চার মাসে পদত্যাগ চার শিক্ষকের, আসছেন না আরও এক জন
বেতনে আশাভঙ্গ থেকেই
প্রেসিডেন্সি-বিরাগ

শিক্ষক-অধ্যাপকদের বাড়তি আর্থিক সুবিধা দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনালগ্ন থেকেই। কিন্তু কাজে যোগ দেওয়ার চার মাসের মধ্যেই ইস্তফা দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর প্রকাশকুমার মাইতি। প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন না-পাওয়ায় তাঁর এই সিদ্ধান্ত বলে জানান উপাচার্য মালবিকা সরকার। প্রকাশবাবু একাই নন। গত তিন-চার মাসে প্রেসিডেন্সি ছেড়ে গিয়েছেন রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা ও পদার্থবিদ্যার তিন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বিজ্ঞান শাখার অন্য এক শিক্ষকও প্রত্যাশামতো বেতন না-পাওয়ায় এক মাস ক্যাম্পাসে আসছেন না। তিনি অচিরেই প্রকাশবাবুর পথে হাঁটতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, এমন আরও ঘটনা ক্রমশ সামনে আসবে। এই সব ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, বেতনের হার না-বাড়ালে দেশ-বিদেশ থেকে আসা ভাল শিক্ষকদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রাখা কঠিন হবে। সে-ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ব মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার মূল পরিকল্পনাই ব্যাহত হবে বলে কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা।
প্রকাশবাবুর আগে চলে যাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে এক জন এসেছিলেন আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, এক জন আসেন রাজ্যেরই অন্য কলেজ থেকে এবং তৃতীয় জন ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, প্রথম দু’জন ব্যক্তিগত কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা শিক্ষকের সঙ্গে পদ নিয়ে কর্তৃপক্ষের গোলমাল বাধে। তার জেরেই তিনি সরকারি কলেজের চাকরিতে ফিরে গিয়েছেন।
প্রকাশবাবু বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রেসিডেন্সিতে আসেন ৩০ জানুয়ারি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২৭ মে রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্তের কাছে পদত্যাগপত্র দেন তিনি। তাতে ওই শিক্ষক লিখেছেন, ২৭ জুন পর্যন্ত প্রেসিডেন্সিতে কাজ করে তিনি অব্যাহতি চান। বাংলা বিভাগের ১২টি পদের মধ্যে সাতটিতে প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষকেরা কাজ করছেন। অন্যান্য বিভাগেও প্রেসিডেন্সি কলেজের অনেক শিক্ষক এখনও পড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে চান না। তাঁদের অন্য সরকারি কলেজে বদলি করে দেওয়া হবে। তখন ওই সব পদ খালি হয়ে যাবে। তার উপরে নবনিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা চাকরি ছাড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের মান পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা।
কিন্তু প্রকাশবাবু প্রেসিডেন্সির চাকরি ছাড়লেন কেন?
চিঠিতে ওই শিক্ষক লিখেছেন, ব্যক্তিগত কারণে তিনি অব্যাহতি চান। কিন্তু উপাচার্য মঙ্গলবার বলেন, “প্রত্যাশামতো বেতন পাচ্ছেন না বলেই উনি ইস্তফা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। ভাল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আটকে রাখতে হলে সেই অনুসারে বেতনও তো দিতে হবে!” প্রেসিডেন্সির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য গবেষণা খাতে বাড়তি অর্থ মঞ্জুর করেছে সরকার। এর জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর বছরে এক লক্ষ, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বছরে দু’লক্ষ এবং প্রফেসর বছরে তিন লক্ষ টাকা পাবেন। এই অর্থ কেবল বইপত্র বা গবেষণার যন্ত্রপাতি কেনা, গবেষণার কাজ, বিদেশে সেমিনারে যাওয়া ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা যাবে। একে বাড়তি বেতন হিসেবে দেখার অবকাশ নেই।
কিন্তু প্রকাশবাবু একে বেতনের অংশ হিসেবে মনে করার ফলেই ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে মনে করছেন। যার ফলে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে প্রেসিডেন্সিতে আসায় তাঁর মাসে প্রায় ২২ হাজার টাকা বেতন কমে গিয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। যদিও ওই শিক্ষক বলেন, “এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত ১৫৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ৮৫ জন বিদেশ থেকে গবেষণা করেছেন। অনেকেই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, বেশি বেতন দিতে না-পারলে আরও অনেক শিক্ষক প্রকাশবাবুর পথ ধরতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে আগেও রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনে ফের সরকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে বলে জানান উপাচার্য।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য জানান, সরকারের পক্ষে কলকাতা, যাদবপুর-সহ অন্য রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদ দিয়ে প্রেসিডেন্সির জন্য পৃথক বেতন-কাঠামো বা বাড়তি অর্থের সংস্থান করা সম্ভব নয়। বেতন সংক্রান্ত সমস্যার জেরে শিক্ষকেরা চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও তাঁর জানা নেই। কর্তৃপক্ষ আবার প্রেসিডেন্সিকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি জানাতে চান না। মেন্টর গ্রুপও একে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় রেখেই বিশ্ব মানের প্রতিষ্ঠান করে তুলতে চায়। এই অবস্থায় কী করণীয়, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ তা খতিয়ে দেখছেন।

ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু ১ জুন
প্রেসিডেন্সিতে স্নাতক স্তরে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে ১ জুন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ১ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জানানো যাবে। ১৪ থেকে ১৭ জুন হবে প্রবেশিকা পরীক্ষা। ২৯ জুন সেই পরীক্ষার ফল বেরোবে। কাউন্সেলিং এবং ভর্তি হবে ৩ থেকে ৫ জুলাই। ৮ জুলাই ক্লাস শুরু। ভর্তি সংক্রান্ত সবিস্তার তথ্য প্রেসিডেন্সির ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.