দ্র কর্মাকে খুন করেই রাগ মেটাতে চেয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা আরও বলছেন, এমন নয় যে আজ মাওবাদীরা কংগ্রেস নেতাদের উপর হামলা চালিয়েছে বলে কাল বিজেপি-র কেউ তাদের নিশানা হবে না। ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের খতম তালিকায় প্রথম নাম যদি মহেন্দ্র কর্মার হয়ে থাকে, তা হলে দ্বিতীয় নামটা অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহের। সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে, এনআইএ-র রিপোর্টেই মাওবাদীদের ওই হামলার পিছনে কংগ্রেসের একাংশের হাত থাকার কথা বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই খবর নস্যাৎ করে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বলেছেন, “এনআইএ-র কোনও রিপোর্ট আমার হাতে আসেনি। তদন্ত এখনও শেষই হয়নি।”
ছত্তীসগঢ়ের পুনরাবৃত্তি এড়াতেই রাজ্যগুলির সামনে ‘অন্ধ্র মডেল’ তুলে ধরতে চাইছে কেন্দ্র। ‘গভীরে যাও’ নীতি নিয়েই অন্ধ্র সরকার সাফল্য পেয়েছে। সেখানে প্রথমে থানাগুলিকে শক্তিশালী করা হয়েছিল। থানায় তৎপরতা বাড়লে এলাকায় মাওবাদী গতিবিধি সংক্রান্ত খোঁজখবর মেলে। মাওবাদীদের সংগঠনের মধ্যে পুলিশ চরদের অনুপ্রবেশ সম্ভব হয়। মাওবাদীদের গতিবিধি জেনেই অন্ধ্রের ‘গ্রেহাউন্ড’ পুুলিশ বাহিনী অভিযান শুরু করেছিল। সাফল্য আসতে দেরি হয়নি। এ বার তাই অন্ধ্র পুলিশকেই বাকি রাজ্যগুলিকে বিষয়টি বোঝানোর দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কেন্দ্রের তরফে বলা হবে পুলিশের আধুনিকীকরণ, নিরাপত্তা বিষয়ক ব্যয় এবং বিশেষ পরিকাঠামো খাতে কেন্দ্র যে টাকা দেয়, তা মূলত প্রত্যন্ত এলাকায় থানা ও পুলিশবাহিনী মজবুত করার জন্যই দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় সরকারের একাংশের মধ্যেই জোরদার অভিযান চালিয়ে মাওবাদীদের নিকেশ করার দাবি আছে। বুধবারের সম্মেলনে সেই দাবি উঠতে পারে। কিন্তু মাওবাদী দমন বিভাগের কর্তারা তখন যুক্তি দেবেন, চাইলেই সেটা সম্ভব নয়। বস্তার বা দণ্ডকারণ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা, ওড়িশার কোরাপুট-মালকানগিরি ও ঝাড়খণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও ঘাঁটিই নেই। ওই সব এলাকায় ঘাঁটি গাড়তে হলে আরও ২৭ হাজার জওয়ান প্রয়োজন। যা তৈরি হতে আরও দু’তিন বছর সময় লাগবে। এখনই তেড়েফুঁড়ে ‘প্রতিশোধ’ নিতে গেলে জওয়ানদের মৃত্যু হবে। নিরীহ মানুষেরও প্রাণহানি হবে।

পুরনো খবর



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.