৪০ মিনিটের টর্নেডো, উধাও শহরের রাস্তাও
বির মতো শহরটাকে কোনও দৈত্য যেন দু’হাতে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে।
দৈত্যই বটে। সোমবার বিকেল তিনটে নাগাদ হাতির শুঁড়ের মতো বিশালাকার এক টর্নেডো গুঁড়িয়ে দিয়ে গেল ওকলাহোমা শহরটা। এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ৯ শিশু-সহ ২৪ জন।
আবহাওয়া দফতর সতর্ক করেছিল দুপুর দু’টো চল্লিশ নাগাদ। ১৬ মিনিটের মধ্যেই হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টা। গুমোট কালো অন্ধকার আকাশে বিশাল মেঘের কুণ্ডলী। ব্যাপ্তিতে তিন কিলোমিটারেরও বেশি। ফানেলের মতো দেখতে ঝড়টা পাক খেতে খেতে উঠে যাচ্ছে আকাশে। হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার। নরম্যানের হাওয়া অফিস জানিয়েছে, টর্নেডোর উৎসস্থল ছিল নিউকাস্ল। আশপাশের হাওয়া টেনে নিয়ে আরও শক্তিশালী হতে হতে ঝড়টা এগোতে থাকে মুর অঞ্চলের দিকে। ওকলাহোমার দক্ষিণে এই মুরেই ক্ষতির ছবিটা সব থেকে বেশি খারাপ।
চেনা স্কুলবাড়িটা আর নেই। টর্নেডোয় ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে।
ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে দু’হাতে ছাত্রীকে আঁকড়ে ধরে বেরিয়ে আসছেন শিক্ষক। ছবি: এপি।
সোমবার টনের্ডোর ৪০ মিনিটের যাত্রাপথ ছিল প্রায় ৩২ কিলোমিটার। টর্নেডো কত শক্তিশালী, তা মাপা হয় এনহ্যান্সড ফুজিতা স্কেলে। একে ভাগ করা হয় পাঁচটি মাত্রায়। এফ স্কেল অনুযায়ী কালকের টর্নেডোর মাত্রা ছিল ৪। অর্থাৎ শক্তির বিচারে শীর্ষস্থান থেকে মাত্র এক ধাপ পিছিয়ে ছিল ওকলাহোমার মারণ ঘূর্ণি। পথের সামনে যা পেয়েছে, সব কিছুই স্রেফ উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। দিন শুরুর চনমনে শহরটা নিমেষে যেন যুদ্ধক্ষেত্র।
মুরের ব্লকের পর ব্লক ভেঙে-গুঁড়িয়ে মিশে গিয়েছে মাটির সঙ্গে। চর্তুদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বড় বড় বাড়ির লোহার কাঠামো। কোথাও ধসে পড়েছে দেওয়াল। গাড়িগুলো দেখলে মনে হবে, হাওয়া যেন লোফালুফি খেলেছে তাদের নিয়ে। দলা পাকানো মণ্ডগুলো দেখে ঠাওর করা মুশকিল, ওগুলো খেলনা-গাড়ি নয়। মুরের বাসিন্দা জনৈক থ্রোব্রিজ জানালেন, “আশপাশে আর কিচ্ছু নেই। সামনের রাস্তাটা পর্যন্ত যেন উবে গিয়েছে।”
ঝড় যখন এসেছে, সারা জনসনের ৪ বছরের মেয়ে তখন ছটফট করছে হাঁপানিতে। ওই অবস্থাতেই মেয়েকে নিয়ে সারা ছুটে যান কাছের হাসপাতালটায়। হাসপাতালের সবাই তখন মাটির তলার ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। গায়ের উপরে গদি চাপা দিয়ে কোনও মতে রক্ষা পান মা-মেয়ে দু’জনেই।
টর্নেডোর হাত থেকে অবশ্য বাঁচতে পারেনি মুরের প্লাজা টাওয়ার ও ব্রায়ারউড এলিমেন্টারি স্কুলের বেশ কিছু পড়ুয়া। প্লাজা টাওয়ার স্কুলের পুলে মিলেছে সাত জনের দেহ। নিজের সন্তানকে ফেরত পাওয়ার আশায় ঝড় থামার পর থেকেই স্কুলের বাইরে হন্যে হয়ে ঘুরছেন বাবা-মায়েরা। এখনও অবধি ৯টি শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। স্কুলের তলায় আটকে আছে অনেকেই।
ধ্বংসস্তূপের তলা থেকেই শেষমেষ খোঁজ মিলেছে আদরের পোষ্যর। ওকলাহোমার মুরে। ছবি: রয়টার্স।
চারপাশে হাহাকারের মধ্যেই অবশ্য প্রাণের খোঁজও মিলেছে। টর্নেডোর আছড়ে পড়ার মুহূর্তে বাথরুমে গিয়েছিলেন বারবারা গার্সিয়া। হাতে ধরা ছিল প্রিয় কুকুরটা। মিনিট কয়েক লন্ডভন্ডের পর অক্ষত অবস্থাতেই ভাঙাচোরা বাড়ির তলা থেকে নিজেকে টেনে বার করেন গার্সিয়া। কিন্তু খোঁজ পাচ্ছিলেন না আদরের পোষ্যটির। স্থানীয় টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়েই নজরে আসে, এ রকমই এক ধ্বংসস্তূপের নীচে কুঁকড়ে রয়েছে সে। বাড়ি আর আস্ত নেই, কিন্তু পোষ্যকে পেয়েই এখন বেজায় খুশি বারবারা।
টর্নেডো শেষের পর সোমবার সন্ধে থেকেই লোহার বিম কেটে, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। আহতদের ভিড়ে শহরের হাসপাতালগুলো উপচে পড়ছে। ওকলাহোমার দুটো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩৩ জন। পুলিশ জানিয়েছে, এখনও বহু মানুষ আটকে ভাঙা বাড়িঘরের তলায় আছেন। ফলে আহত বা মৃতের সংখ্যা এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে সংখ্যাটা যে বাড়বে, সেই আশঙ্কাই করছেন তাঁরা।
টর্নেডোর কবলে অবশ্য এর আগেও পড়েছে ওকলাহোমা। ওই একই এলাকায় ১৯৯৯ সালের মে মাসে আছড়ে পড়েছিল এ রকমই এক শক্তিশালী ঘূর্ণি। সে বার প্রাণ গিয়েছিল ৩৬ জনের। ফাঁড়া যে পুরোপুরি কেটে গিয়েছে, সে রকম কোনও আশার খবরও শোনাতে পারেনি নরম্যানের আবহাওয়া দফতর। বরং অধিকর্তা রাসেল শেনিডর জানিয়েছেন, ওই এলাকায় নতুন করে আবার টর্নেডো হতে পারে। দুর্যোগের খবর পাওয়ার পরই ওকলাহোমার গভর্নর মেরি ফালিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সমস্ত রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ওকলাহোমায় আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা ঘোষণা করে তিনি বলেন, উদ্ধারকাজ তাড়াতাড়ি শেষ করাই আপাতত তাঁদের লক্ষ্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.