দেড় বছরে চার আগুন
অগ্নিবিধি ভাঙাই বিধি বার্নপুরে
কিছু দিন অন্তরই লাগছে আগুন। কী ভাবে লাগছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অজানা। তবে কেন আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, তা বোধহয় সকলেরই জানা। প্লাস্টিকের ছাউনি-সহ নানা দাহ্যবস্তুতে ঠাসা বার্নপুরের ইস্কো বাজারের অগ্নি নিরাপত্তার জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা, বিধিনিষেধ চালু হয়েছে বারবার। কিন্তু নিয়ম ভাঙাই যেন রেওয়াজ হয়ে উঠেছে এই বাজারে।
বার্নপুরের জনবহুল এলাকায় ইস্কোর এই বাজার। ইস্কো অনুমোদিত দোকানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিনশো। অনুমতি ছাড়াই জায়গা দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছে, এমন দোকান রয়েছে আরও শ’চারেক। দমকল কর্তৃপক্ষ জানান, বাজার এলাকায় যে সব অগ্নিবিধি মেনে চলা উচিত, তার কিছুই মানা হচ্ছে না এখানে। এই নিয়ম ভাঙার দৌড়ে বৈধ ও অবৈধ, সব দোকানদারই রয়েছেন। আসানসোল দমকলের ওসি সেলিম জাভেদ বলেন, “এ সব বেনিয়মের কথা ইস্কো কর্তৃপক্ষকে বহু বার জানিয়েছি। যত বার আগুন নেভাতে গিয়েছি, প্রতি বার একই বেনিয়ম নজরে এসেছে।”
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দোকানদারদের জন্য স্থায়ী টিনের চাল করে দেওয়ার পরেও সারবেঁধে প্লাস্টিকের ছাউনি টাঙানো। তিন পাশ পলিথিনে মোড়া চাটাই দিয়ে ঘেরা। যত্রতত্র ঝুলছে বিদ্যুতের তার। বেআইনি ভাবে ব্যবসা চালানো বেশ কিছু দোকানে খোলা তার লাগিয়ে হুক করে বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে। কোনও দোকানে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নেই। বাজারে বড় দোকানগুলিতেও অগ্নি নির্বাপণের ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই। বাজারে আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে জলের ব্যবস্থার জন্য ইস্কো কর্তৃপক্ষ একাধিক জায়গায় পাইপ ও ভাল্ভ বসিয়েছেন। কিন্তু ভাল্ভ বসানো জায়গাগুলি ঘিরে বসেছে বেআইনি দোকানগুলি। আর এ সবের পরিণতিতেই বারবার অগ্নিকাণ্ড।
এখনও পলিথিন টাঙিয়েই চলছে কারবার। বার্নপুর বাজারে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।
২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি ভোরে আগুন লেগে ছাই হয়ে যায় প্রায় দু’শো দোকান। সেই বছরেই ৫ মার্চ ফের ভস্মীভূত হয় কয়েকটি দোকান। চলতি বছরে ১৬ মার্চ আবার আগুনে পুড়ে যায় চারটি দোকান। সোমবার ফের আগুন লাগে বাজারে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় সাতটি দোকান।
ইস্কোর শহর পরিচালন বিভাগের অধীনে রয়েছে এই বাজার। বাজার দেখভালের জন্য সংস্থার এক জন পরিদর্শক রয়েছেন। বাজারের মধ্যেই তাঁর অফিস। ইস্কোর শহর পরিচালন বিভাগের ডিজিএম সুব্রত ঘোষ বাজারে অগ্নিবিধি মানা হচ্ছে না, এ কথা স্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, বেশি সমস্যায় ফেলছে অবৈধ দোকানগুলি। তারা নিয়মের তোয়াক্কা করে না। হুকিং করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। খোলা তারে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন ধরে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, বাজারের বৈধ দোকানদারদের স্থায়ী টিনের ছাউনি গড়ে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও পলিথিন ও দাহ্যসামগ্রী দিয়ে ছাউনি তৈরি করে জতুগৃহ করে তোলা হয়েছে বাজারকে। সুব্রতবাবুর অভিযোগ, “আমরা এই বেনিয়ম বন্ধে বহু বার উদ্যোগী হয়েছি। অবৈধ দোকানগুলি উচ্ছেদের অভিযানও হয়েছে। কিন্তু নানা রাজনৈতিক দলের চাপে পিছিয়ে আসতে হয়।” বাজার পরিদর্শক শিবনন্দন মিশ্রের দাবি, প্লাস্টিকের ছাউনি ও দাহ্যবস্তু সরাতে গিয়ে দোকানদারদের হাতে নিগৃহীতও হতে হয়েছে তাঁদের।
সিপিএমের হিরাপুর লোকাল সম্পাদক তথা এলাকার প্রাক্তন কাউন্সিলর পার্থ সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “সাধারণ মানুষের স্বার্থে ইস্কো কর্তৃপক্ষ বেনিয়ম রুখতে উদ্যোগী হোক। তবে আমরা চাই, অবৈধ দোকানগুলি উচ্ছেদের আগে তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হোক।” কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সহ-সভাপতি সুভাষ রায়েরও বক্তব্য, “ইস্কোর সঙ্গে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করব। কিন্তু বেকার যুবকদের রোজগারের পথ যাতে বন্ধ না হয়, কর্তৃপক্ষ তা দেখুক।” তৃণমূলের স্থানীয় মেয়র পারিষদ লক্ষ্মণ ঠাকুর বলেন, “এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও স্থানীয় বেকারদের আর্থিক সংস্থান বজায় রেখে ইস্কো ইতিবাচক পদক্ষেপ করলে আমাদের আপত্তি নেই।”
ব্যবস্থা নিলে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সবাই। ফের কোনও আগুন লাগার আগে ব্যবস্থা হবে কি না, তার প্রতিশ্রুতি কেউ দিচ্ছে না।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.