মত বিশেষজ্ঞদের
সুগন্ধী ধানেই ফিরতে পারে চাষিদের ভাগ্য
রাজ্যে সরু চালের চাহিদা বাজার রয়েছে। মধ্যবিত্তের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে হয়তো তা বাড়ছেও। অথচ রাজ্য জুড়ে উচ্চ ফলনশীল মোটা ধানের চাষই বেশি হয় এখনও। সেই সুযোগে অন্ধ্রপ্রদেশ, হরিয়ানা, পঞ্জাব, ঝাড়খণ্ড থেকে রাজ্যে সরু চাল ঢুকছে। চাষিরা মোটা ধান বিক্রি করতে পারছেন না। রাজ্যের উদ্বৃত্ত ধানও বাইরে বাজার পাচ্ছে না।
অনেক দিন ধরেই ধান উপাদনে দেশে প্রথম দিকে থাকে পশ্চিমবঙ্গ। সরকারি হিসেবে, চলতি বছরে এই রাজ্যে ধান উপাদন হয়েছে প্রায় ১৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। রাজ্যে ধানের চাহিদা ১৩৮ লক্ষ মেট্রিক টনের কাছাকাছি। সরকারের বক্তব্য হল, এই বাড়তি উপাদনের ফলেই চাষিরা ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। কিন্তু গুণমানও যে গুরুত্বপূর্ণ, সেই বাস্তব আর এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না।
রাজ্যে ৭০ শতাংশেরও বেশি জমিতে মোটা ধানের চাষ হয়। তার মধ্যে ‘স্বর্ণ’ জাতের ধানই বেশি। কিন্তু চাষিরাই স্বীকার করছেন, এই ধরনের ধানের চাহিদা দ্রুত কমছে। গত বছর চাহিদা এত কম ছিল যে অনেক জায়গাতেই চাষিরা বিপুল খরচে ধান চাষ করে নামমাত্র দরে অভাবী বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
সম্প্রতি ধান উপাদনে চাষির লাভ নিশ্চিত করার দিশা খুঁজতে একটি আলোচনাসভা হয় কলকাতায় বসু ইনস্টিটিউটে। রাজ্য সরকারের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘ধানের উপাদন নিশ্চয়ই বাড়াতে হবে। কিন্তু দেখতে হবে তাতে চাষি লাভবান হচ্ছেন কি না।’’
বর্তমানে বর্ধমান ও দুই মেদিনীপুরের কিছু অংশ ছাড়া সরু-লম্বা দানার ধানের চাষ নেই বললেই চলে। এর বাইরে উত্তর দিনাজপুর ও জলপাইগুড়িতে তুলাইপাঞ্জি এবং কালিজিরা জাতের সরু সুগন্ধী ধান হয়। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, সরু ও লম্বা দানার সুগন্ধী ধান চাষ করে চাষি অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন। মোটা ধান যেখানে কুইন্ট্যাল প্রতি ১২০০ টাকাতেও বিক্রি করা যাচ্ছে না, এ বছরেই সরু সুগন্ধী ধান ৩৩০০ টাকা পর্যন্ত দর পেয়েছে।
স্বর্ণ জাতের ধান চাষে খরচও বেশি। জমি তৈরি, সার, মজুরি ও কীটনাশক মিলিয়ে একরে প্রায় ১৬-১৭ হাজার টাকা খরচ পড়ে যায়। সেখানে সরু-লম্বা দানার ধান চাষে একরে ১৪-১৫ হাজার টাকা লাগে। বর্ধমানের চাষি দেবপ্রসাদ রায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘মোটা ধান চাষে সার আর কীটনাশকের ব্যবহার বেশি। কিন্তু বাদশাভোগ, সুগন্ধা, গোবিন্দভোগ, সীতাভোগ, বাসমতী, কামিনীভোগ, তুলাইপাঞ্জি, রাঁধুনিপাগলের মতো সরু, লম্বা ও সুগন্ধী ধান চাষ হয় জৈব পদ্ধতিতে। সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয় খুব কম। মজুরের খরচও কম। তবে সরু ধান একটু ‘সুখী’ প্রকৃতির। যত্ন লাগে।’’ দেবব্রতবাবু নিজের ও ভাগের মিলিয়ে একশো বিঘের উপরে ধান চাষ করেন। সরু ধান বিক্রির জন্য তাঁকে বসে থাকতে হয় না। চালকলের লোকেরা ধান কিনে নিয়ে যায়।
তা হলে সরু ও লম্বা জাতের ধানের চাষ রাজ্যে বাড়ছে না কেন?
বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা কৃষিবিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারী স্বীকার করেন, ‘‘চাষিরা বিকল্প চাইছেন, কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। চাষিও এখন জানেন যে, লম্বা দানার চালের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। বিদেশেও যত চাল রফতানি হয় তার ৮০ শতাংশই লম্বা দানার চাল।’’ তাঁর দাবি, খোলাপচা রোগ ও বাদামি শোষক পোকার উপদ্রবে স্বর্ণ ধান চাষের ঝোঁক এখন কমছে। বর্তমানে ‘স্বর্ণ সাব-ওয়ান’ জাতের ধান চাষ হচ্ছে। অথচ হুগলির চুঁচুড়ায় রাজ্য সরকারের ধান গবেষণা কেন্দ্র ইতিমধ্যেই অন্তত চারটি সরু, লম্বা ও সুগন্ধী জাতের উচ্চমানের বীজ তৈরি করেছে। তা জাতীয় স্তরের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছে।
ওই সব বীজ তৈরি হয়েছে যে কৃষিবিজ্ঞানীর নেতৃত্বে, সেই বিজন অধিকারী বলেন, ‘‘চাষিরা এখন আমাদের কেন্দ্র থেকে বীজ নিয়ে যাচ্ছেন। বহু জায়গায় চাষও হচ্ছে।’’ তিনি চান, নতুন জাতের ওই ধান সব জেলাতেই জনপ্রিয় হয়ে উঠুক। তাতে চাষির আরও লাভ হবে। তাঁর কথায়, ‘‘১২৫/১৩০ দিনে এই সব ধানের ফলন হয়। ফলে চাষিরা ধান তুলে অনায়াসে আলু বা অন্য সব্জি চাষও করতে পারবেন।’’ চুঁচুড়া ধান গবেষণা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম কৃষি আধিকারিক কমলকুমার ভদ্রের আশা, নতুন জাতের বীজগুলি শীঘ্রই সরকারি ছাড়পত্র পেয়ে যাবে। তাঁর আশা, ‘‘এই সব নতুন ধান জনপ্রিয় করে তুলতে পারলেই ভিন্ রাজ্য থেকে সরু ও লম্বা দানার চাল ঢোকাও বন্ধ হবে। রাজ্যের চাষিরা অনেকটাই নিশ্চিন্ত হবেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.