মন্দার উপর বিষফোড়া তোলাবাজি
নির্মাণ শিল্পে নয়া লগ্নি নেই রাজ্যে
ত্র্যহস্পর্শ!
মন্দার বাজার। ক্রমবর্ধমান খরচ। সঙ্গে তোলাবাজি। এই তিন মিলিয়ে এ রাজ্যে নির্মাণ শিল্পে লগ্নির পরিমাণ তলানিতে ঠেকেছে বলে জানাচ্ছে শিল্পমহল। বস্তুত, গত আর্থিক বছরে এই শিল্পে নতুন কোনও বিনিয়োগই টানতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গ। বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
গত আর্থিক বছরে দেশ জুড়ে নির্মাণ শিল্পে নতুন বিনিয়োগ হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। তার ৪১ শতাংশই দখল করেছে নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাত।
এটা ঠিক যে, কঠিন এই সময়ে নির্মাণ শিল্পে লগ্নির পরিমাণ দেশের সর্বত্রই কমেছে। অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষা বলছে, নয়া লগ্নির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। বণিকসভাটির সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াতের কথায়, “বাজার পড়ে গিয়েছে। চড়া সুদের হার ও নির্মাণ খরচের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিল্পে বৃদ্ধির নিম্নমুখী হার।” যার জেরে গুজরাত, কেরল, উত্তরাখণ্ড ও রাজস্থান ছাড়া বাকি সব রাজ্যেই নির্মাণ শিল্পের ছবিটা ফিকে হয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মতো বেহাল দশা কোনও রাজ্যের নয়। এ রাজ্যে নয়া লগ্নি শূন্যতে এসে ঠেকল কেন? রাওয়াত এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় নির্মাণ সংস্থার এক কর্তার বক্তব্য, মন্দার বাজারে তোলাবাজদের মোটা টাকা দিতে হলে লাভের মুখ দেখা প্রায় অসম্ভব। ফলে নির্মীয়মান সব প্রকল্পই ঢিমেতালে চলছে। আর নতুন বিনিয়োগের তো প্রশ্নই নেই। রাজারহাট, ই এম বাইপাস ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় তোলাবাজদের ‘সিন্ডিকেট’-এর দাপট বেড়েই চলেছে বলে ক্ষোভ নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের।
অথচ এই সমস্যা নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বছর দুয়েক আগে দলীয় বৈঠকে তিনি জানিয়েছিলেন, যে কোনও রকম তোলাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের বাইরেও একই বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম একটি শিল্প প্রকল্পের শিলান্যাস করতে গিয়ে শিল্পপতিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “দলের নাম করে কেউ টাকা চাইলে আপনারা কখনওই দেবেন না। এটা আপনাদেরও বন্ধ করতে হবে।” প্রায় ছ’মাস আগে নির্মাণ শিল্পে লগ্নি টানতে ‘বেঙ্গল বিল্ডস’ নামে মেলার অন্যতম আয়োজক ছিল রাজ্য সরকার। সেখানেও তোলাবাজি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “স্থানীয় মানুষ কাজ পেতে পারেন, ব্যবসাও করতে পারেন। কিন্তু সেটা কারও অধিকার হতে পারে না।”
কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। নেত্রীর বার্তা নিচু তলার কর্মীদের কাছে পৌঁছয়নি বলেই মনে করছে তারা। নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অনেকেরই বক্তব্য, চড়া দামে নিচু মানের ইমারতি দ্রব্য কেনার চাপ আগেও ছিল। এখনও আছে। সঙ্গে রয়েছে সরাসরি তোলাবাজি। এক বিনিয়োগকারীর কথায়, “মন্দার চাপ অন্য রাজ্যেও রয়েছে। কিন্তু এখানে বাড়তি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তোলাবাজি। ফলে হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই।”
ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষা বলছে, ২০১১-১২ সালে নির্মাণ শিল্পে ১২০০ কোটি টাকা নয়া বিনিয়োগ এসেছিল রাজ্যে। ২০১২-১৩ সালে তা শূন্যে নেমে এসেছে। অন্য দিকে, গুজরাতে লগ্নির পরিমাণ ২০০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা।
সমস্যার কথা উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজ্য সরকারও। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, মাঝে মধ্যেই বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে তাঁর দাবি, তোলাবাজির চেয়েও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে চড়া ‘স্ট্যাম্প ডিউটি’ এবং মন্দা। সব মিলিয়ে এই শিল্পের যে হাল দাঁড়িয়েছে, তাতে এ রাজ্যে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ রুজি-রুটি হারাবেন বলে তাঁর আশঙ্কা। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই-ও তোলাবাজির সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন, জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন বদলের দাবির পাশাপাশি এ বিষয়টিও রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে বলে তাদের দাবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.