নির্দেশে খুশি রাজ্য, সন্তুষ্ট নয় কমিশন
প্রকাশ্যে খুশির কথা জানাচ্ছে এক পক্ষ। উষ্মা চাপা থাকছে না অন্য পক্ষের। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের পরে সরকার ও নির্বাচন কমিশন দু’শিবিরে দু’রকম হাওয়া।
দার্জিলিঙের পথে বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, “হাইকোর্টের রায়ে আমরা খুশি।” এক ধাপ এগিয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় মিষ্টিমুখ করেন। তাঁর দফতরের কর্মীদের একাংশ বিকেলে মন্ত্রীকে মিষ্টি খাওয়ান।
ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশের প্রতিলিপি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে পৌঁছনোর আগেই বাগডোগরা বিমানবন্দরে মমতা বলেন, “আমরা ঠিক সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের চেষ্টা করছিলাম। রাজ্যের সদিচ্ছার অভাব আগেও ছিল না, এখনও নেই। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচন প্রক্রিয়া সেরে ফেলব আমরা।” সরকারি সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যায় দার্জিলিঙের রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি পৌঁছলে তিনি সফরসঙ্গী মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে নির্বাচনের সম্ভাব্য দিনক্ষণ নিয়েও কথা হয়। যাতে চলতি সপ্তাহেই ভোটের দিন ঘোষণা করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়। এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, সরকার জুনের মধ্যেই নির্বাচন সারতে চাইছে, প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
অন্য দিকে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে হাইকোর্টের নির্দেশে সন্তুষ্ট হতে পারেনি, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা স্পষ্ট হতে থাকে। গোড়ায় ওই নির্দেশ সম্পর্কে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডে। তিনি বলেন, “নির্দেশের প্রতিলিপি হাতে পেয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার পরেই জানাতে পারব, কমিশন সন্তুষ্ট কি না।” এর পরেই কমিশনের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল জানান, উভয় পক্ষের সম্মতিতে আদালতের এই নির্দেশ এই বক্তব্যের সঙ্গে তিনি সহমত নন। কারণ, কেউ তাঁর সম্মতি চাননি। তিনিও তা দেননি।
সমরাদিত্যবাবুর মতো এক জন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী যা বলেছেন, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। উনি বলছেন, প্রধান বিচারপতির কথা শুনতে পাননি। অথচ, নির্দেশের দু’টি অংশ নিয়ে তিনি আপত্তি তোলায় সেগুলি বদলানো হয়।
অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় (সরকারি কৌঁসুলি)
প্রধান বিচারপতির সামনে মাইক্রোফোন থাকা সত্ত্বেও তিনি মাঝে মাঝেই মুখ সরিয়ে নেন। তখন তিনি কী বলছেন, শোনা যায় না। প্রধান বিচারপতি কখন উভয়ের সম্মতির কথা বলেছেন, তা আমি শুনতে পাইনি।
সমরাদিত্য পাল (কমিশনের আইনজীবী)
রাতে কমিশনের দফতর ছেড়ে যাওয়ার সময় মীরা পাণ্ডেও বলেন, “আমরা আমাদের কৌঁসুলিকে সম্মতি জানানোর জন্য বলিনি।” তা হলে কি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে কমিশন? মীরার জবাব, “আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।” কমিশনের এই প্রতিক্রিয়ার জেরে হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও পঞ্চায়েত ভোট হবে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। যদিও ভোট নিয়ে এ দিনই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে তাঁর এক প্রস্ত কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মীরা। ভোট হবে কি না এই প্রশ্নে তাঁর জবাব, “আগে রাজ্য সরকার আমাদের কাছে আসুক।”
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সচিব তাপস রায়ও আগে জানিয়েছিলেন যে, ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ মেনে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া শেষ করার প্রস্তুতি কমিশন নেবে। তিনি বলেন, “আদালতের নির্দেশ মেনে তিন দফার ভোটে কোথায়, কত সশস্ত্র বাহিনী প্রয়োজন, তা ঠিক করতে হবে। স্পর্শকাতর, অতি-স্পর্শকাতর ও সাধারণ বুথে কোথায় কত বাহিনী লাগবে, আদালতই তা বলে দিয়েছে। এখন হিসেব করতে হবে। কত ঘাটতি হবে, তা জানানো হবে রাজ্যকে। তারাই ব্যবস্থা করবে।” তখনও সম্মতি নিয়ে জটিলতা সামনে আসেনি।
বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে সম্মতির কথা বললেও সমস্যা হল কোথায়?
সমরাদিত্যবাবুর বক্তব্য, “প্রধান বিচারপতির সামনে মাইক্রোফোন থাকা সত্ত্বেও তিনি মাঝে মাঝেই মুখ সরিয়ে নেন। তখন তিনি কী বলছেন, শোনা যায় না। প্রধান বিচারপতি কখন উভয়ের সম্মতির কথা বলেছেন, তা আমি শুনতে পাইনি।” সম্মতির কথাটি নির্দেশের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সমরাদিত্যবাবুর বক্তব্য, এই মামলায় বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার যে রায় দেন, তা যথেষ্ট বাস্তবসম্মত ছিল বলে তিনি মনে করেন।
সমরাদিত্যবাবুর এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করে সরকারি কৌঁসুলি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমরাদিত্যবাবুর মতো এক জন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ আইনজীবী যা বলেছেন, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। উনি বলছেন, প্রধান বিচারপতির কথা শুনতে পাননি। অথচ, নির্দেশের দু’টি অংশ নিয়ে তিনি আপত্তি তোলায় সেগুলি বদলানো হয়।”
কমিশনের আরও অসন্তোষ, তাদের মূল আবেদনের ফয়সালা না-হওয়ায়। কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনের ৪২ ধারা (যাতে বলা হয়েছে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে ভোটের দিন ঘোষণা করবে রাজ্য) অসাংবিধানিক, এই দাবি করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তাঁরা। বিচারপতি সমাদ্দারের সিঙ্গল বেঞ্চ এ নিয়ে সরাসরি কিছু না-বললেও রায় দিয়েছিল, ভোটের দিন ঘোষণার এক্তিয়ার কমিশনেরই। ফলে মনে করা হচ্ছিল, কমিশনের দাবি মেনে নিয়েছে সিঙ্গল বেঞ্চ। কিন্তু প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ওই রায় ন্যায্য না অন্যায্য, তার নিষ্পত্তি করেনি। ৪২ ধারার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও তারা নীরব। ফলে মামলার মূল প্রশ্নটা অমীমাংসিতই রইল বলে কমিশনের মত। এই ধোঁয়াশা কাটাতে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন, নাকি ফের বিচারপতি সমাদ্দারের বেঞ্চে আর্জি জানানো হবে, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি কমিশন-কর্তারা। হাইকোর্ট সূত্রে বলা হচ্ছে, এ নিয়ে কমিশনকে সিঙ্গল বেঞ্চেই সওয়াল করতে বলেছে ডিভিশন বেঞ্চ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.