অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-সহ তিন
বাগদার সমবায়ে কৃষিঋণ মকুবের টাকা আত্মসাৎ
য়েকশো চাষির কৃষিঋণ মকুবের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল একটি কৃষি সমবায় সমিতির তিন কর্তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতিও।
উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের ‘আষাঢ়ু লার্জ সাইজড প্রাইমারি কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচারাল ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড’ নামে ওই সমবায় সমিতির সদস্য জয়দেব বৈরাগী বনগাঁ আদালতে এই মর্মে গত ১৮ মে অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে ওই তিন কর্তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে বাগদা থানার পুলিশ। বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে সমবায় দফতরও। এই ঘটনা সামনে আসায় বুধবার সকাল ১১টা থেকে সমবায়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান এলাকার চাষিরা। পথ অবরোধও করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, অবিলম্বে তাঁদের ঋণ মকুব করতে হবে এবং দোষীদের গ্রেফতার করতে হবে।
২০০৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ১৯৯৭-এর ১ এপ্রিল থেকে ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত যে সব চাষি বিভিন্ন প্রাথমিক সমবায় সমিতি এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে সর্বাধিক ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ নিয়েছিলেন, তাঁদের ঋণ মকুব করে দেওয়া হবে। জয়দেববাবুর অভিযোগ, ২০০৮-এ কেন্দ্র কৃষিঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করে। অথচ তার পরেও আষাঢ়ুর ওই সমবায়ের তরফে ৪০০ জন চাষির (যাঁদের ঋণ মকুব হয়েছে) কাছ থেকে ঋণের টাকা শোধ বাবদ ৩৬ লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন ওই তিন কর্তা।
বস্তুত, কৃষিঋণ মকুব বাবদ সারা দেশে কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করেছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ রাজ্যে গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও সমবায় সমিতিগুলির মাধ্যমে মকুব করে দেওয়া ঋণের পরিমাণ অন্তত ৭০০ কোটি টাকা বলে নাবার্ড (ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট) সূত্রের খবর। কৃষি ঋণ মকুবের ক্ষেত্রে বেনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই ক্যাগ তার রিপোর্টে জানিয়েছে। তদন্তে অর্থ মন্ত্রক জেনেছে, বহু ক্ষেত্রেই ভুয়ো চাষির নাম পাঠিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে সমবায় সমিতিগুলি। আবার যাঁদের কৃষিঋণ মকুব হয়েছে, তাঁদের অনেককেই সে কথা জানানো হয়নি। ফলে তাঁরা ঋণ শোধ করে গিয়েছেন। সেই টাকাও আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই দুর্নীতির প্রেক্ষিতে সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও যে সব চাষির কৃষি ঋণ মকুব করা হয়েছিল, তাঁদের প্রত্যেকের সম্পর্কে তথ্য নতুন করে যাচাইয়ের নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রক। এ রাজ্যে সেই দায়িত্ব পেয়েছে নাবার্ড।
বাগদার সমবায় সমিটির যে তিন কর্তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ হয়েছে, তাঁরা হলেন, সমবায়টির ম্যানেজার ক্ষিতিভূষণ মণ্ডল, প্রাক্তন সভাপতি দিলীপকুমার ঘোষ এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবোধ কুমার বিশ্বাস। দিলীপবাবু বাগদা ব্লক তৃণমূলের সভাপতিও। অভিযোগ অস্বীকার করে দিলীপবাবুর দাবি, “গত বছর মার্চে সম্পাদক পদে আমার মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। ব্যক্তি স্বার্থে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ কেউ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”
এই ‘কেউ কেউ’ দলেরই বলে দাবি বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের তরুণ ঘোষের। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দিকে ইঙ্গিত করে তরুণবাবুর বক্তব্য, “কৃষিঋণ মকুবের টাকা আত্মসাতের কোনও সুযোগ নেই। আসলে দিলীপবাবুকে সরিয়ে যাঁরা দলের ব্লক সভাপতি হতে চান, তাঁদেরই কেউ তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।” ক্ষিতিভূষণবাবুও অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ইতিমধ্যেই কৃষিঋণ মকুবের জন্য নতুন একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই জয়দেববাবুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমবায় দফতরের করা তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে এআরসিএসের (সহকারী সমবায় রেজিস্ট্রার) কাছে। তদন্তকারী অফিসার, বাগদা ব্লকের সমবায় পরিদর্শক অশোককুমার বারুই তাঁর রির্পোটে জানিয়েছেন, ঋণ মকুবের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, তা ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এই অবস্থায় নতুন করে অডিটের সুপারিশ করা হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার এআরসিএস মহাদেব বেরা বলেন, “রেজিস্ট্রার অব কো-অপারেটিভের কাছে তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। নির্দেশ পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.