বইয়ের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হতে বসেছে দুঃস্থ মেধাবী ছাত্রছাত্রীর। কেউ বা পরীক্ষার ফি জমা দিতে পারছে না। কেউ স্কুল পাশ করেও কলেজের হস্টেল খরচ সামলাতে পারছে না। ছাত্রছাত্রীদের এই সব সমস্যার কথা কানে পৌঁছলেই যিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন, স্কুল থেকে বিদায়ের দিন সেই দিদিমণির হাতটাই আরও শক্ত করে ধরতে চেয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা।
বাঁকুড়ার সোনামুখীর পাথরমোড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৩৭ বছরের কর্মজীবন শেষ করলেন বাংলার দিদিমণি স্বাগতা সরকার। মঙ্গলবার স্কুলে তাঁর বিদায় সংবর্ধনার দিনেও ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত সমস্যার কথা মাথায় রেখে ‘মুশকিল আসান’ স্বাগতাদেবী ১ লক্ষ টাকা ডাকঘরের মাসিক সুদের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে দিয়ে গেলেন। এলাকার একটি ক্লাবকে বিনা ব্যয়ে চক্ষু চিকিৎসার জন্য দিলেন ২৫ হাজার টাকা। |
সভার অদূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছিল স্কুল থেকে সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া কুশল সাউ। তার কথায়, “আমি দিন মজুরের ছেলে। স্বাগতা দিদিমণি এগিয়ে না এলে আর্থিক কারণে পড়াশোনা থেমে যেত পঞ্চম শ্রেণিতেই। সমস্যায় পড়লে এ বার কার কাছে যাব?”
শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই নয়, স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতেও তিনিই ছিলেন বড় ভরসা। ভেজা কথাগুলো বলছিল দশম শ্রেণির চতুর্থী মুখোপাধ্যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পিন্টু ঘোষ বলেন, “সকলের জন্য নিবেদিত প্রাণ এমন এক শিক্ষিকা পাওয়া সত্যিই গর্বের। বছর তিনেক ধরে ক্যানসারে ভুগলেও লম্বা ছুটি নিয়ে বাড়িতে থাকেননি। পড়ুয়াদের টানে অসুস্থতা নিয়েও স্কুলে এসেছেন।” ওই স্কুলের সহ-শিক্ষক অঞ্জন সাহা জানান, অন্তত ৫০ জন ছাত্রছাত্রীর কথা তাঁরা জানেন, যারা স্বাগতাদেবীর সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজ প্রতিষ্ঠিত।”
অবিবাহিত স্বাগতাদেবী থাকেন বিষ্ণুপুরে ভাই-বোনের সংসারে। বিদায় নেওয়ার সময় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মতো ধরে আসছিল তাঁরও গলা। বললেন, “ছাত্রছাত্রীরাও আমার সংসারের অঙ্গ। পড়ানোর সঙ্গে ওদের ভালমন্দের দিকেও নজর রাখার চেষ্টা করেছি। শিক্ষক হিসেবে এটা সামাজিক দায়িত্ব বলেই মনে করি। বয়স এবং অসুস্থতা আমাকে সামান্য কাবু করেছে ঠিকই, তবু আমি ওদের টানেই মাঝেমাঝে স্কুলে যাব। সে কথা জানিয়েও এসেছি।” |