ঝড়ে পড়ে টয়লেটের দরজা ভাঙল বিমানে
লকাতার আকাশে কালবৈশাখী থেকে কোনও মতে গা বাঁচিয়ে বিমানটি উড়ে গিয়েছিল ভুবনেশ্বর। কে জানত, কলকাতার ঝড় ততক্ষণে পৌঁছে যাবে ওড়িশায়!
কলকাতার আকাশে বিমান থরথর করে কাঁপছিল। আর ভুবনেশ্বরে গিয়ে এয়ার পকেটে পড়ে ঠিক যেন অতলে ঝাঁপ দিল সে। পরপর দু’বার। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল বিমানের ভিতরটা।
১৮২ জন আতঙ্কিত যাত্রী নিয়ে ইন্ডিগোর বিমানটি শেষ পর্যন্ত নামল ভুবনেশ্বরে। তত ক্ষণে যাত্রীদের কারও দমবন্ধ হয়ে এসেছে, কারও কপাল কেটেছে। টয়লেটের দরজা ভেঙে ছিটকে গিয়ে পা ভাঙল এক মহিলার। ভয়ে বাকরুদ্ধ সবাই। চিকিৎসক এলেন। অক্সিজেন এল। কিন্তু ভয় কাটল না। রাতেই কলকাতা ফিরেছিল বিমানটি। কিন্তু তাতে সওয়ার হতে চাননি ৭২ জন যাত্রী। রবিবার রাতটা গাঁটের পয়সা খরচ করে ভুবনেশ্বরের হোটেলে কাটালেন তাঁরা। একই সংস্থার বিমানে সোমবার সকালে কলকাতায় ফিরলেন ওঁরা।
রবিবার বিকেলে ইনদওর ছেড়েছিল ইন্ডিগোর বিমানটি। রায়পুর হয়ে ৬টা ১০ মিনিটে কলকাতায় নামার কথা ছিল। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বিমানটি ঢুকেও পড়ে কলকাতার আকাশে। মাটিতে নামার প্রস্তুতি নিতেই বিপত্তি। কলকাতার বাসিন্দা, ওই বিমানের যাত্রী সোনালি ঝা-এর কথায়, “সাড়ে চারটায় ওই বিমান ছাড়ার আগে পাইলট জানিয়েছিলেন, কলকাতার আবহাওয়া কিছুটা খারাপ। বিমান নামায় সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এতটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।” সোনালিদেবী বলেন, “সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পাইলট ঘোষণা করলেন, ‘আমরা কলকাতার আকাশে ঢুকে পড়েছি। সময়ের আগেই নেমে যাব।’ বিমান যখন নামতে শুরু করছে, তখন মেঘের মধ্যে গিয়ে পড়লাম। বিমানটি থর থর করে কাঁপছিল। এ ভাবে ৪০ মিনিট কেটে গেল।” পৌনে সাতটা নাগাদ বিমানটি নামার সিগন্যাল পেল। নামতে শুরুও করল। সোনালিদেবী বলেন, “আমরা নীচের আলো দেখতে পাচ্ছিলাম। হঠাৎ আলোটালো সব মিলিয়ে গেল। চারপাশে মেঘ। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি। বিমান উঠে গেল উপরে। পাইলট জানালেন, কলকাতায় নামা যাবে না। ভুবনেশ্বরে গিয়ে নামবে।”
কিন্তু ভুবনেশ্বর গিয়েও রেহাই নেই। সোনালিদেবী বলেন, “ভুবনেশ্বরে নামার তিন-চার মিনিট আগে প্রচণ্ড একটা ঝাঁকুনি। মনে হল, বিমান আছড়ে পড়ছে নীচে। পাশের এক মহিলা যাত্রী আসন থেকে ছিটকে গেলেন। অনেকে বমি করতে শুরু করলেন।” তার পরপরই আবার একটা ঝাঁকুনি। “বিমানের ভিতরে পিছন দিকের ফলস সিলিং খুলে পড়ে গেল এক সময়। কাঁপতে কাঁপতেই বিমানটি নামল ভুবনেশ্বরে।” স্ত্রীকে নিয়ে ইনদওর থেকে ওই বিমানে উঠেছিলেন বাদল সিংহরায়। সোমবার তিনি বলেন, “সে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। এক বার করে উপরে উঠে যাচ্ছে বিমান। তার পরে মনে হচ্ছে নাগরদোলায় চেপে নেমে আসছি।”
একটি আলোচনাচক্র সেরে ওই বিমানেই কলকাতা ফিরছিলেন মনোবিদ হিরন্ময় সাহা। তিনি বলেন, “কলকাতার আকাশে তিন বার চক্কর খাওয়ার পরে ক্যাপ্টেন জানান, ‘উপায় নেই। আমরা আপাতত ভুবনেশ্বর ফিরে যাচ্ছি।’ তার পরে প্রবল ঝাঁকুনি, সঙ্গে আওয়াজ। মনে হল, এই বুঝি প্লেনটা দু’টুকরো হয়ে যাবে। আমার সামনে এক জন বিমানসেবিকা ছিটকে গিয়ে পড়লেন। তাঁর মাথা ঠুকল প্লেনের ছাদে। টয়লেটে ছিলেন এক মহিলা দরজা ভেঙে ছিটকে তিনি বাইরে চলে এলেন। পা ভাঙল তাঁর। কারও হ্যান্ড-লাগেজ অন্যের ঘাড়ে গিয়ে পড়ল।”
ইন্ডিগোর তরফে বলা হয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেই ঘণ্টা দেড়েক পরে বিমানটি ভুবনেশ্বরে গিয়ে নামে। কিন্তু যাত্রীরা ওই সময়ে এতটাই আতঙ্কে কাটিয়েছেন যে, পরে বেশি রাতে বিমানটি আবার কলকাতা ফিরবে জানলেও অনেকে আসতে চাননি। ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়, যে হেতু ইন্ডিগোর ভাড়া কম, তাই এ রকমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে যাত্রীরা আটকে গেলেও হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করার নিয়ম নেই। তবে যাঁরা রাতে আর ফিরতে চাননি তাঁদের পরদিন কলকাতায় আনা হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.