রাজবংশী পাড়ায় প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়াদের সাফল্য
কটা লম্ফ ঘণ্টা তিনেকের বেশি জ্বলে না। তাই রাতের পড়া দশটার মধ্যেই সেরে ফেলতে হত প্রাচীন মায়াপুরের প্রকাশ রাজবংশীকে। দিনের বেলা নদীতে মাছ ধরার কাজে বাবাকে সাহায্য করে। তারপর স্কুল। এ ভাবেই নিজের জন্য সময় বার করেছিল ওই রাজবংশী পরিবারের প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী প্রকাশ। ৫৬৬ নম্বর পেয়ে নবদ্বীপ জাতীয় বিদ্যালয় (বালক) থেকে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সে।
প্রকাশের প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৯০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯০, জীবনবিজ্ঞান, ভূগোল আর ইতিহাসে ৮৯। নবদ্বীপের একেবারে উত্তর প্রান্তে গঙ্গার চরে এক চিলতে বাড়িতে থাকেন চরণ এবং অর্চনা রাজবংশী। প্রকাশ তাঁদের একমাত্র সন্তান। পিছিয়ে পড়া রাজবংশীদের বেশ কয়েকটি পরিবার রয়েছে প্রাচীন মায়াপুরের গঙ্গার তীর ঘেঁষা এই অঞ্চলে। এঁদের অধিকাংশেরই পেশা মাছ ধরা। চরণবাবু বলেন, “গঙ্গার যা অবস্থা তাতে বেশিরভাগ দিনই মাছ পাই না। মাছ মিললেও তার দাম যা পাই তাতে সংসার চলে না। একরকম বেকারই বলতে পারেন।” অর্চনাদেবী পরিচারিকার কাজ করেন। তিনি বলেন, “ছেলেকে ওর বাবার সঙ্গে মাছ ধরতেও বেরোতে হয়। তার পর সময় পেলে পড়াশোনা করত। তার মধ্যেই কী করে এত ভাল ফল করল কে জানে!”
প্রকাশ রাজবংশী এবং বিশাখা রাজবংশী।
পরীক্ষায় ভাল ফল চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে প্রকাশ আর তার পরিবারের। অচর্নাদেবী বলেন, “প্রকাশের খুব পড়ার ইচ্ছা। কিন্তু জানি না, পড়াতে পারব কি না।” প্রকাশ বলে, “মায়ের উপর চাপ বাড়ছে। পড়াশোনা চালাতে পারব কি না, কে জানে!” অবশ্য জেদি প্রকাশ পড়ার উপায়ও ভেবেছে। জোর গলায় বলে ওঠে সে, “ভেবেছি পড়ার ফাঁকে যদি কোনও কাজ করতে পারি, তাহলে পড়ার খরচটা হয়তো উঠে যাবে।” কলা নিয়ে পড়ে প্রকাশ শিক্ষক হতে চায়।
প্রকাশের বাড়ি শ্রীচৈতন্য কলোনি থেকে কিছু দূরে নতুন পাড়ায় থাকে বিশাখা রাজবংশী। তার বাবা চন্দন রাজবংশী পেশায় মৎস্যজীবী এবং মা যমুনা রাজবংশী তাঁত শ্রমিক। ৫৮৮ নম্বর পেয়ে জাতীয় বিদ্যালয় (বালিকা) থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছে বিশাখা। ইতিহাসে ৯৬, ভূগোলে আর জীবন বিজ্ঞানে ৯৩, ভৌত বিজ্ঞানে ৯২ পেয়ে অবশ্য খুশি নয় বিপাশা। উচ্চ মাধ্যমিকে আরও ভাল ফলের জন্য তৈরি হতে চায় সে।
অভাবের সংসারে মেয়ের ভাল ফলের সঙ্গে সঙ্গেই জমেছে চিন্তার মেঘ। বিশাখার বাবা বলেন, “একটু খেয়ালি প্রকৃতির মেয়ে বিশাখা। নিয়ম মেনে পড়ত না। কিন্তু দিনে ৭ ঘণ্টা পড়ার অভ্যাস থেকে সরেনি।” বিশাখার মা-ও মেয়েকে অভাবের তোয়াক্কা না করে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষার জন্য তৈরি করতে বদ্ধপরিকর। পুরসভার স্থানীয় কাউন্সিলার সূত্রধর রাজবংশী বলেন, “অভাব সত্ত্বেও রাজবংশী সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্মদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.