পূর্ব কলকাতা
বিতর্কের পুল
অথৈ জলে সাঁতার
কটি সুইমিং পুলের কাজ এখনও শেষ হয়নি। কিন্তু তার মধ্যেই আর একটি সুইমিং পুলের শিলান্যাস হয়ে গিয়েছে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এই অবস্থা বিধাননগর পুরসভার।
সল্টলেকে স্পোর্টস কমপ্লেক্সে দীর্ঘ দিন ধরে একটি সুইমিং পুল তৈরির কাজ চলছে। পুরকর্তৃপক্ষের দাবি, অর্থাভাবে কাজ আটকে ছিল। তবে পর্যায়ক্রমে দ্রুত কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু এর মধ্যেই সাংসদ কোটার অর্থে সিজে ব্লকে একটি সুইমিং পুল তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা। কিন্তু এর মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তা গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। ফলে নতুন পুল তৈরির বিষয়টিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিরোধীদের দাবি, এই অবস্থার জন্য পুরসভার দিশাহীন পরিকল্পনাই দায়ী। বিধায়ক তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত জানিয়েছেন, নতুন সুইমিং পুলের ব্যাপারে তিনি পুরোপুরি অন্ধকারে।
আগের বাম বোর্ডের আমলেই স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাঠে একটি আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং পুল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কাজও শুরু হয়। কিন্তু পুরবোর্ড পরিবর্তন হওয়ার পরে তা থমকে যায়। পুরসভা সূত্রের খবর, বিপুল পরিমাণ বকেয়া থাকায় ঠিকাদার সংস্থা বেঁকে বসে। দীর্ঘ দিন তা নিয়ে টানাপোড়েন চলে। পরে সিদ্ধান্ত হয়, পর্যায়ক্রমে অর্থের সংস্থান করে সুইমিং পুল তৈরির কাজ শেষ হবে।
গত বছর দেখা গিয়েছিল সেই পুল জলে ভরা। বাসিন্দাদের একাংশ সেখানে স্নান সারছেন, জামাকাপড় কাচছেন। খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এখন অবশ্য সুইমিং পুলে জল নেই। কিন্তু কাজ চলছে ঢিমেতালে। কিন্তু এর মধ্যেই সিজে ব্লকে একটি সুইমিং পুল তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে, একটি আবাসিক এলাকায় সুইমিং পুল তৈরি করা যায় কি না?
বিরোধী বামেদের অভিযোগ, সাংসদ কোটার অর্থ খরচের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারছে না পুরপ্রশাসন। যেখানে আজও সল্টলেকে একাধিক ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জল দেওয়া যায়নি, রাস্তা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে, সেখানে আরও একটি সুইমিং পুল তৈরির কোনও যুক্তি নেই। যদিও বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বামেরা ১৫ বছর পুরসভার ক্ষমতায় থাকলেও পরিকাঠামোর কোনও কাজ করেনি। আমরাই এসে পরিকাঠামো উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছি। জল সরবরাহ-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে পুরসভা। কিন্তু সুইমিং পুলের চাহিদাকে বিবেচনায় রেখেই তা তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা।’’
ব্লকের মধ্যে সুইমিং পুলের পরিকল্পনা নিয়েও নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, ব্লকের মধ্যে সুইমিং পুল হলে গাড়ি যাতায়াত করবে। তার পার্কিংয়ের ব্যবস্থার কী হবে? পাশাপাশি, নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, সল্টলেকে এমনিতেই যেখানে জলের যোগান নিয়মিত নয় সেখানে সুইমিং পুলের জন্য জল কোথা থেকে আসবে?
বাসিন্দাদের এই সব অভিযোগের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন বিধায়ক তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। নতুন সুইমিং পুলটি নিয়ে শাসক দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘নতুন সুইমিং পুলের বিষয়ে আমি পুরোপুরি অন্ধকারে। এমন কোনও সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যান পারিষদ কিংবা কাউন্সিলরদের বৈঠকে ঠিক হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। একটি ব্লকে সুইমিং পুল করতে হলে বাসিন্দাদের অন্যান্য সমস্যার দিকও ভাবতে হবে।’’
পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (পূর্ত) অনুপম দত্ত বলেন, ‘‘স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সুইমিং পুলটির কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার জন্যই কাজটি আটকে ছিল।’’ যদিও নতুন সুইমিং পুল তৈরি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর তরফেও এ বিষয়ে কোনও জবাব মেলেনি।

ছবি: শৌভিক দে্




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.