মহেশতলা
তৃণমূলের বাঁশ ফিরিয়ে দিল ঘরপোড়া সেই বস্তি
তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাঠানো বাঁশ ফিরিয়ে দিলেন মহেশতলার ১৬ বিঘা বস্তির বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, বস্তি পুনর্গঠনে সরকারি সাহায্য প্রশাসনিক কর্তাদের দিতে হবে। বাড়ি তৈরির বিষয়টি নথিভুক্ত করতে হবে সরকারি খাতাতেও। সোমবার দলের তরফে বস্তিবাসীদের বাড়ি তৈরির জন্য একশোর মতো বাঁশ পাঠিয়েছিলেন কলকাতা পুরসভার ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীল। কিন্তু সেই সাহায্য নেননি বস্তিবাসীরা। তবে রঞ্জিতবাবু অবশ্য এ দিন দাবি করেন, “আমাদের কিছু ত্রাণ বস্তিবাসীরা নিয়েছেন। বাকিটা কবে নেবেন, তা তাঁরা পরে জানাবেন।” যদিও এ দিন অনেক বাঁশই রেললাইনের ধারে ছড়িয়ে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
রবিবারই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ঘটনাস্থলে এসে বস্তিবাসীদের নানা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ওই সময়েই বস্তিবাসীরা তাঁকে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রিপল পাঠানো হলেও বাঁশের অভাবে তা তাঁরা টাঙাতে পারছেন না। তাই খোলা আকাশের নীচে শিশু-মহিলাদের নিয়ে রাত কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। মন্ত্রী বিষয়টি দেখার প্রতিশ্রুতি দেন। এর পরেই এ দিন দুপুরে বাঁশ আসতে দেখে উল্লসিত হন ঘরপোড়া মানুষেরা। কিন্তু পরে তাঁরা জানতে পারেন, বাঁশ পাঠিয়েছেন তৃণমূল দলের পক্ষ থেকে কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর রঞ্জিত শীল। এলাকার বাসিন্দা ও ১৬ বিঘা উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক ইদ্রিস আলি মোল্লা বলেন, “এ দিন থেকেই সরকার বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করে দেবে বলে পুরমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে জানলাম, বাঁশ সরকার পাঠায়নি, বাড়ি তৈরিতে আমরা কোনও দলের সাহায্য নেব না।” পুরমন্ত্রী এ দিন দাবি করেন, তাঁর নির্দেশেই রঞ্জিতবাবু বাঁশ পাঠিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “কাজ যাতে তাড়াতাড়ি হয়, সে কারণে রঞ্জিতকে বাঁশ পাঠাতে বলেছিলাম।”
অন্ন তোমার আপনি যেথায় আসে...
গেরস্থালি এখন ছাইয়ের স্তূপ। দুপুরের রোদে লাইন দিয়ে খাবারের
অপেক্ষায় মহেশতলার বস্তিবাসীরা। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
শুধু ঘর তৈরি নয়, ক্ষোভ রয়েছে অন্যান্য ত্রাণ নিয়েও। স্থানীয় বাসিন্দা রাকেয়া বিবি এ দিন বলেন, “মন্ত্রী শুধুই আশ্বাস দিয়েছেন। বাড়ি তৈরি ছাড়াও কাপড়-জামা পাঠানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ দিন রাত পর্যন্ত কিছুই মেলেনি।” বসানো হয়নি পানীয় জলের নলকূপ ও পুলিশ ক্যাম্পও। ১৬ বিঘা বস্তি কমিটির সম্পাদক সউদ আলির অভিযোগ, “কিছু শুকনো খাবার, চাল-ডাল ও আলুসিদ্ধ পেয়েছি। এ ছাড়া আর কোনও সাহায্য মেলেনি।” ঘটনার পর রাজ্যের দুই মন্ত্রী (জাভেদ খান, ফিরহাদ হাকিম) এসেছিলেন। কিন্তু তাঁরা কথা রাখেননি। সরকারের উপর আর ভরসা করতে পারছি না।” একই মত স্বপন মণ্ডল, নাসিম আলি মোল্লাদেরও। তাঁরা জানিয়েছেন, রবিবার কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সি ঘুরে যাওয়ার পর এ দিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বস্তিবাসীদের চাল, ডাল ও শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে।
তবে ওই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে এ দিনও রাজ্য-রাজনীতি যথেষ্ট উত্তপ্ত ছিল। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন পিডিএস নেতা সমীর পূততুণ্ড ও অনুরাধা দেব। বিধানসভাতেও মহেশতলার বস্তি পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি জানায় সিপিএম। এবং কেন বিষয়টিকে ‘ছোট্ট ঘটনা’ বলা হচ্ছে, বিধানসভায় সে প্রশ্নও তোলা হয়। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মহেশতলা সম্পর্কে ফিরহাদ হাকিমের লিখিত বিবৃতিও দাবি করেন।
পরে বিধানসভায় রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি রবিবার মহেশতলায় গিয়েছিলেন। যাঁরা ওই বস্তিতে থাকতেন তাঁরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত গরিব। বস্তিটি ১৬ বিঘে জমির উপরে। যার মধ্যে বেশিরভাগ জমিই কেএমডিএ-এর। বাকি কিছুটা রেলের। ফিরহাদ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” বস্তির মধ্যে যাঁরা যেখানে থাকতেন, তাঁদের সেখানেই টিনের বাড়ি করে দেবে সরকার। এর পাশাপাশি পাকা শৌচাগার এবং পানীয় জলেরও ব্যবস্থা করা হবে বলে মন্ত্রী বিধানসভায় জানান। কী করে এই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে তা নিয়ে এ দিন বিকেলে আলিপুরে জেলাশাসকের দফতরে জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন পুরমন্ত্রী।
এ দিন ঘটনাস্থলে যায় রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির দুই সদস্যের একটি দল। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.