হাতির দলও রুখতে পারেনি স্কুলের পথ
দের কাছে হার মেনেছে ভূগোল।
পরীক্ষার খাতায় নয়, ভূগোলের সঙ্গে ওদের লড়াইটা ছিল দৈনন্দিন জীবনে। কাউকে নদীর চর থেকে দীর্ঘ পথ উজিয়ে পৌঁছতে হত স্কুলে, কেউ আবার জঙ্গল-পথে স্কুলে যাতায়াতের সময় পড়ত হাতির মুখে। রোজকার বাধা-বিপত্তি পেরিয়েই মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে চর, জঙ্গলমহলের মতো রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্রছাত্রীরা। ওদের অনেকেরই প্রাপ্ত নম্বর ৮০ শতাংশের বেশি। এই সব এলাকার স্কুলের ফলও বেশ ভাল।
মালদহের ভূতনির চরে বাড়ি আনন্দ মণ্ডলের। বাবা দিনমজুর। মানিকচক বিদ্যানিকেতনের ছাত্র আনন্দ প্রতিদিন স্কুলে আসত ৭-৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে। তার আগে নদী পেরোত নৌকোয়। তবে ভাল ফল করার জেদ ছিল তার। পরীক্ষার আগে কামালপুরে বন্ধুর বাড়িতে থেকেছে, যাতে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াতটা অন্তত স্বস্তির হয়। জেদের কাছে হার মেনেছে সব প্রতিকূলতা। মাধ্যমিকে আনন্দের প্রাপ্ত নম্বর ৬০৩। ছ’টি বিষয়ে লেটার পেয়েছে সে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জ্যোতিভূষণ পাঠক বলছেন, “আনন্দ যে ভাবে নদী পেরিয়ে হেঁটে প্রতিদিন স্কুল করত তা ভাবাই যায় না। অন্য কেউ হলে পড়াশোনা ছেড়ে দিত।”
জঙ্গলপথে এ ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে স্কুলপড়ুয়ারা। শালবনির ভাদুতলায়। —নিজস্ব চিত্র
মুর্শিদাবাদের চর এলাকার স্কুলগুলির ফলও বেশ ভাল। হিসেব বলছে, ভৌগোলিক অবস্থানের প্রতিকূলতার মধ্যেও চরের স্কুলগুলিতে ৭০ শতাংশ ছেলেমেয়ে মাধ্যমিক পেরিয়েছে। রানিনগরের চর দুর্গাপুর হাইস্কুলে ১২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। সর্বোচ্চ নম্বর ৫৮৬। চর মুন্সিপাড়া হাইস্কুল, ইসলামপুরের চরদৌলতপুর হাইস্কুলের ফলও ভালই। চর দুর্গাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুকূলচন্দ্র সরকারের কথায়, “চুলচেরা হিসেবে এই এলাকার স্কুলগুলোর ফল হয়তো ভাল নয়। কিন্তু হাজারও না পাওয়ার সঙ্গে যুঝে ছেলেমেয়েরা যে রেজাল্ট করেছে, সেটা আমাদের মস্ত পাওয়া।”
নিত্য লড়তে হয়েছে জঙ্গলঘেঁষা গ্রামের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদেরও। ডুয়ার্সের খুট্টিমারি জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের মানসী রায় বা জলদাপাড়া লাগোয়া পূর্ব খয়েরবাড়ি গ্রামের পূর্ণিমা ওঁরাও হামেশাই হাতি দেখে বাড়ির উঠোনে। এ সবের মধ্যে পড়েই খুট্টিমারি হাইস্কুলের মানসী এ বার মাধ্যমিক পাশ করেছে। প্রাপ্ত নম্বর আহামরি নয়। মানসীর কথায়, “হাতির জন্য সন্ধ্যার পরে পড়তেই পারিনি। আরও পড়ার সময় পেলে আরও ভাল ফল করতে পারতাম।”
দক্ষিণবঙ্গের হাতি উপদ্রুত এলাকার ছবিটাও একই। পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রামের তাপস হাটুই স্কুলে যাওয়ার পথে বেশ কয়েকবার হাতির মুখে পড়েছে। তাপসের কথায়, “একবার স্কুল ছুটির পরে ফেরার সময় হাতির পালের সামনে পড়েছিলাম।” বাড়িতেও কম লড়তে হয়নি তাপসকে। শৈশবে মাতৃহারা। বাবা মনোরোগী। ঠাকুরদা-ঠাকুমাই তাপসের ভরসা। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও নয়াগ্রাম বাণী বিদ্যাপীঠের এই ছাত্র মাধ্যমিকে পেয়েছে ৫৬১।
হাতির ভয় নিয়ে বড় হয়েছে বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় ও বড়জোড়ার জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বহু পড়ুয়া। যেমন, গদারডিহি উচ্চবিদ্যালয়ের অঞ্জন ঘোষাল। অঞ্জনের কথায়, “মাধ্যমিকের আগে যখন রাত জেগে পড়তাম, মন বসত না। পুকুরের দিকে তাকালেই মনে হত হাতি এসেছে!” এই ভয় জয় করেই মাধ্যমিকে অঞ্জন পেয়েছে ৬৩৪। স্কুলের মধ্যে সেরা।
জঙ্গলমহলেও এ বার মাধ্যমিকের ফল ভাল। লালগড়, কাঁটাপাহাড়ি, বেলপাহাড়ি, গোয়ালতোড়, শালবনির মতো মাওবাদী উপদ্রুত এলাকার স্কুলগুলিতে ৮০ শতাংশের উপরে অনেকেই পেয়েছে। মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূন পড়িয়াও মানছেন, জঙ্গলমহলে থাকার সূত্রে ছাত্রছাত্রীদের অনেক লড়তে হয়। মাধ্যমিকে ভাল ফল সেই লড়াইয়ের স্বীকৃতি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.