সন্তানের জন্ম দিয়েই সাড় ফিরল নিথর দেহে
মৃত্যুর পরে জন্ম দিলেন সন্তানের। জন্মের পরেই জীবন ফিরে পেলেন মা।
সন্তানের পৃথিবীতে আসার সময় হয়ে গিয়েছিলই। ৩৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এরিকা নাইগ্রেলি যদিও কাজের মধ্যেই ছিলেন। টেক্সাসের বাসিন্দা এরিকা সে দিনও ক্লাসে ইংরেজি পড়াচ্ছিলেন। হঠাৎই জ্ঞান হারান বছর বত্রিশের তরুণী। দু’হাতে টেবিল চেপে ধরার চেষ্টা করেছিলেন অনেক, পারেননি। ভাগ্য প্রসন্ন, তাই পড়ে যাননি তিনি। তার আগেই সহকর্মীরা এসে ধরে ফেলেন।
এরিকার স্বামী ন্যাথানও ওই স্কুলেরই শিক্ষক। কাছেই ছিলেন তিনি। ছুটে আসেন। এরিকার মুখ থেকে তখন ঘরঘর করে আওয়াজ হচ্ছে, গ্যাঁজলা উঠতে শুরু করেছে। ন্যাথান বলেন, “দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখি, মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে ও। মুখ থেকে ফেনা বেরোচ্ছে। তার সঙ্গে একটা বিচ্ছিরি আওয়াজ। আর উপরের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে এরিকা। সে চাউনিতে কোনও ভাষা নেই।” দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য ৯১১-এ ফোন করেন ন্যাথান। “আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা”, আশঙ্কা ও উত্তেজনায় তাঁর গলা তখন থরথর করে কাঁপছে। বললেন, “এখনই অস্ত্রোপচার করতে হবে। ডাক্তাররা অবশ্য তিন সপ্তাহ পরে সময় দিয়েছিলেন।” উল্টো দিক থেকে ভেসে এল, “হে ঈশ্বর!”
অ্যাম্বুল্যান্স আসতে দেরি হয়নি। সঙ্গে সঙ্গেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এরিকাকে। চিকিৎসাও শুরু হয়ে যায় দ্রুত। তবে ভাল খবর দিতে পারলেন না চিকিৎসকরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁরা জানালেন, এরিকার হৃদ্যন্ত্র কাজ করছে না। তাঁর নাড়িও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাচ্চাকে বাঁচাতে হলে, এখনই অস্ত্রোপচার করতে হবে। চিকিৎসার ভাষায় এ হল ‘পোস্টমর্টেম ডেলিভারি’, কারণ এরিকার হৃদযন্ত্র কাজ করছিল না। কার্যত মৃত অবস্থাতেই অস্ত্রোপচার হবে তাঁর।
তা-ই হয়। একটি সুস্থ-সবল শিশুকন্যাকে পৃথিবীর আলো দেখালেন ডাক্তাররা। মিরাকল্ ঘটে যায় ঠিক তার পরেই! এরিকার নিথর দেহে হৃদস্পন্দন ফিরে এল হঠাৎই।
পরের পাঁচটা দিন কোমায় ছিলেন এরিকা। সুস্থ হয়ে ওঠেন ধীরে ধীরে। মেয়ে এলিনার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তার জন্মের প্রায় তিন সপ্তাহ পরে।
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগীর বললেন, “বিভিন্ন কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। গর্ভাবস্থায় নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে ‘একল্যাম্পসিয়া’য় রোগিণী জ্ঞান হারাতে পারেন। খিঁচুনিও শুরু হতে পারে। আবার হঠাৎ করে ব্লাডসুগার কমে গেলেও এ রকম কিছু ঘটতে পারে। তবে এটা মৃত্যু নয়। সাময়িক ভাবে হৃদ্যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। দ্রুত চিকিৎসা শুরু হতেই তাই বেঁচে গিয়েছেন রোগিণী। তা ছাড়া বয়স খানিকটা কম হওয়াতে ওষুধে তাড়াতাড়ি কাজ দিয়েছে। বাচ্চা মায়ের শরীরে যে থলির মধ্যে থাকে, সেই অ্যামনিওটিক স্যাকের রস যদি মায়ের রক্তস্রোতে মিশে যায়, তা হলেও এই একই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।” তিনি আরও জানালেন, নিজের জীবনে এমন অভিজ্ঞতা না হলেও, এ ধরনের ঘটনা শুনেছেন। এ সব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন। ভারতের মতো দেশে সাধারণত এটাই হয় না।
এরিকা অবশ্য এ সবের পিছনের ঈশ্বরের অসীম আশীর্বাদই দেখছেন। সে দিনের ঘটনার পর তিন মাস কেটে গিয়েছে। কাটা কাটা কিছু ছবি ছাড়া মনের কোণে ফিকে হয়ে সবটাই। মা-মেয়ে এখন দিব্য আছে। এ দিন মায়ের কোলে খেলতে দেখা গেল এলিনাকে। মুখে গোলাপি রঙের চুষিকাঠি নিয়ে বড়ই ব্যস্ত সে। রসিকতা করে এরিকা বললেন, “বড় হয়ে কোনও বেগড়বাই করতে পারবে না মেয়ে। কথা না শুনলেই, মনে করিয়ে দেব, কত কষ্ট করে ওকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছি আমি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.