পাচার হওয়া বধূ উদ্ধার গুজরাতে
ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ এবং এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তৎপরতায় পাচার হয়ে যাওয়া বধূকে গুজরাতের সুরাত থেকে উদ্ধার করা হল।
গোপীবল্লভপুর থানার আলমপুর অঞ্চলের পিড়াশিমুল গ্রামের দুই শিশু সন্তানের মা বছর পঁচিশের ওই বধূটি গত ১৮ এপ্রিল খড়্গপুরে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন। তারপর নিখোঁজ হয়ে যান। লোকলজ্জার ভয়ে স্ত্রীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি প্রথমে পুলিশে জানাননি মহিলাটির স্বামী। পেশায় তিনি চাষি। পরে অবশ্য নিখোঁজ ডায়েরি করেন। নিখোঁজ হওয়ার দিন পনেরো পরে হঠাৎই-ই একটি অচেনা নম্বর থেকে ওই মহিলা স্বামীকে ফোন করে জানান, চাকরি দেওয়ার নাম করে তাঁকে অনেক দূরে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে আটকে রেখেছে বিশ্বনাথ দত্ত নামে এক ব্যক্তি। পরিচারিকার কাজ করানো হচ্ছে। শারীরিক অত্যাচারও করা হচ্ছে। এরপরই ‘সুচেতনা’ নামে ঝাড়গ্রামের একটি মহিলা সংগঠনের দ্বারস্থ হন মহিলাটির স্বামী। সুচেতনার সম্পাদিকা স্বাতী দত্ত জানতে পারেন, মোবাইল নম্বরটি গুজরাতের সুরাতের এক ব্যবসায়ীর। ওই ব্যক্তি স্বাতীদেবীকে জানান, সুরাতের ভারুচ সি-ডিভিশন থানার কাস্ক-এর একটি বাড়িতে ওই মহিলাকে আটকে রেখে পরিচারিকার কাজ করানো হচ্ছে। যে বাড়িতে ওই মহিলাকে আটকে রাখা হয়েছে, তার পাশের বাড়িতেই থাকেন ওই ব্যবসায়ী। ঘটনাচক্রে, ওই ব্যবসীর সঙ্গে মহিলার যোগাযোগ হয়। এরপরই গোপনে ওই ব্যবসায়ীর মোবাইল থেকে স্বামীর নম্বরে ফোন করেছিলেন মহিলা।
বধূ আরও জানান, গত ১৮ এপ্রিল বিশ্বনাথ দত্ত নামে এক ব্যক্তি তাঁকে খড়্গপুরের একটি সংস্থায় চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই মহিলার স্বামীর সম্পর্কিত ভাগ্নে কৃষ্ণগোপাল গিরি’ই বিশ্বনাথের সঙ্গে মহিলার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বনাথ মধ্যপ্রদেশের একটি সংস্থায় চাকরি করেন বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। সেদিন খড়্গপুরে পৌঁছনোর পর ওই মহিলাকে বিশ্বনাথ জানান, ট্রেনে করে কিছুটা দূরে যেতে হবে। বেশ কয়েক ঘণ্টা রেল যাত্রার পর মহিলা যখন বুঝতে পারেন তিনি বিপদে পড়েছেন, তখন কিছু করার ছিল না।
গত ১ মে গোপীবল্লভপুর থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন মহিলার স্বামী। অভিযোগের ভিত্তিতে কৃষ্ণগোপাল গিরিকে ওই দিনই গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতের নির্দেশে কৃষ্ণগোপাল এখন জেল হাজতে রয়েছে। ইতিমধ্যে গত ৮ মে গোপীবল্লভপুর থানার পুলিশের একটি দল গুজরাতের উদ্দেশে রওনা হয়। ১০ মে কস্ক-এর একটি বাড়ি থেকে ওই মহিলাকে উদ্ধার করা হয়। তবে বিশ্বনাথ এবং ওই বাড়ির মালিককে পাওয়া যায়নি। ওই দিনই সুরাতের ভারুচ সিজেএম আদালতে মহিলাকে তোলা হলে চার দিনের ট্রানজিট রিমান্ডের নির্দেশ হয়। রবিবার বিকেলে মহিলাকে নিয়ে পুলিশের দলটি গোপীবল্লভপুর থানায় পৌঁছয়। সোমবার ওই মহিলাকে ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। এ দিন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেন ওই মহিলা। ওই মহিলাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান তাঁর স্বামী। এরপরই আদালত ওই মহিলাকে স্বামীর সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়।
আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই মহিলা বলেন, “বাড়ি ফিরতে চাই। কতদিন ছেলে-মেয়ের মুখ দেখিনি। সংসারে সুখ আনতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছিলাম। ভাগ্যিস স্বামীর মোবাইল নম্বরটা মুখস্থ ছিল।” ঝাড়গ্রামের এসপি ভারতী ঘোষের বক্তব্য, “অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ওই মহিলাকে উদ্ধার করেছি। এটা আমাদের বিরাট সাফল্য। মহিলা সংগঠনটিও আমাদের সাহায্য করেছে।” ‘সুচেতনা’র সম্পাদিকা স্বাতীদেবীর বক্তব্য, “জঙ্গলমহলে এভাবেই বহু মহিলাকে পাচার করে দেওয়া হয়। সব ঘটনা প্রকাশ্যে আসে না। তবে গত দশ বছরে আমরা পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতায় ঝাড়গ্রাম মহকুমার ৩৩ জন মহিলাকে উদ্ধার করাতে পেরেছি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.