ফাঁসির বিরোধিতায় নামবে সিপিএম
ন’বছর সময় নিয়ে এ দেশের কমিউনিস্টরা চিনের উল্টো পথে হাঁটলেন।
ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় থেকে আফজল গুরু, পাক্কা ন’বছর ধরে তর্কবিতর্ক চালিয়ে অবশেষে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। সোমবার রাজধানীতে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট জানিয়ে দিলেন, এ বার থেকে সিপিএম এ দেশে মৃত্যুদণ্ড তুলে দেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করবে। সিদ্ধান্ত নিতে এত সময় লাগল কেন? দলের এক নেতার বক্তব্য, “আমাদের দ্বিধার কারণ হল, কার্ল মার্কস নিজে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে মত দিয়ে গিয়েছেন। অথচ কমিউনিস্ট শাসিত চিনেই সবথেকে বেশি মৃত্যুদণ্ড হয়।”
বাম জমানায় ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি নিয়ে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। সেটা ২০০৪ সালের কথা। ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার পরেও মৃত্যুদণ্ড নিয়ে দলে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আফজল গুরুর ফাঁসির পরে নতুন করে সেই বিতর্ক আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। দলের পক্ষে সীতারাম ইয়েচুরি প্রাথমিক ভাবে আফজলের ফাঁসিকে স্বাগত জানিয়ে সুদীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেটাই দলের অবস্থান কি না, তা নিয়ে মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষাবিদদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কারাটকে। পলিটব্যুরোর তরফে তখন জানানো হয়, দল নিজের অবস্থান পর্যালোচনা করছে। সম্প্রতি দিল্লিতে গুড়িয়া ধর্ষণ কাণ্ডের পরেও সীতারাম বলেছিলেন, শিশু ধর্ষণের মতো অপরাধে মৃত্যুদণ্ডই সঙ্গত কি না, তা ভেবে দেখা হবে।
পলিটব্যুরো-কেন্দ্রীয় কমিটিতে এ বিষয়ে আলোচনার পরে আজ প্রকাশ কারাট বলেন, “মৃত্যুদণ্ড অমানবিক। এক বার শাস্তি দিয়ে ফেললে তার আর বদল হয় না। ভারতে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি খেয়ালখুশি মতো কার্যকর করা হয়। তাই ফাঁসির বদলে আমরা বিরলতম ও জঘন্যতম অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডের দাবি জানাব।” ইতিমধ্যেই পৃথিবীর ৯৭টি দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানান তিনি। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই ২০০৪ সালের ১৪ অগস্ট কলকাতায় ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে। কিশোরী হেতাল পারেখকে খুন-ধর্ষণের অপরাধে ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়। তখন থেকেই সিপিএমের অন্দরমহলে এ নিয়ে বিতর্কের শুরু। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ধনঞ্জয়ের ফাঁসির পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, এই ধরনের জঘন্য অপরাধীদের দিকে কড়া বার্তা যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক প্রয়াত অনিল বিশ্বাস ছিলেন মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। তিনি মৃত্যুদণ্ডকে ‘মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। অনিলবাবুর মত ছিল, মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করার জন্য রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলির মধ্যে আলোচনা করে ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা উচিত।
দলের শীর্ষনেতাদের অনেকেই অবশ্য সে সময় রাজ্য সম্পাদকের বিপরীত অবস্থান নেন। শুধু দলের অন্দরমহলে নয়, প্রকাশ্যেও তাঁরা ফাঁসির পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন। সর্বোপরি বুদ্ধদেব-জায়া মীরা ভট্টাচার্য একটি নাগরিক সভায় ধনঞ্জয়ের ফাঁসির পক্ষে সওয়াল করে বলেছিলেন, ‘‘আমি এখানে এক জন মা হিসেবে এসেছি।” তাঁর যুক্তি ছিল, ধনঞ্জয় সমাজের অসুখ। সেই অসুখ সরিয়ে ফেলাটাই উচিত। এর সঙ্গে মানবাধিকারের কোনও সম্পর্ক নেই।
ধনঞ্জয়ের ফাঁসির পরেও বিতর্ক থামেনি। ফাঁসুড়ে নাটা মল্লিককে নিয়ে মাতামাতি ঘিরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিমান বসু। নন্দন প্রেক্ষাগৃহে নাটা মল্লিককে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্দেশেই ছবিটি তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এ বছর আফজল গুরুর ফাঁসির পরে ফের এ নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধে। ইয়েচুরির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ার পরে মানবাধিকার কর্মী মনীষা শেঠি কারাটকে চিঠি লেখেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যলায়ের ছাত্রছাত্রীরাও সিপিএমের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পলিটব্যুরোয় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। আজ কারাট বলেন, “ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে অন্যদের আদালতে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হলেও আফজলকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। এর থেকেই বোঝা যায়, খামখেয়ালির সঙ্গে ফাঁসির আদেশ কার্যকর হচ্ছে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.