ডিভিশন বেঞ্চের বিরুদ্ধে আবেদনে কমিশন
ঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও এই সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের সঙ্গে সংঘাতের রাস্তাতেই গেল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে সেখানেই আবেদন করল কমিশন। কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তা এ ভাবেই খোলা রাখা হল।
প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ মঙ্গলবার যে নির্দেশ দিয়েছে তাতে ‘উভয় পক্ষের সম্মতি’, ‘রাজি’, ‘ঐকমত্য’ এবং ‘সমঝোতা’ শব্দগুলির তীব্র বিরোধিতা করল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার প্রধান বিচারপরতি অরুণকুমার মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে যে আবেদন জানিয়েছে কমিশন, সেখানে নির্দেশ থেকে ওই সব শব্দ তুলে নেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ওই দিন রায়দানের সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন নিয়ে প্রধান বিচারপতি যে সব কথা বলেছিলেন, লিখিত নির্দেশে তা বদলে দেওয়া হয়েছে বলেও আবেদনে অভিযোগ জানিয়েছে কমিশন।
তবে ডিভিশন বেঞ্চের সঙ্গে এই সংঘাতের ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হবে না বলেও কমিশন তাদের আবেদনে জানিয়ে দিয়েছে। আবেদনের একেবারে শেষে লেখা হয়েছে, ‘সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার জন্যই হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে আপত্তি সত্ত্বেও পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে নির্দিষ্ট সময়ে হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।’
সম্মতি, ঐকমত্য নিয়ে বিরোধিতা
কমিশনের দাবি কোনও প্রস্তাবে তারা সম্মতি দেয়নি
রাজ্যের সঙ্গে কোনও সমঝোতা হয়নি
বাহিনী নিয়েও দু’পক্ষে ঐকমত্য হয়নি
মৌখিক রায় বদলে গিয়েছে লিখিত নির্দেশে
নির্দেশে কমিশনের অবস্থান হেয় হয়েছে
বিচারপতি সমাদ্দারের রায় খারিজ করা অনুচিত
কী চায় কমিশন
নির্দেশে ‘উভয়পক্ষের সম্মতি’, ‘রাজি’, ‘সমঝোতা’ শব্দ বাদ
বিচারপতি সমাদ্দারের রায়ের যথাযোগ্য মর্যাদা
কেন ‘উভয় পক্ষের সম্মতি’, ‘রাজি’, ‘ঐকমত্য’ এবং ‘সমঝোতা’ শব্দগুলি ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করা হল, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছে কমিশন। কমিশন বলেছে, কোনও অবস্থাতেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে সম্মতি চাওয়া হয়নি। তাই নির্দেশে এই সব শব্দ লেখার ফলে কমিশনের অবস্থান লঘু করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে কমিশনকে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কথা বলারই সুযোগ দেওয়া হয়নি, সেখানে নির্দেশে ‘সমঝোতা’ শব্দটি ব্যবহার করে কমিশনকে কিছুটা হেয় করার চেষ্টা হয়েছে।
কমিশন বলেছে, তাদের তরফ থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আদালতকে কোনও রকম লিখিত বা মৌখিক সম্মতি দেওয়া হয়নি। কমিশনের আইনজীবীও কোনও পর্যায়েই তাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সম্মতি চাননি। রাজ্য এবং কমিশনের মধ্যে যে সব বিষয় নিয়ে মতানৈক্য ছিল, তার মধ্যে একমাত্র পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিষয়েই আদালতে সম্মতি দিয়েছিল কমিশন।
ডিভিশন বেঞ্চ তাদের নির্দেশে জানিয়েছিল, কমিশনের দায়ের করা মামলায় বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার যে রায় দিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে তা নজির হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। নির্দেশের ওই অংশটি বাদ দেওয়ার জন্যও আবেদন জানিয়েছে কমিশন। বিচারপতি সমাদ্দারের রায়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনা এবং নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কমিশনের সাংবিধানিক অধিকারকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছিল।
ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ নিয়ে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাতে তাদের আপত্তি রয়েছে বলে কমিশনের আবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন নিয়ে শুরু থেকেই রাজ্য এবং তাদের আইনজীবীর মধ্যে তীব্র মতভেদ ছিল। বিচারপতি সমাদ্দার নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন নিয়ে যে রায় দিয়েছিলেন, কোনও অবস্থাতেই কমিশন তার বদল চায়নি। স্পর্শকাতর বুথ নিয়েও কমিশনের সঙ্গে রাজ্যের মতভেদ দূর হয়নি বলে এ দিন জমা দেওয়া আবেদনে বলা হয়েছে। বুথ এবং ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের প্রস্তাবে তাদের আইনজীবী আপত্তি জানিয়েছিলেন বলেও আবেদনে জানিয়েছে কমিশন।
সেখানে আরও অভিযোগ করা হয়, দু’পক্ষের সওয়ালের পরে আদালতে ডিভিশন বেঞ্চ মৌখিক ভাবে যে নির্দেশ দেয়, তাতে বলা হয়েছিল: নিরাপত্তারক্ষীর ঘাটতি হলে কমিশনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে রাজ্য কেন্দ্রীয় বাহিনী বা ভিন রাজ্যের পুলিশ আনতে পারে। কিন্তু লিখিত নির্দেশ যখন ওয়েবসাইটে দেওয়া হল, তখন দেখা গেল, মৌখিক রায়দানের সময়ে যা বলা হয়েছে, তা সেখানে নেই। নির্দেশে লেখা হল, বাহিনী কম পড়লে কোথা থেকে তা আনা হবে, তা রাজ্য সরকারই ঠিক করবে। ওয়েবসাইটে লিখিত নির্দেশ দেখে তাই কমিশন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল বলে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের কাছে জমা পড়া আবেদনে বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী অমৃতা পাণ্ডে এ দিন বেলেন, “আমরা এ দিন আমাদের আবেদন জমা দিয়েছি। আগামী ৩ জুন আমাদের জমা দেওয়া আবেদনটি শুনানির জন্য উঠবে বলে আশা করছি।” এই আবেদন ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ারই প্রস্তুতি বলে কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে। কমিশনের সূত্রটি বলেন, ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের আবেদন মেনে না নিলে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বেঞ্চের সামগ্রিক নির্দেশকেই সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.