বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
দু’দিনের টানা ঝড়বৃষ্টিতে বাদাম, তিল চাষে ক্ষতি
নিম্নচাপের জেরে বৃহস্পতিবারও দিনভর ঝড়বৃষ্টি হল দুই মেদিনীপুরে।
গত দু’দিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জেরে বাড়ি-ঘর ভেঙেছে যেমন, তেমনই চাষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী কাঁথি ও এগরা মহকুমায় ক্ষতিটা বেশি। জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) প্রণবেশ বেরা বলেন, “বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জেলায় গড়ে ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে এগরা, কাঁথি, পাঁশকুড়া, কোলাঘাটে মাঠে জল জমে বাদাম ও তিল চাষের বেশ ক্ষতি হয়েছে।” বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
বৃষ্টির জল জমে খেতেই পচছে বাদাম। তুলে নিতে ব্যস্ত চাষিরা। এগরায় কৌশিক মিশ্রের ছবি।
প্রশাসনের হিসাবে বুধবার ও বৃহস্পতিবার এগরায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় তিনশো মিলিমিটারযা জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় অনেকটাই বেশি। চাষের জমি প্রায় সর্বত্রই চলে গিয়েছে জলের তলায়। মহকুমা কৃষি দফতরের হিসাবে এই মরসুমে এগরা ও পটাশপুরের চারটি ব্লকে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। ফসল তুলতে বাকি ছিল মাত্র দিন পনেরো। হঠাৎ এই নিম্নচাপের জেরে খেতে জল জমে যাওয়ায় বাদাম অঙ্কুরিত হওয়ার বা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মহকুমার পাঁচটি ব্লকের প্রায় আড়াইশো হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়েছে বলে খবর। ঝড়ের দাপটে গাছগুলি নুয়ে জলের তলায় চলে গিয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সব্জি চাষেরও। পাঁশকুড়ার মাইশোরা, গোবিন্দনগর, চৈতন্যপুর ১, ২, হাউর, কেশাপাট, প্রতাপপুর ১, ২ এলাকায় বাদাম চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোলাঘাট, পাঁশকুড়ার বিভিন্ন এলাকায় তিল চাষেও ক্ষতি হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের শুধুমাত্র নারায়ণগড় ব্লকেই প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমির তিল এবং ৬০ হেক্টর জমির বাদাম চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রে খবর। ক্ষতি হয়েছে ফুল চাষেও। জেলা উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের আধিকারিক স্বপনকুমার শিট জানান, ঝড়-বৃষ্টির জেরে জেলার পাঁশকুড়া ও কোলাঘাটে দোপাটি, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোল্ডেন রড প্রভৃতি ফুলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে রজনীগন্ধা, গোল্ডেন রড ফুলের গাছ মাটিতে লেপ্টে গিয়েছে। টানা বৃষ্টির জলে গাঁদা, দোপাটি ফুলের পাঁপড়িতে পচন শুরু হয়েছে।” তবে, সামগ্রিক ভাবে এই বৃষ্টিপাত আগামী মরসুমে ধান চাষে সহায়ক বলে জানিয়েছেন কাঁথি মহকুমার কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা অশোক শিট।
গোদের উপরে বিষফোঁড়া ছিল বিদ্যুৎবিভ্রাট। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে বুধবার রাতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুরের রিজিওনাল ম্যানেজার (ডিস্ট্রিবিউশন) পবিত্র মাইতি বলেন, “টানা ঝড়-বৃষ্টির জেরে জেলার উপকূলবর্তী কাঁথি, রামনগর, ভগবানপুর এলাকায় তার ছিঁড়ে, খুঁটি ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। তমলুক ও হলদিয়া মহকুমায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আংশিক ব্যাহত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। এগরার বিস্তৃত এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।” এগরা মহকুমা বিদ্যুৎ দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সৌম্যজিৎ ভৌমিক জানান, আবহাওয়া ভাল না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া কঠিন। মেরামতির কাজ চলছে।
এ দিকে, মঙ্গলবার রাত থেকেই প্রবল ঝড়-বৃষ্টি চলছে হলদিয়া মহকুমার নয়াচরে। বুধবার রাত থেকে জোয়ারের জল ঢুকে জলমগ্ন হয়েছে চরের অধিকাংশ এলাকা। ভেঙে গিয়েছে প্রায় ৫০টি কাঁচা বাড়ি। প্রবল ঝড়ে উড়ে গিয়েছে বেশ কিছু বাড়ির চাল। বাবলাতলা, খেজুরতলা এলাকায় স্থানীয় প্রায় শ’দেড়েক মানুষ আশ্রয় হারিয়েছেন। হলদিয়ার দুর্গাচক থানা এলাকার ঝিকুরখালিতে বুধবার রাতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মাথার উপরে পড়ায় মৃত্যু হয়েছে এক প্রৌঢ়ার। নাম সুলবজান বিবি (৪০)। মহিষাদল ব্লকের নাটশাল, অমৃতবেড়িয়া ও মায়াচর এলাকায় গত তিন দিন ধরেই জোয়ারের জল ঢুকছে বাঁধ ভেঙে। নদীর পাড় বরাবর ইটভাটাগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
এই দু’দিনই সমুদ্র ছিল উত্তাল। বুধবার উত্তাল সমুদ্রে স্নান করতে নেমে কয়েকজন পযর্টক আহত হন। জোয়ারের ঢেউয়ে সমুদ্রের জল গার্ড ওয়াল টপকে চলে আসে। পুরনো দিঘার ঝিনুক মার্কেট-সহ ফোরসোর রোড এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “ঝড়-বৃষ্টিতে চাষবাসে ক্ষতির পাশাপাশি ঘরবাড়ি ভেঙেছে। মাছ চাষ ও ইটভাটাগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পটাশপুরের কিছু এলাকায় রাস্তা, বাস্তু জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। অবিলম্বে ত্রাণ বিলির জন্য রাজ্য ও জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.