বন্ধ হবে না যৌথ মহড়া
জাপানকে কাছে টেনে চিনকে বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং দিল্লি এসে হিমালয়ের দুই প্রান্তের মিলনের কথা বলেছিলেন। আর জাপানে এসে আজ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বললেন দুই সাগরের মিলনের কথা। জাপানের সঙ্গে ভারতের নৌ-মহড়ার প্রয়োজনীয়তা ঘোষণা করে বাহ্যত চিনের কাছেও তিনি আবার একটি কড়া বার্তা দিলেন বলেই মনে করছে সাউথ ব্লক।
টোকিওর বুকে জাপান-ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন ও জাপান ইন্ডিয়া পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগ এবং ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ এক্সচেঞ্জ কাউন্সিলের মঞ্চকে ব্যবহার করে আজ মনমোহন সিংহ বলেন, “ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মিলন ঘটাতে হবে।” ২০০৭ সালের অগস্ট মাসে ভারতের সংসদে দাঁড়িয়ে ঠিক এ কথাই বলেছিলেন জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। আজ মনমোহন কার্যত সেই উদ্ধৃতি ব্যবহার করেই জানালেন, এটি হল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি নতুন ফ্রেমওয়ার্ক। এবং আগামী দিনে রণকৌশলগত শরিকি কূটনীতিকে কার্যকর করতে ভারত বদ্ধপরিকর। আজ দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায় শুরু করারও অঙ্গীকার করেন তিনি। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন যে, ভারত ও জাপান দু’দেশই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা বিশ্বের স্বার্থরক্ষায় গভীর আলোচনা চালু রাখবে। এবং পরে আরও ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পট পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাপান এখন গোটা এশিয়ায় অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছে। বিশ্বের অর্থনীতিকে পথ দেখাতেও চালিকা শক্তির ভূমিকা নিচ্ছে জাপান। ফলে ভবিষ্যতে ভারত ও জাপানের আর্থিক উন্নতির মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া শুধু নয়, গোটা বিশ্বের মানুষই এর সুফল পাবে বলে মনে করছে ভারত।
যদিও এই মুহূর্তে এশিয়া তথা বিশ্বের অর্থনীতিতে সবথেকে বড় শক্তি হিসাবে মাথাচাড়া দিচ্ছে চিন। গোটা এশিয়ায় চিন যে দাদাগারি চালাচ্ছে, তা মোটেই ভাল ভাবে নিচ্ছে না সাউথ ব্লক। বিশেষ করে চিনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি দেশের অর্থনীতির বিকাশে আরও আক্রমণাত্মক নীতি নিয়েছেন। চিনের ওই উত্থান ভাল ভাবে নিচ্ছে না জাপানও। এই পরিস্থিতিতে তাই জাপানকে তুলে ধরে আসলে চিনকেই পরোক্ষে কড়া বার্তা দিতে চাইছে ভারত। সাউথ ব্লকের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ, চিনের ভয়ে জাপানের সঙ্গে বন্ধুত্বের প্রশ্নে ভারত ‘ধীরে চলো’ নীতিতে বিশ্বাসী। কেন না, জাপানের সঙ্গে ভারতের অতিরিক্ত সুসম্পর্ক মোটেই কাম্য নয় চিনের কাছে। চিন তা ভারতকে একাধিক বার বুঝিয়েও দিয়েছে। কিন্তু এ বার লাদাখে চিনা বাহিনীর অনুপ্রবেশের ক্ষত যে ভারত ভুলতে পারেনি, তা আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট। চিনের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর দু’দেশের উত্তেজনা সাময়িক ভাবে প্রশমিত করলেও ভারত যে তাদের চিন নীতিতে কোনও পরিবর্তন আনছে না, তা আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে স্থায়িত্ব ও শান্তিরক্ষার উপর জোর দিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তিরক্ষা কী ভাবে সম্ভব? তার জন্য প্রয়োজন ভারসাম্যের। চিন যদি এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক নীতি নেয়, সে ক্ষেত্রে ভারতকে জাপানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই এগোতে হবে। সম্প্রতি দু’টি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চিনের সঙ্গে জাপানের তীব্র ঝামেলা শুরু হয়েছে। ফিলিপিন্সের সঙ্গেও সংঘাত বেধেছে চিনের। ভিয়েতনাম-ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেও সাম্প্রতিক সময়ে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে চিনের। ফলে শুধু ওই দেশগুলি নয়, দক্ষিণ কোরিয়া ও মায়ানমারের সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক গড়ে চিনকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। প্রসঙ্গত, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান যখন চিন আক্রমণ করেছিল, তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আবের পিতামহ ছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। শিনজো তাঁর শাসনের প্রথম থেকেই চিন বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটতে তৎপর হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আজ মনমোহন সিংহ নিঃশব্দে ‘লুক ইস্ট’ নীতির নাম করে জাপানের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বের ধ্বজা ওড়াতে তৎপর হয়ে পরোক্ষে কড়া বার্তা পৌঁছে দিলেন বেজিং-এ।
আগামিকাল মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে শিনজো আবের। তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে টোকিও শহরে তিনি পদ্মশ্রী পুরস্কার তুলে দেন ভারত বিশেষজ্ঞ জাপানি পণ্ডিত নবরু কারাশিমার হাতে। তিনি টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভারত’ বিষয়ের শিক্ষক। সাউথ ব্লক বলছে, ওই পুরস্কার প্রদানও কূটনীতিরই একটি অঙ্গ। পাশাপাশি আজ নিজের বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, জহওরলাল নেহরুর মতো ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে জাপানের দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন মনমোহন। তাঁর কথায়, “ওই মনীষীরা উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই জাপানের সাফল্যের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে মৈত্রীর হাত বাড়িয়েছিলেন।”
ভারত-জাপান নৌ-মহড়া নিয়ে একাধিক বার আপত্তি জানিয়েছে চিন। বেজিংয়ের যুক্তি, ওই মহড়ার ফলে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। কিন্তু ওই মহড়ার যৌক্তিকতার পক্ষে সওয়াল করে মনমোহন সিংহ এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, আঞ্চলিক তথা বিশ্ব শান্তি ও অগ্রগতির স্বার্থেই আগামী দিনেও মহড়া চালু থাকবে। চিনের দাবি মেনে নিয়ে কোনও ভাবেই যে ওই মহড়া বন্ধ করা হবে না, তা আজ স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন মনমোহন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.