হাওড়া স্টেশন ছদ্মবেশে চলত কুকীর্তি, পাঁচ দিনে ধৃত ৪৫
কেউ গালকাটা, কেউ বোবা, কেউ খোঁড়া। কেউ কাঙালির বেশে শুয়ে থাকে প্ল্যাটফর্মে। কেউ ভিখিরির ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায় স্টেশন চত্বরে। কেউ আবার ট্যাক্সির দালাল। রেল পুলিশের খাতায় এরা প্রত্যেকেই দাগি অপরাধী। বছরের পর বছর হাওড়া স্টেশন চত্বর জুড়ে রমরমিয়ে ছিনতাই, পকেটমারি, মোবাইল চুরি ও মাদক দ্রব্যের ব্যবসা করলেও রেল পুলিশ টিকি ছুঁতে পারেনি বলে অভিযোগ। অথচ মাত্র কিছু দিনের বিশেষ অভিযানে নেমে হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে এমন ৪৫ জন দাগি অপরাধীকে গ্রেফতার করল হাওড়া সিটি পুলিশ।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, চোখের সামনে ঘোরাফেরা করতে দেখলেও রেল পুলিশ কেন এই সব অপরাধীদের ধরতে পারেনি? রেল পুলিশের যুক্তি, এই ধরনের অপরাধীদের আগেও ধরা হত। চুরি, ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার করার কয়েক মাস পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা ফের স্টেশনে ফিরে আসত। হাওড়া সিটি পুলিশ অবশ্য সে পথে হাঁটেনি। সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “ছিনতাই, পকেটমারি ছাড়াও এই দাগি অপরাধীরা বিভিন্ন দুষ্কৃতীমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। সে জন্য ছিনতাই, পকেটমারির মামলা ছাড়াও এদের বিরুদ্ধে তোলাবাজি ও পরিকল্পনামাফিক ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছে।”
স্টেশন চত্বরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার কথা রেল পুলিশের। সে ক্ষেত্রে হাওড়া সিটি পুলিশের এই অভিযান কেন? হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, হাওড়া স্টেশন চত্বরে ট্যাক্সি দালালদের হাতে যাত্রী-হেনস্থা রুখতে গত বছরের ৮ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে স্টেশন চত্বরের ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্ব রেল পুলিশের হাত থেকে হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে প্রি-পেড ট্যাক্সি বুথ চালাবার দায়িত্বও পায় হাওড়া সিটি পুলিশ। তৈরি হয় হাওড়া স্টেশন ট্রাফিক গার্ড।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার সময়ে নিত্যদিন যাত্রীদের কাছ থেকে ছিনতাই, পকেটমারি-সহ নানা অভিযোগ আসছিল। গত ৬ এপ্রিল সিটি পুলিশের ট্রাফিক বুথের সামনে থেকে টাকা-গয়না সহ এক মহিলার ব্যাগ চুরি যায়। তার পরেই পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডের নির্দেশে পাঁচ জনের তদন্তকারী দল তৈরি হয়।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, স্টেশনে অপরাধীদের মূল ঘাঁটি নতুন কমপ্লেক্সের ২৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম। সেখানে ‘গুঙ্গা’ নামে এক পুরনো দুষ্কৃতীর নেতৃত্বে দল বেঁধে কাজ করে একটা বড় চক্র। পুলিশ প্রথমে ওত পেতে গুঙ্গাকে গ্রেফতার করে। আটক করা হয় তার স্ত্রীকেও। গুঙ্গাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোলাবাড়ি থানার তেন্ডেলবাগান ও হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে ধরা পড়ে পারভেজ, সুধীরের মতো কুখ্যাত দুষ্কৃতী ও তাদের সঙ্গীরা। যারা গত ১০-১৫ বছর ধরে স্টেশন চত্বরে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল।
পুলিশ জানায়, এরা কেউ কাঙালির ছদ্মবেশে মাদক নিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপাদমস্তক কাপড় চাপা দিয়ে শুয়ে থাকত। খদ্দের এসে ‘টোকা’ দিলেই চাদরের নীচ থেকে বেরিয়ে আসত হেরোইন, গাঁজা, চোলাই। কেউ ট্রেনে যাত্রী বা ভিখিরি সেজে উঠে পকেটমারি, চুরি, ছিনতাই করত। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জানিয়েছে গঙ্গার পাড়ে যে সব মাছ-ভাতের হোটেল রয়েছে সেই সব হোটেলের কিছু কর্মীই চোরাই মালের ‘রিসিভার’ হিসেবে ধরা পড়ে। ওই কর্মীরাই চোরাই মাল কিনে বিক্রি করত খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজে। এমন ১২ জন হোটেল-কর্মীও গ্রেফতার হয়েছে।
হাওড়া স্টেশন ট্রাফিক গার্ডের আইসি ইন্দ্রনীল সান্যাল বলেন, “গত পাঁচ দিনে স্টেশন চত্বর ও গোলাবাড়ি এলাকা থেকে মোট ৪৫ জনকে ধরা হয়েছে। হাওড়ার সাবওয়ে থেকে ধরা পড়া এক দুষ্কৃতীর থেকে ৪টি মোবাইল পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে দু’টি মোবাইল আসল মালিকের হাতে তুলেও দেওয়া হয়েছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.