নজর হাওয়ালা লেনদেনে
সারদার বহু টাকা পাচার বিদেশে, সন্দেহ ইডি-র
ত দিন রাজ্যের নানা প্রান্তে সারদার ব্যবসা ও সম্পত্তির খোঁজ চালিয়েছে পুলিশ। এ বার এই অর্থলগ্নি সংস্থার বিদেশি গতিবিধিতেও নজরদারি শুরু করলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অফিসারেরা। কী ভাবে টাকা লেনদেন হত, সেটাই এখন খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। এবং সেই তদন্তে নজর মূলত হাওয়ালা লেনদনের দিকেই।
কেন? গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সারদার ব্যবসায়িক নথিপত্র ঘেঁটে এখনও কোনও বিদেশি অ্যাকাউন্টের খোঁজ মেলেনি। এবং এখানেই সন্দেহ দানা বেঁধেছে গোয়েন্দাদের। ইডি সূত্রের খবর, সারদা কর্তা সংস্থার প্রচুর টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ। ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার সল্টলেকের এক ব্যবসায়ীকে এই সূত্রে জেরা করেছে পুলিশ। তবে জেরায় তিনি কী বলেছেন, তা এখনই জানাতে নারাজ গোয়েন্দাকর্তারা।
বৃহস্পতিবারই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি) সারদা তদন্তে সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তার পর থেকেই জোর কদমে তদন্তে নেমেছে ইডি। সংস্থা সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতেই বিধাননগরের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় ‘প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’-এ একটি মামলা দায়ের করা হয়। নিউটাউন থানায় গিয়ে সুদীপ্ত এবং দেবযানীকে জেরাও করেন ইডি-র অফিসারেরা। এ ছাড়াও তাঁরা বেশ কিছু নথি সংগ্রহ করেছেন পুলিশের কাছ থেকে, যেগুলির অধিকাংশই সারদা গোষ্ঠীর ব্যাঙ্ক ও টাকার হিসেব। পাশাপাশি, পুলিশও এত দিন ধরে জেরায় উঠে আসা কিছু তথ্য ইডি-কে জানিয়েছে।
কী সেই তথ্য? গোয়েন্দা সূত্রের খবর, একটি রফতানি ব্যবসার সূত্রে দুবাই, কাতার, জর্ডন, স্পেন, ইতালি-সহ কয়েকটি দেশের সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সারদা গোষ্ঠীর। বাজার থেকে জামাকাপড় ও চামড়ার ব্যাগ ওই দেশগুলিতে রফতানি করত সারদা গোষ্ঠী। মাঝেমধ্যে ওই দেশে যাতায়াত করতেন সংস্থার কর্তারা। এ ছাড়াও, পর্যটন ব্যবসা বাড়ানোর সূত্রে তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মায়ানমার-সহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে সারদা গোষ্ঠী ও সুদীপ্ত সেনের ব্যবসায়িক সম্পর্কের কথা জানতে পারেন গোয়েন্দারা।
সূত্রের খবর, সারদার পর্যটন সংস্থা সে ভাবে কাজ না করলেও রফতানি ব্যবসাটি ভালই লাভজনক ছিল। ফলে কয়েকটি বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে ব্যবসার পরিকল্পনাও করেছিলেন সুদীপ্ত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও তিনি চামড়ার রফতানি ব্যবসা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, বছর কয়েক আগে বিদেশে ‘রিয়েল এস্টেট’-এ বিনিয়োগেরও পরিকল্পনা করেছিলেন সুদীপ্ত। এ নিয়েই এক প্রবাসী বাঙালি ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ হয়েছিল। এর পর তিনি ওই দেশগুলিতে পর্যটন ও বস্ত্র ব্যবসা সম্প্রসারণের চেষ্টা করেন। ইডি সূত্রের খবর, এ নিয়ে সুদীপ্ত ও দেবযানীকে জেরা করা হয়েছে। তবে কী উত্তর মিলেছে, তা নিয়ে মুখ খোলেননি তাঁরা।
গোয়েন্দারা জানান, সারদা গোষ্ঠীর টাকা কী ভাবে লেনদেন করা হত এবং কোথায় কোথায় টাকা পাঠানো হত, সেটাই খুঁজে বের করবেন তাঁরা। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, নথি ঘেঁটে দেখতে হবে কোথায় সারদার সংস্থা বা সম্পত্তি তৈরি হয়েছে এবং সেখানে টাকা সরানো হয়েছে কি না।
তবে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হলে সারদার সম্পত্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত নথি প্রয়োজন বলে ইডি সূত্রের খবর। তা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে অবশ্য ধন্দে রয়েছেন তাঁরা। বিধাননগর পুলিশ প্রয়োজনীয় নথির প্রতিলিপি দিচ্ছে না বলে বৃহস্পতিবারই আদালতে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ইডি-র আইনজীবী ভাস্কর বৈশ্য। যদিও সরকারি আইনজীবী (জিপি) অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় কোর্টকে জানান, তদন্তের সময় নথির প্রতিলিপি দেওয়া সম্ভব নয়। তা শুনে আদালত জানায়, প্রতিলিপি না দিলেও নথি দেখাতে হবে। কিন্তু প্রতিলিপি না পেলে তদন্ত কতটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহে ইডি-অফিসারেরা।
এর মধ্যেই সুদীপ্ত-দেবযানীকে জেরার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। তবে শিরদাঁড়ার ব্যথায় কিছুটা কাতর হয়ে পড়েছেন দেবযানী। এ দিন তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, “আমার মক্কেলের স্পন্ডিলোসিস রয়েছে। পুলিশ অবশ্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে।” পুলিশ সূত্রের দাবি, তদন্তকারীদের জেরার সময়টুকু ছাড়া দেবযানী মজে রয়েছেন গোয়েন্দা গল্পে। এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “বেশির ভাগ সময়েই শালর্ক হোমস পড়ছেন তিনি। মাঝেমধ্যে বেছে নিচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার বই কিংবা স্বামী বিবেকানন্দ।” পুলিশ জানিয়েছে, সুদীপ্ত আবার পরিবার নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের দুই ছেলে-মেয়ে রয়েছে। তারা সবে কৈশোরে পা দিয়েছে। ওই সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন তিনি।
রাজ্য জুড়ে অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে নানা ঘটনা ঘটেছে এ দিনও। জলপাইগুড়ির ফালাকাটায় সারদার এক আমানতকারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অসুস্থ অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি। এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে সারদা সংস্থার একটি অ্যাম্বুল্যান্স বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। নদিয়ায় একটি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্ণধারের বিরুদ্ধে কয়েক লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.